মনমোহনের তোপ, স্থগিত ভিসা-নীতিও
পাক নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা জারি রাখার নীতি নিয়ে ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। আজ নিয়ন্ত্রণরেখায় লাগাতার পাক হামলার প্রেক্ষিতে সেই তিনিই মনমোহন সিংহ নজিরবিহীন ভাবে আক্রমণাত্মক। প্রধানমন্ত্রীর সাফ কথা, “বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আর স্বাভাবিক থাকতে পারে না।” শুধু তা-ই নয়, দু’দেশের মধ্যে নয়া ভিসা নীতি স্থগিত করে দিয়েছে দিল্লি। ৯ জন পাক হকি খেলোয়াড়কেও দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারতীয় জওয়ানের মাথা কাটার ঘটনার পর কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে দিল্লি আপত্তি জানালেও অভিযোগ অস্বীকার করে চলেছে ইসলামাবাদ। গত কালের ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের পর থেকে অন্তত চার বার গুলি ছুড়েছে পাক সেনা। স্বভাবতই ঘরোয়া রাজনীতিতে পাকিস্তান সম্পর্কে আরও কঠোর মনোভাবের দাবি উঠেছে। আজ পাক সেনার কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা এর জন্য দায়ী, তাদের শাস্তি প্রয়োজন। আশা করি, পাকিস্তান বুঝবে।” বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদও জানান, পাকিস্তানের তরফে সাড়া না মেলায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ধাক্কা লাগবে। যদিও পাক বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র মোয়াজ্জম খান আজ বলেন, “আমরা ভারতের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছি। সহমতের ভিত্তিতেই সমস্যার সমাধান হবে।”
তবে ভারত আপাতত কড়া মনোভাবই নিচ্ছে। যার প্রথম প্রতিফলন ঘটেছে ভিসা নীতিতে। আজ ওয়াঘা-আটারি সীমান্তে বয়স্ক নাগরিকদের আসামাত্র ভিসা দেওয়ার ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হওয়ার কথা ছিল। শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়। এর সঙ্গে রয়েছে হকি খেলোয়াড়দের দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত। এ মাসের শেষে পাক মহিলা ক্রিকেট দলেরও আসার কথা ছিল। কিন্তু দিল্লি চায় না তাঁরা আর আসুন।
এমন উপর্যুপরি কঠোর পদক্ষেপের সলতে পাকানো চলছিল গত কয়েক দিন ধরেই। মেন্ধার সেক্টরে দুই জওয়ান নিহত হওয়ার পরেই সাউথ ব্লক নড়েচড়ে বসে। নতুন রণকৌশল ঠিক করতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের নেতৃত্বে দফায় দফায় বৈঠক হয়। সেই অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই বায়ুসেনা প্রধান পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দেন। ধাপে ধাপে সুর চড়ানোর চিত্রনাট্য মেনে এর পর সেনাপ্রধান আসরে নামেন। তিনিও জানিয়ে দেন, ইট ছুড়লে পাটকেলেই জবাব দেওয়া হবে। এ বার মুখ খুললেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী।
নতুন ভিসা ব্যবস্থা চালুর অনুষ্ঠান নিয়েও দিল্লি উদাসীন মনোভাব নিতে থাকে একই চিত্রনাট্য মেনে। প্রথমে ঠিক ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে ওই অনুষ্ঠানে থাকবেন। পরে ঠিক হয়, প্রতিমন্ত্রীকে পাঠানো হবে। শেষে শুধু আমলাদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে সবুজ সঙ্কেত পেয়ে গোটা অনুষ্ঠানটিই বাতিল করে দেওয়া হয়। এই ভিসা ব্যবস্থা চালু করতেই গত মাসে দিল্লি আসেন পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রেহমান মালিক। ১৫ মার্চ থেকে পর্যটকদের গ্রুপ ভিসা দেওয়া চালু হওয়ার কথা। খুঁটিনাটি কারণ দেখিয়ে সেখানেও আপত্তি তোলা হবে বলেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর। পাক বাণিজ্যমন্ত্রীর দিল্লি আসার কথা ছিল জানুয়ারির শেষে। তার কী হবে? এক কূটনীতিকের জবাব, “তত দিন ওদের সরকার তো টিঁকুক!”
শাসনে সন্ত্রাস

২০১০ ২০১১ ২০১২
হত জঙ্গি ২৩২ ১০০ ৭২
ধৃত জঙ্গি ১৫৫ ১৪৫ ১৫০
হত নাগরিক ১৬৪ ৪০ ২৪
হত জওয়ান ৬৯ ৩৩ ১৫
সুন্নি নেতা তাহির-উল-কাদরির নেতৃত্বে বিক্ষোভ ও পাক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেফতার করতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের জেরে আপাতত ঘোর সঙ্কটের মুখে পাকিস্তান। ভারত মনে করছে, পাকিস্তান ফের সামরিক শাসনের দিকে ঝুঁকছে। তাতে অবশ্য দিল্লির আপত্তি নেই। কারণ রাজনৈতিক কর্তৃত্বহীন সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার থেকে সরাসরি সামরিক শাসকদের সঙ্গে কথা বলা ভাল। তাঁদের হাতেই ক্ষমতার চাবিকাঠি।
কিন্তু নিয়ন্ত্রণরেখায় এই ধরনের ঘটনা কেন ঘটানো হল? বিদেশ মন্ত্রক মনে করছে, যখনই ভারত-পাক সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে আসার পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখনই কখনও নাশকতা চালিয়ে, কখনও সীমান্তে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় বলছে, ২০১০ থেকে ২০১২-এর মধ্যে কাশ্মীরের পরিস্থিতিও অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছিল। দেখা গিয়েছে, ২০১০ সালে যেখানে কাশ্মীরে ২৩২ জন জঙ্গি ধরা পড়েছিল, ২০১২-এ ধরা পড়েছে ৭২ জন। সাধারণ নাগরিকের মৃত্যুর সংখ্যাও ৪৭ থেকে নেমেছে ১৫-য়। গুলিচালনার ঘটনা ১৯১ থেকে কমে হয়েছে ৫০টি। একটিও রকেট হামলা হয়নি। এর পিছনে জারদারি-গিলানিদেরও যথেষ্ট সদর্থক ভূমিকা ছিল। কিন্তু হঠাৎ মাথাচাড়া দিল ‘অশুভ শক্তি’। বিদেশ মন্ত্রকের কূটনীতিকদের মতে, পাকিস্তানের নির্বাচন এগিয়ে আসছে। তাই জেহাদি শক্তি, পাক সেনা এবং আইএসআই এই ত্রয়ী ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে। নিয়ন্ত্রণরেখা দিয়ে ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা হচ্ছে। নর্দার্ন কম্যান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল কে টি পারনায়েক বলেন, “অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে বলেই পাক সেনা হতাশ হয়ে গুলি চালাচ্ছে।” জঙ্গি ঢুকিয়ে দিয়ে নাশকতার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় পাক সেনা ও লস্করের মতো মৌলবাদী সংগঠনগুলি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাকেই ভয়াবহ করে তোলার ছক কষে। সেই কারণেই তারা কাঁটাতার পেরিয়ে ভারতীয় জওয়ানের মাথা কেটে নিয়ে যায়, যাতে এই ঘটনার প্রভাব অনেক বেশি হয়। পাকিস্তানের ঘরোয়া পরিস্থিতি যত উত্তপ্ত হবে, নির্বাচিত সরকারের কর্তৃত্ব যত দুর্বল হবে, ততই সেনার শক্তি বাড়বে। সীমান্তে ভারতের সঙ্গে সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হলে সেনা অভ্যুত্থানের সুযোগ বাড়বে। ঠিক যে ভাবে কার্গিলের পর নওয়াজ শরিফকে সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন পারভেজ মুশারফ। বর্তমান পাক সেনাপ্রধান আশফাক কিয়ানি একই পথে হাঁটেন কি না, সেটাই দেখার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.