|
|
|
|
|
|
সিইও-র টেবিল থেকে |
বিমা কেনার আগে তৈরি করুন প্রয়োজন-তালিকা |
সাধারণ বিমা নিয়ে ভারতী অ্যাক্সা-র সিইও এবং এমডি অমরনাথ অনন্তনারায়ণের
সঙ্গে কথা বললেন সুপর্ণ পাঠক এবং প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী |
সাধারণ বিমা নিয়ে আমাদের অনেকের ধারণাই কিন্তু খুব একটা স্বচ্ছ নয়।
আপনাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আমি একমত। সাধারণ বিমা ও তার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে গ্রাহকদের ধারণা সত্যিই এখনও খুব স্পষ্ট নয়।
প্রথমেই বুঝতে হবে যে, সাধারণ বিমা আর জীবন বিমা এক নয়। তবে জীবন বিমার বাইরে সব বিমাই সাধারণ বিমার আওতায় পড়ে। এখানে প্রতি বছরই এক অর্থে নতুন করে বিমা কেনেন আপনি। যেমন ধরুন স্বাস্থ্য বিমা। প্রতি বছর আপনি কিনছেন। প্রিমিয়ামও বদলাচ্ছে। যেটা সাধারণত জীবন বিমার ক্ষেত্রে হয় না।
আমরা স্বাস্থ্য বিমা কিনি শুধু চিকিৎসার খরচ মেটাতে। এ বার চিন্তা করুন এমন একজন মানুষের কথা, যিনি স্বনিয়োজিত। অসুস্থ হলেন। হাসপাতালে ভর্তি হতে হল। চিকিৎসা করালেন। বিমা সংস্থা টাকা দিল। খরচ মিটে গেল। কিন্তু সত্যিই মিটল কি?
যে ক’দিন হাসপাতালে ছিলেন, তার খরচ মিটল। কিন্তু যে রোজগারটা তিনি হারালেন? সে ক্ষেত্রে সন্তানের স্কুলের খরচ, বিদ্যুতের বিল, সংসারের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে তো সঞ্চয় ভাঙতে হবে, তাই না? আর যদি অসুস্থতা এমন হয় যে, কর্মক্ষমতাই চলে গেল, তা হলে?
ধরুন একজন শ্রমিক। তাঁর অ্যাক্সিডেন্ট হল। রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য যোজনায় চিকিৎসাও হল। কিন্তু তাঁর রোজগার?
বিমার কিন্তু এখানে একটা বড় সাহায্যকারী ভূমিকা আছে। উপরের দু’ক্ষেত্রেই যদি অসুস্থতার ঝুঁকির কথাটা মাথায় রেখে কেউ এগোন, তা হলে শুধু স্বাস্থ্যবিমা কেনাই যে যথেষ্ট নয়, সেটা আমরা বুঝতে পারব। সঙ্গে যে রোজগার হারানোর ঝুঁকিও সামলানোর প্রয়োজন, সেটাও তো ভাবতে হবে।
অথবা ভাবুন চাকুরিরত যে কোনও মানুষের কথা। আজকাল তো প্রায় সব অফিসই চিকিৎসার জন্য বিমা করায়। কিন্তু সমস্যা হয় অবসরের পরে। তখন নতুন করে বিমা করাতে গিয়ে ওই বয়সে বিমার খরচ বাড়ে, ঝক্কিও কম পোহাতে হয় না। তার থেকে যদি আমরা ব্যক্তিগত ভাবে একটা বিমা কম বয়সেই কিনি, তা হলে বুড়ো বয়সের ওই ঝক্কি এড়ানো যায়।
আমি নিজের উদাহরণ দিতে পারি। আমার মায়ের মাথায় ‘ক্লট’ হওয়ার কারণে তিনি মোটামুটি সব কিছু নিজে করতে পারলেও এক জনকে ২৪ ঘণ্টা পাশে থাকতে হয়। এই খরচটা কোনও স্বাস্থ্য বিমা এখনও দেয় না। কিন্তু এর জন্য অন্য বিমার ব্যবস্থা আছে।
২০০০ সালের আগে যাঁরা স্বাস্থ্য বিমা কিনেছেন, তাঁরা ভাবতেই পারেননি যে চিকিৎসার খরচ এ ভাবে বাড়বে। এঁদের সমস্যা মেটাতে পারে, এমন বিমা আছে?
এই সমস্যা সমাধানের জন্য ‘টপ আপ’ পলিসি কেনা যেতে পারে। এর সুবিধা হল, এতে তুলনায় কম প্রিমিয়াম গুনতে হবে। তবে ৪৫ বছরের মধ্যে কিনলে নতুন করে ডাক্তারি পরীক্ষার প্রয়োজন হয় না। অন্যথায় একটু ঝামেলা হলেও এটা নেওয়া ভাল। যে-সংস্থার স্বাস্থ্য বিমা আছে, তার কাছেই যে ‘টপ আপ’ কিনতে হবে, তা নয়। যে-কোনও সংস্থার কাছেই এটা কেনা যেতে পারে।
‘টপ আপ’ বলা হয়, কারণ আপনার যদি এক লক্ষ টাকার প্রাথমিক স্বাস্থ্য বিমা থাকে, তা হলে তার উপরে যে-খরচ হবে, সেই টাকা আসবে ‘টপ আপ’ বিমা থেকে। একটা জায়গা এখানে স্পষ্ট করে দেওয়া ভাল। যাঁরা পরিবারের সদস্যদের প্রত্যেকের নামে আলাদা করে বিমা কিনেছেন, ‘টপ আপ’ কেনার সময়ে সেটা কিন্তু ফ্লোটার হিসাবে কিনতে পারেন। অর্থাৎ ধরুন, সব মিলিয়ে ৫ লক্ষ টাকার ‘টপ আপ’ ফ্লোটার কিনলেন আর পরিবারে সবার জন্য মাথা পিছু এক লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমা কিনে রেখেছেন। এ বার পরিবারের কেউ অসুস্থ হলেন। চিকিৎসায় খরচ হল ৩ লক্ষ টাকা। তা হলে তাঁর জন্য ১ লক্ষ আসবে পুরনো বিমা থেকে। আর বাকি ২ লক্ষ ‘টপ আপ’ থেকে। এ বার যদি পরিবারের অন্য কেউ ওই বছরেই অসুস্থ হন, তা হলে মোট ৫ লক্ষ টাকার ‘টপ আপ’ থেকে তাঁর জন্য তোলা থাকবে ৩ লক্ষ টাকা। |
|
শুরু করেছিলাম বিমার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সাধারণ মানুষের মনে স্বচ্ছ ধারণার অভাব নিয়ে...
ঠিকই বলেছেন। আসলে বেসরকারি সংস্থাগুলি গত দশকের গোড়ায় এলেও ২০০৮ সালের আগে সব সংস্থাই একই ধরনের প্রকল্প বিক্রি করত। আমাদের প্রকল্প নিয়ে ‘ইনোভেশন’ করার জায়গা ছিল না। নিয়ন্ত্রক যা বলত, সেটাই করতে হত। তাই আমাদের দিক থেকেও দৌড়টা ছিল গ্রাহকের কাছে আগে পৌঁছনোর। নতুন গাড়ি বিক্রি হচ্ছে? ক্রেতার কাছে যে আগে যেতে পারবে, জিৎ তারই। কিন্তু এখন ব্যাপারটা বদলে গিয়েছে। সবাই চেষ্টা করছি মানুষের নানা চাহিদা মেটাতে। ধরুন, আপনার কুকুর আছে। সে যদি চুরি যায়, সেই দুঃখ মেটাতে পারব না। কিন্তু ভাল কুকুর কিনতে অনেক টাকা লাগে। সেই ক্ষতিটা অন্তত পুষিয়ে দিতে পারব।
যা বলছিলাম। ২০০৮ সালের পর থেকেই আমরা এটা করতে পারছি। নিয়ম বদলেছে বলে। সমস্যা হচ্ছে, এই শিল্পে এখন একটা বড় সমস্যা দক্ষ লোকের অভাব। যে চিরকাল গাড়ির বিমা বিক্রি করে এসেছে, তাকে যদি বলা হয়, “যাও গিয়ে দেখ তো ওঁর কী কী বিমা লাগতে পারে?”, তাহলে তাঁর প্রথম প্রশ্নই হবে আপনার গাড়ির বিমা কার কাছ থেকে কিনেছেন! যেটা বলতে চাইছি তা হল, আমরা এখনও সেই বাতাবরণ তৈরি করতে পারিনি, যেখানে সাধারণ ভাবে এক জন মানুষ অনায়াসেই এক জন উপদেষ্টার কাছে পৌঁছতে পারেন। প্রয়োজন খুলে বলে দরকারি বিমার তালিকা তৈরি করিয়ে নিতে পারেন।
এই যে ধরুন আমরা স্বাস্থ্য বিমা দিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলাম। ঠিক ব্যবস্থায় আমাদের বলা উচিত যে শুধু মেডিক্লেম নয়, অসুস্থতার সঙ্গে অন্য যে-সব অসুবিধা তৈরি হয়, তা সামলাতেও বিমা কেন উচিত। যেমন, স্বনিয়োজিত ব্যক্তি। তিনি চিকিৎসার খরচ সামলাতে স্বাস্থ্য বিমা কিনছেন। কিন্তু অসুস্থ হওয়ার পরেই বুঝতে পারছেন যে, ওই বিমা যথেষ্ট নয়। কারণ, তাঁর রোজগার হারানোর ক্ষতিপূরণও বিমার মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু এখনও আমাদের দেশে সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে আমরা সে দিকে এগোচ্ছি।
কোন দিকে?
আসলে বিমা কেনার আগে ক্রেতার উচিত চাহিদার তালিকা তৈরি করা। একটু ভাবা। তার পর কী কী বিমা দরকার, উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে তা ঠিক করা। তার পরে বিভিন্ন বিমা সংস্থার কাছ থেকে দর যাচাই করে বিমা কেনা। এই জায়গাটায় সাধারণ মানুষের কাছে আমরা পৌঁছে উঠতে
পারিনি। চেষ্টা শুরু হয়েছে। সময় লাগবে।
আপনার মতে বিমা কিনতে কোন ৫টি বিষয় মাথায় রাখতেই হবে?
(১) বিমা সুরক্ষার জন্য। সঞ্চয়ের জন্য নয়।
(২) আজ বিমা কিনলাম মানে এই নয় যে, আগামী দিনে আর কিনতে হবে না। সময়ের সঙ্গে চাহিদা বদলায়। জীবনে ঝুঁকির চরিত্রও বদলায়। এটা মাথায় রাখতে হবে।
(৩) এজেন্টকে অবশ্যই বিশ্বাস করবেন। কিন্তু বিমা কেনার আগে নিজেও বাজারটা যাচিয়ে দেখুন ।
(৪) বিমা কেনার আগে অবশ্যই মাথায় রাখবেন মুল্যবৃদ্ধির কথা। আজ হয়তো মনে করছেন এক লক্ষ টাকার বিমা কিনলেই যথেষ্ট। কিন্তু আগামী দিনে ওই খরচ ১০ লক্ষ টাকায় দাঁড়াতে পারে। উদাহরণ হিসাবে শুধু চিকিৎসা-খরচের কথাই ভেবে দেখুন।
(৫) শুধু প্রিমিয়াম দেখে পলিসি নয়। শর্ত দেখে কিনুন। |
|
|
|
|
|