স্পট এক্সচেঞ্জ |
পণ্য বাজারে ‘কিস্তি’মাত
কমোডিটি এক্সচেঞ্জেও এসআইপি-র সুবিধা চান? ইচ্ছে
লগ্নির
দিনেই লাভের অঙ্ক ঘরে তোলার? তা হলে স্পট
এক্সচেঞ্জ আপনার জন্য মন্দ নয়। খোঁজ দিলেন অরিন্দম সাহা |
|
|
এই সংখ্যায় আমরা আলোচনা করব স্পট এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে পণ্য লেনদেনের খুঁটিনাটি নিয়ে। এক দিনের এই লেনদেন ক্রমশই জনপ্রিয় হচ্ছে দেশে। অনেকে সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানের (এসআইপি) মতো অল্প করেও লগ্নি করছেন এই বাজারে। বর্তমানে এর ৯৫% রয়েছে ন্যাশনাল স্পট এক্সচেঞ্জ (এন এস ই এল)-এর দখলে। অন্যটি কৃষিপণ্য প্রধান এনসিডিইএক্স স্পট এক্সচেঞ্জ। |
বাজি ই-সিরিজ |
এখানে স্পট এক্সচেঞ্জে ই-সিরিজের পণ্য লেনদেন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। মূলত ছোট লগ্নিকারীদের জন্যই ই-সিরিজ চালু করে এনএসইএল। এখানে খুব কম পরিমাণ পণ্য কেনা যায়। সোনার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ইউনিট ১ গ্রাম। রুপোর ১০০ গ্রাম। অবশ্য বেশি পণ্যের জন্যও আবেদন করা যায়।
বর্তমানে ই-সিরিজে সাতটি পণ্য লেনদেন হয় সোনা, রুপো, তামা, প্ল্যাটিনাম, জিঙ্ক, সিসা ও নিকেল। কম সময়ে লেনদেন হয় বলে দর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ প্রায় নেই। তাই ফাটকাবাজদের আনাগোনা তুলনামূলক ভাবে কম। |
|
এসআইপি-র সুবিধা এখানেও |
মিউচুয়াল ফান্ডের মতো এখানেও এস আই পি-র সুবিধা আছে। ধরা যাক, আপনি প্রতি মাসে এক গ্রাম করে সোনা কিনলেন। কিন্তু প্রয়োজন না থাকায় পণ্য বাড়ি নিয়ে গেলেন না। তা রইল আপনার ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টেই। এ ভাবে বছরে ১২ গ্রাম সোনার মালিক হলেন। ১ বছর পর হয়তো ৫ গ্রাম সোনা দরকার। তখন চাইলে সেই ৫ গ্রামই বার বা কয়েন আকারে হাতে নিতে পারেন। বাকিটা ডি-ম্যাটেই জমা থাকল। এ ভাবে ডি-ম্যাটে পণ্য রাখতে কোনও খরচ দিতে হবে না। |
কী ভাবে হয় লেনদেন? |
• বেশিরভাগ ব্রোকার সংস্থাই এনএসইএল-এর সদস্য।
• প্রথমেই এনএসইএল-এ একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়।
• এর সঙ্গে ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ ডিপোজিটারি লিমিটেড (এনএসডিএল) বা সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি সার্ভিসেস লিমিটেড (সিডিএসএল)-এ ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। শেয়ার বাজারের ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট দিয়ে এখানে লেনদেন করা যায় না। এ জন্য আলাদা অ্যাকাউন্ট দরকার।
• ব্রোকার সদস্যের মাধ্যমে টেলিফোনে অথবা ইন্টারনেটে পণ্য কেনার জন্য আবেদন করতে পারেন।
• প্রথমে পণ্যের দামের ১০% জমা রাখতে হয়। দু’দিনের মধ্যে পুরো দাম দিয়ে পণ্য কিনতে হয়।
• লেনদেন শেষে প্রথমে ওই পণ্য জমা হয় ডি-ম্যাট অ্যকাউন্টে। ক্রেতা চাইলে তা সেখানেই যত দিন খুশি রাখতে পারেন।
• চাইলে এক দিনের মেয়াদ শেষের আগে পণ্য বেচে লাভের টাকা নিয়ে বাজার থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু তেমনই ক্ষতি হলে সেটাও পুষিয়ে দিতে হয়।
• দাম বেড়ে বা কমে গেলেও, যে-দামে পণ্য কিনতে আবেদন করছেন তা-ই দিতে হয়। হাতে পেতে অবশ্য অন্যান্য খরচ দিতে হয় লগ্নিকারীকে। যার মধ্যে আছে যুক্তমূল্য কর, রি-ম্যাট, পণ্য পৌঁছনোর ও এক্সচেঞ্জের খরচ, বিক্রয় কর, ব্রোকারের কমিশন ইত্যাদি। |
রি-ম্যাটের পদ্ধতি |
পণ্য তো কিনলেন। এ বার তা বাড়ি নিয়ে যাবেন কী আকারে? অর্থাৎ তা সোনা বা রুপোর বার হবে, না কয়েন? না-কি রুপোর দানা পেলেই চলবে? আপনি যা চাইবেন, সেই আকারেই পণ্য পাঠাবে এক্সচেঞ্জ। এই ভাবে ডি-ম্যাট থেকে পণ্য হাতে পাওয়ার পদ্ধতিকে বলে রি-ম্যাট। লগ্নিকারীর চাহিদার উপরই স্থির হয় রি-ম্যাটের খরচ।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় রুপো এক্সচেঞ্জে আসে ৩০ কেজির বারে। তাই ৩০ কেজি রুপো কিনলে রি-ম্যাট খরচ দিতে হয় না। কিন্তু যদি ১০০ গ্রাম রুপোর কয়েনে চান, তা এক্সচেঞ্জ তৈরি করে দেবে। সেই খরচ আপনাকে দিতে হবে। সোনার ক্ষেত্রে ১০ গ্রাম পর্যন্ত পাবেন শুধুমাত্র কয়েনে। ১০০ গ্রাম থেকে মিলবে বার।
কলকাতায় কোথায় পাব?
কলকাতায় এনএসইএল-এ এখন শুধু কম পরিমাণে সোনা ও রুপো হাতে পাওয়া যায়। রি-ম্যাটের দাবি জানালে, তার ৭ দিনের মধ্যে গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়।
আগামী দিনে পণ্য হাতে নেওয়ার ব্যবস্থা আরও এক ধাপ এগোতে চায় এনএসইএল। সে ক্ষেত্রে ডি-ম্যাটের রসিদ নিয়ে সরাসরি এনএসইএল স্বীকৃত গয়নার দোকানে লগ্নির সম-পরিমাণ সোনা বা রুপো দিয়ে গয়না তৈরির আবেদন করা যাবে। ক্রেতাকে পণ্যটি হাতে নিতে হবে না।
এনএসইএল-এর ঠিকানা:
২৩, আর এন মুখার্জি রোড, কলকাতা ৭০০০০১। |
দৈনিক লেনদেনের খুঁটিনাটি |
• এনএসইএল-এর মোট দৈনিক লেনদেনের মধ্যে শুধু ই-সিরিজ পণ্যের লেনদেনেই হয় ১,২০০ কোটি টাকার।
• বাকি পণ্যের লেনদেন হয় প্রায় ২০০ কোটি টাকার।
• দেশ জুড়ে সব স্পট এক্সচেঞ্জে ১,০০০ সদস্যের মাধ্যমে ৫০ হাজারের বেশি টার্মিনালে লেনদেন চলে।
• দেশে কৃষি পণ্যের জন্য এক্সচেঞ্জগুলির প্রায় ২০০টি গুদাম আছে।
• বেশির ভাগ পণ্য লেনদেন হয় সকাল ১০টা থেকে রাত ১১.৩০ পর্যন্ত।
পশ্চিমবঙ্গে স্পট এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে রাজ্যে উৎপাদিত কৃষিপণ্য লেনদেনের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে, অন্য রাজ্যে উৎপন্ন পণ্য লেনদেনের সুযোগ রয়েছে। এ জন্য প্রযোজ্য কৃষি বিপণন আইনও সব রাজ্যে সমান নয়। এমনকী পশ্চিমবঙ্গের মতো অনেক রাজ্যে এ জন্য নির্দিষ্ট মডেল এপিএমসি আইন নেই। এনএসইএল রাজ্যের কাছে এ নিয়ে আবেদন করেছে। |
রাশ যাদের হাতে |
বর্তমানে স্পট এক্সচেঞ্জগুলি রাজ্যের কৃষি বিপণন পর্ষদ, হিমঘর উন্নয়ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও কিছু ক্ষেত্রে ফরওয়ার্ড মার্কেটস কমিশন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এ ছাড়া প্রতিটি রাজ্যের কৃষি বিপণন আইন, বিক্রিয় কর আইন, যুক্তমূল্য কর, অক্ট্রয় ইত্যাদিও প্রযোজ্য হয়। লগ্নিকারীদের সমস্যা জানানোর জন্য প্রতি এক্সচেঞ্জে সালিশির ব্যবস্থা আছে। |
আগাম লেনদেনের সঙ্গে ফারাক |
• খুব কম পণ্য কেনা যায়।
• এই বাজারের জন্য আলাদা ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়।
• চুক্তির মেয়াদ মাত্র ১ দিন।
• এক দিনেই চুক্তি শেষ হয় বলে আগাম লেনদেনের মতো প্রতি দিন দরের খেয়াল রাখতে হয় না।
• মেয়াদ শেষে পণ্য রাখতে পারেন ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টে।
• পরে পছন্দ অনুসারে যে-কোনও পরিমাণ পণ্য বাড়ি নিতে পারেন।
|
ইটিএফ-এর থেকে কোথায় আলাদা? |
• ইটিএফ-এ পুরো লগ্নিই সোনা বা রুপোয় হয় না। সাধারণত সরকারি বন্ডেও তার কিছুটা বিনিয়োগ হয়। স্পট এক্সচেঞ্জের ক্ষেত্রে পুরো লগ্নিই নির্দিষ্ট পণ্য কিনতে ব্যয় হয়।
• লগ্নিকারী সরাসরি পণ্য হাতে পেতে পারেন। কোনও মিউচুয়াল ফান্ড এএমসি-র প্রয়োজন হয় না।
• কম পণ্য হাতে পেতে ফান্ড সংস্থাগুলির সায় দরকার নেই।
• বার্ষিক রক্ষণাবেক্ষণ খরচ নেই।
|
ঝটতি লেনদেনের দু’চার কথা |
• শেয়ার বাজারের ক্যাশ/ ইক্যুইটি বিভাগের মতোই কাজ করে স্পট এক্সচেঞ্জগুলি।
• ছোট লগ্নিকারীরা এসআইপি-র মতো লগ্নি করতে পারেন।
• ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া-সহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা গম, ডাল ইত্যাদি নিলামের জন্য স্পট এক্সচেঞ্জ ব্যবহার করে।
• দেশ জুড়ে একটি নির্দিষ্ট কৃষি বিপণন আইন না-থাকায় বিভিন্ন রাজ্যের কাছে লেনদেনের জন্য আলাদা অনুমতি নিতে হয়।
• কর্নাটক, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান ইত্যাদি রাজ্য ইতিমধ্যেই সেখানে উৎপাদিত কৃষি পণ্য লেনদেনের অনুমতি দিয়েছে। |
|
লেখক এমসিএক্স স্টক
এক্সচেঞ্জ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট (মতামত ব্যক্তিগত) |
|