|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিয়ো না |
আমার অভিনয় আমার ছবির সম্পদ
|
তাই শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় অন্য পরিচালকের ছবিতে অভিনয় করতে উৎসাহী নন।
‘অলীক সুখ’এর কাজের ফাঁকে তাঁর মুখোমুখি অরিজিৎ চক্রবর্তী |
|
টলিউডে তো দুই মুখোপাধ্যায় পরিচালক রাজত্ব করছেন। তা সৃজিতকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে হয় না?
আমার তো তা মনে হয় না। আমার আর সৃজিতের ছবির ধারাই তো আলাদা। দু’জনের মধ্যে তুলনাটাই চলতে পারে না। আর দু’জনেরই তো লড়াই আসলে বাঙালি দর্শককে হলমুখী করতে।
কিন্তু আপনি আর নন্দিতা রায়, দু’জনে মিলে তো পরিচালনা করেন। কখনও মনে হয়নি একা পরিচালনা করব?
না, কখনও না। নন্দিতা রায় আর আমি একটা টিম। নন্দিতাদি চুপচাপ কাজ করে যায়। অনেকেই হয়তো ওর কথা জানেন না। কিন্তু ওর মতো লেখিকা ও এডিটর খুব কম আছে। ওকে টিমে পেয়ে সত্যিই ভাগ্যবান। নন্দিতাদি ছাড়া পরিচালক হিসাবে আমি অসম্পূর্ণ।
ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের সঙ্গেও তো আপনার দারুণ জুটি...
হ্যাঁ, আমরা খুব ভাল বন্ধু। ওর সঙ্গে আমার আলাপ টিভির জন্য রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্যের একটা সিরিজ করার সুবাদে। তখন থেকেই ঋতুপর্ণার সঙ্গে বন্ধুত্ব। আসলে আমাদের মতো এত কাজ কিন্তু টিভিতে আর কেউ করেনি। সময় খারাপ হোক বা ভাল, সব সময়ই ওকে পেয়েছি। জানি যে কোনও সময় ফোন করলেই ওর সাহায্য পাব। এতটাই বড় মনের ও।
তা বন্ধুত্বের মাশুলও তো দিতে হয়?
কেন বলুন তো?
অনেকে বলেন, আপনার আর ঋতুপর্ণার বন্ধুত্বের জন্য অন্য নায়িকারা ভাবেন তাঁদের স্ক্রিন প্রেজেন্সে কাঁচি পড়বে...
আমার তো তা মনে হয় না। হ্যাঁ, কাস্টিং-এর সময় অনেকের সঙ্গেই কথা বলি। যাঁরা রাজি হন না, তাঁরা ডেটের অভাবের কথা বলেন। তবে আমার আর ঋতুপর্ণার বন্ধুত্বের ফলে অন্যদের পর্দার উপস্থিতিতে কাঁচি পড়বে, এটাই যদি আসল অভিযোগ হয়, সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ঋতুপর্ণার মতো লেজেন্ডের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করা তো গর্বের ব্যাপার। মুম্বইতে মাধুরী-ঐশ্বর্যা ‘দেবদাস’ করতে পারেন, রানি-করিনা ‘তলাশ’ করতে পারেন, এখানে হবে না কেন?
এত ভয় কীসের?
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে কখনও নিজের সিনেমায় অভিনেতা হিসাবে চান না?
অবশ্যই চাই। ওঁর সঙ্গে কাজ করাটা তো সৌভাগ্যের ব্যাপার। কথাও হয়েছে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে তাড়াতাড়িই কাজ করব ওঁর সঙ্গে। |
|
‘অলীক সুখ’-এর পোস্ট-প্রোডাকশন আর উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ দেখায় এখন ব্যস্ত শিবপ্রসাদ |
আপনি তো নিজের ছবিতে অভিনয়ও করেন। তা পরিচালনা না অভিনয়, আপনার প্রায়োরিটি কোনটা?
পরিচালনা। ওটাই প্রায়োরিটি। তবে যদি মনে হয় কোনও চরিত্র আমি করলে ভাল হয়, তবে আমার সিনেমায় অবশ্যই সেটা করব। অন্যের সিনেমায় নয়। আমি মনে করি, আমার অভিনয় আমার ছবিতে একটা সম্পদ। সেই সুবিধা অন্য পরিচালক পাবে কেন? অভিনয় করতে চাইলে তো করতেই পারতাম। প্রতি বছর তো কমপক্ষে চারটে ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি। আসলে বছরে দু’টো সিনেমা পরিচালনা করে আর অভিনয় করা সম্ভবও না।
তা পরিচালক হিসাবে নিজেকে ইমপ্রুভ করতে কী করেন?
অন্য পরিচালকদের কাজ দেখি। সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেশার চেষ্টা করি, যাতে পা-টা সব সময় মাটিতে থাকে। আমার মতে চিত্রনাট্যই একটা ছবির সব। তাই প্রত্যেকটা ছবির চিত্রনাট্যের জন্য অনেক সময় দিই। প্রত্যেক সিনেমার জন্য জনা পঞ্চাশের ইন্টারভিউ নিই। এ ব্যাপারে সমরেশ বসু আমার আইডল। চেষ্টা করি ওঁর মতো ইন্টারভিউ করে লিখতে।
এই ধৈর্যটা কোথা থেকে শিখলেন?
ইন্ডাস্ট্রি। ‘ইচ্ছে’ ক্যানবন্দি হয়ে পড়েছিল তিন বছর। কত লোককে ছবি দেখাতাম। সবাই চোখের জল ফেলত। কেউ গল্পটা শুনেই রাজি হয়ে যেত। কিন্তু ছবি প্রযোজনা করার শর্ত হিসাবে প্রযোজকরা যে সব পরিবর্তন করতে বলতেন, সেটা মানতে পারতাম না। অন্যের টার্মে কোনও দিন বাঁচতে চাইনি। অনেক প্রযোজক বলেছিলেন, ছবির শেষটা পালটাতে হবে আর মায়ের চরিত্রে নামকরা কাউকে নিতে হবে। ‘ইমপা’ নির্বাচনের দিন শ্রীকান্ত মোহতা বলেছিলেন, “আই রিগ্রেট নট ডুইং ‘ইচ্ছে।’”
আপনার ছবিতে লেজেন্ডরা যেমন অভিনয় করেছেন, তেমনই নাইজেল, সমদর্শীর মতো নতুনদের প্ল্যাটফর্মও তো আপনার ছবি। নিজেকে কিং মেকার মনে হয় না?
প্রশ্নটা শুনে ভাল লাগছে। আসলে নতুন-পুরোনোটা কোনও ফ্যাক্টর নয়। আসল কথা হল সে অভিনয়টা করতে পারে কি না। চরিত্রের প্রয়োজনেই তাই সমদর্শী আর নাইজেল আকারা অভিনয় করেছে। আর লেজেন্ডদের কথা যদি বলেন, তবে বলব আমি ভাগ্যবান। ঋতুপর্ণার কথা তো বলেইছি। সোহিনী সেনগুপ্ত। ভাবুন একবার। ওর মতো শক্তিশালী অভিনেত্রী। আমার তো মনে হয়, ওর হলিউডে অভিনয় করা উচিত। টাবু যদি করে, ও করবে না কেন? কিংবা ‘অলীক সুখ’-এ দেবশঙ্করদা (দেবশঙ্কর হালদার)। ইরফান খান বা আদিল হুসেন যে প্ল্যাটফর্ম পান, দেবশঙ্করদা সেটা পেল না। ভাবা যায়!
কিন্তু নাইজেলকেই তো রাষ্ট্রপতি ভবনে ‘মুক্তধারা’র প্রদর্শনে দেখা গেল না...
ওকে জানানো হয়েছিল। নতুন নাটকের কাজে ব্যস্ত থাকায় ও যেতে পারেনি। তবে দিল্লি থেকে সব কিছুর লাইভ কমেন্ট্রিই ও পেয়েছিল নন্দিতাদির কাছ থেকে। |
|
‘অলীক সুখ’ ছবির দৃশ্যে সোহিনী ও ঋতুপর্ণা |
তা আপনার জীবনের সেরা মুহূর্ত কি রাষ্ট্রপতি ভবনে ‘মুক্তধারা’র প্রদর্শন?
(একটু ভেবে) না, আমি বলব ‘ইচ্ছে’ মুক্তি পাওয়ার মুহূর্ত। রাষ্ট্রপতি ভবনে ‘মুক্তধারা’র প্রদর্শন নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য, তবে প্রথম সন্তান জন্মের সঙ্গে তার কোনও তুলনাই চলে না। তা-ও আবার যার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে টানা তিন বছর।
অনেকে বলেন আপনি নাকি পাবলিসিটি প্রিয়?
একদম না। আমি বিশ্বাস করি আমার ছবিই আমার পাবলিসিটি।
তা বিয়ের পর সেই পাবলিসিটিতে ভাটা পড়বে না? ফেসবুক ফ্যান পেজে এই যে দু’মাসে সাড়ে সাতশো ‘লাইক’। সেটা তো আর হবে না?
আমার তো মনে হয় না মহিলা ফ্যানে কোনও দিন ভাটা পড়বে।
‘অলীক সুখ’ তো মুক্তি পেতে চলল। এর পরের প্রোজেক্ট কী?
প্রযোজক অতনু রায় চৌধুরীর সঙ্গে বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি হওয়াকে কেন্দ্র করে একটা ছবি করছি।
সেটা কি ভবিষ্যতের জন্য ক্র্যাশ কোর্স?
আবার! |
|
|
|
|
|