অনগ্রসর শ্রেণির মহিলাদের আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে শুরু করা হয়েছিল একটি মুরগি খামার প্রকল্প। কিন্তু উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাবে তা মাঝ পথেই মুখ থুবড়ে পড়েছে। ফলে সরকারি অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি স্বনির্ভর হওয়ার আশায় বালি পড়েছে ব্লকের মহিলাদের।
সালানপুর ব্লক সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালের জুনে এই প্রকল্পটির সরকারি অনুমোদন আসে। বছর খানেকের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় প্রকল্প রূপায়ণ প্রক্রিয়া। ব্লক প্রশাসনের তরফে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আল্লাডি গ্রাম পঞ্চায়েতের মাজলাডিহি গ্রাম এবং দেন্দুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাথানবাড়ি ও বাঁশকেটিয়া গ্রামে এই প্রকল্পটি বানানো হবে। একটি বেসরকারি খামার সংস্থার সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তিতে ব্লক প্রশাসন কাজ শুরু করে। ঠিক হয়, এই দুই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বসবাসকারী মহিলাদের নিয়ে একাধিক স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী তৈরি করে তাদের হাতে খামারগুলি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হবে। চুক্তিতে ঠিক হয়, স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীগুলিকে মুরগির ছানা দেবে ওই বেসরকারি খামার সংস্থা। ৪২ দিন ধরে মুরগির ছানা পালন করে বড় করে তুলবে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। সেই মুরগি ফের নিয়ে যাবে ওই খামার সংস্থা। মুরগির ছানা পালন করার জন্য গোষ্ঠীগুলিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেবে ওই খামার সংস্থা। অন্য দিকে, খামার বানিয়ে স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীগুলির হাতে প্রাথমিকভাবে কিছু অর্থ দেবে ব্লক প্রশাসন। |
তৈরি হয়েও পড়ে রয়েছে ঘর। ছবি: শৈলেন সরকার। |
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রথমে আল্লাডি গ্রাম পঞ্চায়েতের মাজলাডিহি গ্রামে খামার তৈরির জন্য আটটি বিশাল শেড বানায় ব্লক প্রশাসন। আটটি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী বানিয়ে প্রত্যেককে একটি করে খামার চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতি গোষ্ঠীকে ব্লক প্রশাসন প্রাথমিকভাবে কাজ চালানোর জন্য বারো হাজার টাকা করে দেয়। কাজও শুরু হয়ে যায়। এর পরে ব্লক প্রশাসন দেন্দুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাথানবাড়ি ও বাঁশকেটিয়ায় খামার তৈরির জন্য আরও দশটি শেড বানায়। এই পুরো প্রকল্পটির জন্য খরচ হয় প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। কিন্তু এরপরই শুরু হয় সমস্যা। তিন মাস চলার পরে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় মাজলাডিহির খামারগুলি। এই অবস্থায় বাথানবাড়ি ও বাঁশকেটিয়ার খামারগুলি চালুই করা হল না। আর অন্য দিকে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময়ে মাজলাডিহি খামারগুলির স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা পড়লেন অথৈ জলে। কার্যত শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে গেল তাদের আর্থিক স্বনির্ভরতার আশা। ওই খামারের কাজ হারানো কর্মী বুদি রায়, সুমিত্রা টুডু, জাবেদা বিবি’রা বলেন, “ভেবেছিলাম কাজ করে আমাদের দিন ফিরবে। কিন্তু তা আর হল না।” সুদিনের আশায় আজও ব্লক প্রশাসনের দিকে চেয়ে আছেন তাঁরা। তবে ফের খামার চালু করার আশু সম্ভাবনার আশা দিতে পারেননি প্রশাসনিক কর্তারা। ইতিমধ্যেই পরিকাঠামো নষ্ট হয়ে গিয়েছে খামারগুলি। টিনের চাল, লোহার রড খুলে নিচ্ছে দুষ্কৃতীরা।
কিন্তু সরকারি অর্থ খরচ করে তৈরি করা এই প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ল কেন? বিডিও প্রশান্ত মাইতি বলেন, “প্রকল্পটি তৈরির সময়ে আমি ছিলাম না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। যত দূর জানি, ওই বেসরকারি খামার সংস্থাটি মাঝপথে গুটিয়ে যাওয়ায় এই হাল হয়েছে।” তিনি জানান, এটি চালুর চেষ্টা করা হবে আবার। সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি শ্যামল মজুমদার বলেন, “এটি মূলত জেলা পরিষদের উদ্যোগ। ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবে এটা মাঝপথে ভেস্তে গিয়েছে।” তবে ফের প্রকল্প চালুর জন্য তাঁরা জেলা পরিষদকে চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে এলাকার সিপিএম নেতা নুরুল ইসলামের দাবি, পরিকল্পনার অভাবেই এমনটা হয়েছে। |