এক দিকে সুন্নি নেতা মহম্মদ তাহির-উল-কাদরির নেতৃত্বে বিক্ষোভ। অন্য দিকে দেশের প্রধানমন্ত্রী রাজা পারভেজ আশরফকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ। দু’দিক থেকে আজ বিপাকে পড়েছে পাকিস্তানের নির্বাচিত সরকার। ফের দেশে সামরিক শাসনের ছায়াও দেখতে শুরু করেছেন অনেকে।
জেনারেল পারভেজ মুশারফের আমলে পাক আইনসভার সদস্য ছিলেন মহম্মদ তাহির-উল কাদরি। মাঝে কানাডায় গেলেও ২০১২ সালে পাকিস্তানে ফিরে আসেন তিনি। তেহরিক-ই-মিনহাজুল কোরান দলের প্রতিষ্ঠাতা কাদরির দাবি, পাকিস্তানে প্রকৃত গণতন্ত্র নেই। দুর্নীতিপরায়ণ নেতাদের দৌলতে পাক গণতন্ত্র কিছু লোকের কুক্ষিগত হয়ে পড়েছে। শাসনব্যবস্থায় সংস্কার চেয়ে ‘লং মার্চের’ ডাক দিয়েছিলেন তিনি। আজ ইসলামাবাদে শেষ হয়েছে সেই যাত্রা। বুলেট-প্রুফ কাচের আড়াল থেকে কাদরি জানিয়েছেন, দেশে ‘গণবিপ্লব’ শুরু হয়েছে।
এখনই দেশের আইনসভাগুলি ভেঙে দিয়ে ইস্তফা দিতে আশরফ সরকারকে আজ সকাল ১১টা পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন কাদরি। বলা বাহুল্য, সে দাবি মানেনি সরকার। কাদরি জানিয়েছেন, যত ক্ষণ না সরকার দাবি মানবে তত ক্ষণ ইসলামাবাদের রাস্তা ছেড়ে নড়বেন না তাঁর হাজার হাজার সমর্থক। কিছুটা হুমকির সুরেই তিনি বলেছেন, “আমার ইঙ্গিত পেলেই হাজার হাজার মানুষ গিয়ে পার্লামেন্ট দখল করতে পারে।” তবে সংবিধান-বহির্ভূত পথে তাঁর বিশ্বাস নেই বলেই দাবি কাদরির।তেহরিক-ই-মিনহাজুল কোরানের যাত্রা ও জনসভায় মানুষের ঢলের কথা ভেবেই আজ রাজধানীতে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল সরকার। বুলেট-প্রুফ কাচ ঢাকা কাদরির গাড়িকে ঘিরে ছিল পুলিশ ও আধা সামরিক রেঞ্জার্স বাহিনী। পরে অবশ্য তাদের সরিয়ে নেতার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেন কাদরির সমর্থকরাই। মুখে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বললেও আজ মিনহাজুল সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গিয়েছে। অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রেহমান মালিকের দাবি, কাদরির সশস্ত্র সমর্থকরাই পুলিশের উপরে প্রথমে হামলা চালায়। সংঘর্ষে কয়েক জন পুলিশ আহত হয়েছেন।
আশরফ সরকারের ইস্তফার পরে সেনাবাহিনী ও বিচারবিভাগের সহায়তায় একটি তদারকি সরকার গঠন করার কথা বলেছেন কাদরি। আর এখানেই সেনা-শাসনের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। আশরফ সরকার প্রকাশ্যেই অভিযোগ করেছে, সেনাবাহিনী ও বিচারবিভাগ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।
মে মাসে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন। পাক রাজনীতিকদের একটি অংশের বক্তব্য, একদা মুশারফ-ঘনিষ্ঠ কাদরিকে ব্যবহার করে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চায় সেনাবাহিনী। তার পরে দেশে অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে ক্ষমতা দখল করতে বিশেষ অসুবিধা হবে না তাদের। পরে গণতন্ত্রের আড়ালে সেনা শাসন বজায় রাখতে পারেন সেনাপ্রধান পারভেজ আশফাক কিয়ানি। মুশারফের আমলেই তার নজির রয়েছে। |
আশরফ সরকারের কাছে গোদের উপরে বিষফোড়া হয়ে দেখা দিয়েছে পাক সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ। বিদ্যুৎমন্ত্রী থাকার সময়ে বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে ঘুষ খাওয়ার অভিযোগ ছিল আশরফের বিরুদ্ধে। আজ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আগে শীর্ষ আদালতের কোপে পড়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছিল ইউসুফ রাজা গিলানিকে। ফলে, আশরফেরও বিকল্প খোঁজার কথা ভাবতে হতে পারে শাসক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টিকে। এই নির্দেশের পরে পাকিস্তান পিপলস পার্টির শক্ত ঘাঁটি সিন্ধুপ্রদেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভ দেখান দলীয় সমর্থকরা। করাচিতে রাস্তায় গাড়িতে ইট মারা হয়, পোড়ানো হয় টায়ার। শূন্যে গুলিও ছোড়েন কিছু বিক্ষোভকারী। ফলে শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় দোকানপাট- অফিস বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি সামলাতে আসরে নেমেছে আধাসেনা। এই পরিস্থিতিতে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছেন অনেকেই। তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের নেতা ইমরান খানের দাবি, এখনই তদারকি সরকার গড়ে মে মাসে ভোট করা উচিত। তা না হলে আন্দোলনে নামতে পারে তেহরিক-ই-ইনসাফ। ফলে, অদূর ভবিষ্যতে আরও অস্থিরতার পথে হাঁটতে পারে পাকিস্তান। |