|
|
|
|
|
|
মিউচুয়াল ফান্ড |
বাড়তি টাকার মাথায় ছাতা
হাতে কিছু টাকা আছে। কম ঝুঁকিতে লগ্নি করে সেটা একটু বাড়িয়ে নিতে চান।
নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য টাকাটা আটকে রাখতেও অসুবিধা নেই। ফান্ডে
মেয়াদি প্রকল্পের কথা ভাবছেন না কেন? লিখেছেন নীলাঞ্জন দে |
|
|
এখন ডেট-ফান্ডের দুনিয়ায় লগ্নিকারীদের বেশ লোভ দেখাচ্ছে ফিক্সড ম্যাচিওরিটি প্ল্যান (এফএমপি)। যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, নির্দিষ্ট মেয়াদি প্রকল্প। নাম থেকেই পরিষ্কার, এটি একটি ক্লোজ-এন্ড পণ্য। অর্থাৎ, টাকা খাটানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ নির্ধারণ করা থাকে আগে থেকেই। ওই মেয়াদে এফএমপি-তে লগ্নি করা তহবিল ঋণপত্রে খাটানো হয়। মেয়াদ শেষে লগ্নিকারীর হাতে প্রাপ্য রিটার্ন তুলে দেন ফান্ড ম্যানেজার। অর্থাৎ এফএমপি-র লক্ষ্যই হল, বিভিন্ন ধরনের ঋণপত্রে বিনিয়োগের মাধ্যমে আয়ের পথ তৈরি করা। |
তুরুপের তাস
|
অনিশ্চিত রিটার্নের রুক্ষ জমিতে এফএমপি প্রায় মরুদ্যান। যাঁরা লগ্নির জন্য কম ঝুঁকির পথ খুঁজে বেড়ান, তাঁদের কাছে এই প্রকল্পের দু’টি বৈশিষ্ট্য বেশ আকর্ষণীয়
(১) রিটার্ন কত হতে পারে,
সে সম্পর্কে আগে থেকে আন্দাজ করার সুবিধা।
(২) এর ভরসাযোগ্য চরিত্র।
এই দুই কারণে এফএমপি-র ভক্ত-তালিকা বেশ লম্বা। মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থাগুলি সারা বছর ধরেই এ রকম অসংখ্য প্রকল্প বাজারে ছাড়ে। আর বিনিয়োগকারীদের একটি বড় অংশ বাড়তি অর্থ সঞ্চয়ের জন্য নিয়মিত সেগুলি ব্যবহার করেন ।
তবে এফএমপি-র সব থেকে বড় গুণ হল তার বৈচিত্র। যে কোনও পেশাদার লগ্নিকারীকে জিজ্ঞাসা করুন। দেখবেন, সব ধরনের ফিক্সড ম্যাচিওরিটি পণ্য সম্পর্কে গড় গড় করে বলে দিচ্ছেন। এগুলির মধ্যে খুব পরিচিত ৩৭০ দিন বা ১৮ মাস মেয়াদের প্রকল্প। তিন বছর মেয়াদের এফএমপি-ও বেশ জনপ্রিয়। এমনকী খুব কম মেয়াদের প্রকল্পও বাজারে চালু রয়েছে। যেমন ধরুন, ৯০ দিনের। |
|
আপনার কী চাই? |
এ ক্ষেত্রে নিজের মনকে যাচাই করার একটা সহজ পন্থা বলি। নিজেকে প্রশ্ন করুন, কিছু দিনের জন্য তুলনায় নিরাপদ কোনও খাতে, বাড়তি টাকার একাংশ আটকে রাখতে পারব? জবাব ‘হ্যাঁ’ হলে, আর কোনও মাথাব্যথা রইল না। আপনার লগ্নির মাধ্যম হিসেবে এফএমপি অন্যতম পছন্দ হতেই পারে।
তবে আগেই বলেছি, নানা রকম মেয়াদের এফএমপি চারপাশে ছড়িয়ে। নিজের চাহিদা ও সুবিধা অনুযায়ী প্রকল্প বাছুন। সে ক্ষেত্রে কোন মেয়াদের প্রকল্পে টাকা খাটাবেন, তা মূলত নির্ভর করবে, কত দিনের জন্য লগ্নি খাতে টাকাটা আটকে রাখতে পারবেন, সেটার উপর। |
এফডি বনাম এফএমপি |
এফএমপি-র সব থেকে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ফিক্সড ডিপোজিট (এফডি) বা স্থায়ী আমানত প্রকল্প। লগ্নির নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তার মাপকাঠিতে এফডি-র কপালে বরাবরই অনেক বেশি নম্বর জোটে। কারণ, এখানে আপনি জানেন নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে কত টাকা পাবেন। ফলে চোখ বুজে ভরসা করা যায়।
অন্য দিকে, এফএমপি ভরসাযোগ্য হলেও, অন্য যে-কোনও মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পের মতোই রিটার্ন সম্পর্কে ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি দিতে পারে না। কারণ এখানে প্রকল্প বাজার নির্ভর। তবে ফান্ড ম্যানেজার এফএমপি-র অর্থ এমন ঋণপত্রে লগ্নি করতে পারেন, যেখান থেকে সুদ বাবদ একটা বড় অঙ্ক পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে বাজারে সুদের হার নীচের দিকে নামার সময়ে এফএমপি তার সুযোগ নিতে পারবে। এবং পকেট ভরার সুযোগ খুলবে আপনার সামনে।
কাজেই একটা কথা সব সময়ে মনে রাখবেন, বাজারে যখন সুদের হারের ভয়ানক ওঠা-পড়া চলে, তখন এফডি-র বিকল্প হিসেবে এফএমপি খুব কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে। হাতে থাকা টাকা নাড়াচাড়া না-করে ঢেলে দিন ছোট বা বড়, যে কোনও নির্দিষ্ট মেয়াদি প্রকল্পে।
আর একটি কথা, কোনও কোনও এফএমপি সেই সমস্ত ঋণপত্রেই লগ্নি করে, যেগুলির মেয়াদ উত্তীর্ণ হয় প্রকল্পটি শেষ হওয়ার সঙ্গে একই সময়ে। যেমন মনে করুন, ১৮০ দিনের একটি এফএমপি। সেখানে তহবিল এমন সব ঋণপত্রেই লগ্নি করা হবে, যেগুলির মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে ওই ১৮০ দিনের মধ্যেই। এখানে মুনাফা করার জন্য ফান্ড ম্যানেজারকে বন্ড কেনা-বেচার ঝক্কি পোহাতে হয় না। তিনি স্রেফ বন্ডটি কিনবেন এবং প্রকল্পের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া পর্যন্ত ধরে রেখে দেবেন। |
ঝুঁকি যেখানে |
এফএমপি-ও পুরো ঝুঁকিবিহীন নয়। দ্রুত এই অংশটা একবার দেখে নিই।
ক) ইন্টারেস্ট রেট রিস্ক বা সুদের হার সংক্রান্ত ঝুঁকি এফএমপি ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজে লগ্নি করে। শেয়ার বাজারে তহবিল খাটায় না। এর আগে ডেট ফান্ড নিয়ে আলোচনার সময়েই আমি বলেছিলাম, বাজারে সুদ বাড়লে হাতে থাকা ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটির দাম কমে। আবার সুদ কমলে ওই সিকিউরিটির দাম বেড়ে যায়। আর দাম কতটা উঠবে বা নামবে, সেটা নির্ভর করে সিকিউরিটির মেয়াদ, বাজারে সুদের হার এবং ওই হারে যে পরিবর্তন হচ্ছে, তার উপর।
খ) ক্রেডিট রিস্ক বা ঋণ সংক্রান্ত ঝুঁকি ধরুন, আপনার পছন্দ করা এফএমপি একটি সংস্থার ডেট সিকিউরিটিতে লগ্নি করল। আশঙ্কার জায়গাটা হল,আর্থিক সঙ্কট বা অন্য কোনও কারণে সংস্থাটি সিকিউরিটিতে যে সুদ দেবে বলেছিল, সেটা দিল না। কিংবা সিকিউরিটির মেয়াদ শেষে যে-মূলধন ফেরত দেবে বলেছিল, তা দিল না। আবার কোনও কারণে সংস্থাটির ক্রেডিট রেটিং কমার ফলে তাদের সিকিউরিটির দাম কমে গেল। এটা হলে ভুগবে আপনার এফএমপি তহবিল। প্রসঙ্গত, ক্রেডিট রেটিং হল, কোনও সংস্থাকে ঋণ দেওয়া কতটা ঝুঁকির, তার মূল্যায়ন। রেটিং যত ভাল, ঋণ দেওয়া তত কম ঝুঁকির। আর তা কমার মানে ঋণের অর্থ ফেরত না-পাওয়ার ঝুঁকি বাড়া। |
উদাহরণ থেকে বুঝুন |
আপনাদের বোঝার সুবিধার জন্য এ বার ডিএসপি ব্ল্যাকরক মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থার আনা একটি প্রকল্পের কথা বলছি।
ফান্ডের নাম- ডুয়াল অ্যাডভান্টেজ ফান্ড, সিরিজ-ওয়ান। মেয়াদ ৩৬ মাস।
ফান্ড ম্যানেজারের লগ্নির সময়- ৩১ অক্টোবর, ২০১২
তহবিল বণ্টন-
১) নেট তহবিলের ১৮.২৩% ডেরিভেটিভে।
২) ৬৭.১৬% নথিভুক্ত বন্ড/নন্ কনভার্টিবল ডিবেঞ্চারে (সাধারণত AA বা AA+ রেটিংয়ের ঋণপত্রে)।
৩) ১৩.৭% নথিভুক্ত নয় এমন বন্ডে।
প্রকল্পটি চালু হয়েছে ২০১২-র মার্চে। মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে ২০১৫-র মার্চে। তহবিল বণ্টন থেকে এটা স্পষ্ট যে, তিন বছরের জন্য যাঁরা কোনও লগ্নি প্রকল্পে অর্থ আটকে রাখতে পারবেন, এটি তাঁদের জন্যই তৈরি।
আমার কিন্তু ডিএসপি ব্ল্যাকরক মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থার প্রতি কোনও পক্ষপাতিত্ব নেই। তারা একটি ক্লোজ-এন্ড ইনকাম ফান্ড এনেছে এবং সুনির্দিষ্ট ভাবে লগ্নির টাকা বিভিন্ন ডেট পণ্যে খাটিয়ে বিনিয়োগকারীকে মুনাফা দেওয়ার চেষ্টা করছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই উদাহরণ হিসেবে এটির কথা তুলে ধরলাম আমি।
|
এক নজরে |
• এফএমপি ক্লোজ-এন্ড প্রকল্প। নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য লগ্নি হয়।
• মেয়াদ শেষে ফান্ডের ন্যাভ্ অনুযায়ী রিটার্ন পাবেন।
• মেয়াদ নিয়ে সতর্ক থাকুন। ১৮ মাসের প্রকল্পে লগ্নির মতো টাকা থাকলে, দু’বছরের প্রকল্প কিনবেন না।
• সর্বোচ্চ আয়করদাতারা ভেবে দেখতে পারেন। লগ্নির মেয়াদ এক বছরের বেশি হলে, সেটা করের আওতায় আসবে না। |
|
লেখক উইশলিস্ট ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজর্সের ডিরেক্টর (মতামত ব্যক্তিগত) |
|
|
|
|
|