ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড |
সাবধানের মার নেই
এটিএম থেকে ক্রেডিট কার্ডে টাকা তুললে, চড়া সুদ দিতে হবে
আপনাকে।
সময়ের মধ্যে ন্যূনতম অঙ্ক জমা না-দিলে, গুনতে হবে
লেট ফি।
কথায়
কথায় কার্ড বার করার আগে তার ভাল-মন্দের
খোঁজ দিলেন অমিতাভ গুহ সরকার |
|
|
টাকা তুলতে ব্যাঙ্কে লাইন দেওয়ার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছি আমরা। অভ্যস্ত হয়েছি ডেবিট কার্ডে। যা এক বার এটিএম মেশিনে সেঁধিয়ে গেলে বছরে ৩৬৫ দিন ২৪ ঘণ্টাই আপনার হাতে হাজির অ্যাকাউন্টের টাকা।
একই ভাবে দিন ফুরিয়েছে পকেটে টাকার গোছা নিয়ে ঘোরারও। বরং তার জায়গা নিয়েছে ক্রেডিট কার্ড। রেস্তোরাঁয় খাওয়া থেকে কেনা-কাটার খরচ মেটানো প্রায় সব ক্ষেত্রেই এখন পকেটের ‘পার্স’ থেকে মুখ বাড়াচ্ছে এই ‘প্লাস্টিক মানি’। হয়ে উঠছে আধুনিক জীবনযাত্রার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বিশেষত মাঝারি ও বড় শহরে।
কিন্তু প্রায় নিয়ম করে ব্যবহার করলেও, কার্ড দু’টি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি না আমরা। ফলে সব ভাল দিক না-জানায় যেমন পুরো সুবিধাটুকু আদায় করা যায় না, তেমনই সমস্যায় পড়তে হয় নানা অসুবিধার কথা অজানা থাকায়। তাই আজ এই দুই কার্ডের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলব আমরা। জানব, ঝামেলা এড়াতে এগুলি ব্যবহারের সময়ে কী ভাবে সাবধান হব। তবে তার আগে আসুন, এদের সম্পর্কে একটু জেনে রাখি। |
ক্রেডিট কার্ড কথা |
• ধারে পণ্য ও পরিষেবা কেনার সহজতম মাধ্যম। নগদ টাকার বদলে প্লাস্টিকের এই কার্ড ‘ঘষে’ই পণ্য ও পরিষেবার দাম নেয় বড় এবং মাঝারি শহরের অসংখ্য বিপণি।
• মূলত ইস্যু করে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক।
• প্রত্যেক কার্ডের ধারে কেনার ঊর্ধ্বসীমা (ক্রেডিট লিমিট) থাকে।
• পণ্য বা পরিষেবা কেনার পর, ৪৫ দিন পর্যন্ত ধার মেটানোর সময় পাওয়া যায়। ঠিকানায় (চাইলে ই-মেল/ এসএমএস-এও) বিল/ স্টেটমেন্ট পৌঁছনোর পর নির্ধারিত দিনের মধ্যে দাম মেটাতে হয় চেক বা নগদে।
• পুরো দাম দেওয়া না-গেলে, জমা করতে হয় ন্যূনতম অঙ্ক। তবে চড়া হারে সুদ দিতে হয় বাকি টাকার উপর।
• ন্যূনতম অঙ্ক জমা করা না-হলে, সুদ ছাড়াও দিতে হয় লেট-ফি।
• ধারে কেনার সুবিধা ছাড়াও এই কার্ড ব্যবহার করলে পেতে পারেন ‘ক্যাশ ব্যাক’, বোনাস অথবা গিফ্ট পয়েন্টের মতো বাড়তি সুবিধা।
• আগে কার্ড নেওয়ার সময়ে ও পরে বাৎসরিক ফি নেওয়া হত। এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাধারণ কার্ডের জন্য এই ফি মকুব করা হয়। গোল্ড, প্ল্যাটিনাম ইত্যাদি কার্ডে অবশ্য এখনও এই ফি নেয় কিছু ব্যাঙ্ক।
• ট্রেনের টিকিট, প্লেনের টিকিট কেনা-সহ নানা ধরনের পরিষেবা অনলাইনে কেনা যায় কার্ডের মাধ্যমে।
• তোলা যায় এটিএম থেকে টাকাও। তবে ক্রেডিট কার্ডে তোলা টাকা ঋণ হিসেবে গণ্য হওয়ায়, তার উপর সুদ গুণতে হয় খুব চড়া হারে। |
ডেবিট কার্ডের গোড়ার গল্প |
• এটিএম কার্ড নামেই একে বেশি চিনি আমরা। কারণ, এই কার্ড দিয়ে এটিএম থেকে টাকা তোলা হয়। এক দিনে সর্বোচ্চ কত তোলা যাবে, তার অঙ্ক বিভিন্ন কার্ডের ক্ষেত্রে আলাদা।
• ডেবিট কার্ড ব্যবহার করেও পণ্য-পরিষেবার দাম মেটাতে পারেন। অনলাইনে বাজারও করতে পারেন। তবে এতে ধারে কেনা যায় না। টাকা মেটাতে হয় নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে।
• নিজের ব্যাঙ্ক ছাড়াও টাকা তোলা যায় অন্য ব্যাঙ্কের এটিএম থেকে। তবে নিখরচায় অন্য ব্যাঙ্কের এটিএম ব্যবহারের এই সুবিধা মাসে পাঁচ বার পর্যন্ত পাওয়া যায়।
• কার্ড ব্যবহারের জন্য নামমাত্র বাৎসরিক ফি নেয় সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক। |
সুবিধার সাত-সতেরো |
এতক্ষণে দু’টি কার্ডেরই গোড়ার বিষয়গুলি জেনে গিয়েছি আমরা। এ বার এদের সুবিধাগুলি দেখে নিই
• মোটা নগদ টাকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর প্রয়োজন নেই।
• হাতে টাকা না-থাকলেও, ধারে কেনার সুবিধা রয়েছে ক্রেডিট কার্ডে।
• নগদের বদলে এখন ভিসা বা মাস্টার কার্ডে টাকা নেয় অনেকেই।
• কাজের খাতিরে ছুটে বেড়াতে হলে, কার্ড দু’টি খুব কাজে দেয়।
• ব্যবহার করা যায় বিদেশেও।
• অনলাইনে দেওয়া যায় আয়কর, বিভিন্ন সরকারি ফি ইত্যাদি।
• ব্যাঙ্কে কম যেতে হয়। বার বার চেক ব্যবহারের ঝামেলা নেই।
• বছরের ৩৬৫ দিনই দুই কার্ডে টাকা তোলা বা কেনাকাটা করা যায়। |
|
অসুবিধার খতিয়ান |
অসুবিধার দিকটাও জেনে রাখুন
• অনিয়ন্ত্রিত খরচের সম্ভাবনা বাড়ে। বিশেষত ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে।
• ক্রেডিট কার্ডের টাকা সময়মতো না-মেটালে, মোটা সুদ গুণতে হয়। যা বছরে ৩০%-৩৬% পর্যন্ত হতে পারে। থাকতে পারে অন্যান্য মাশুলও।
• অনলাইনে কার্ড ব্যবহার করলে, সুরক্ষা নিয়ে চিন্তা থাকে।
• অত্যধিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে, নজরে রাখে আয়কর দফতর।
|
গোড়ায় সাবধান |
বুঝতেই পারছেন, বিস্তর সুবিধার সঙ্গে ওৎ পেতে আছে বিপদও। যেমন, কার্ড দিয়ে অনলাইনে কেনার সূত্রে অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া বা আপনার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অন্যের জিনিস কিনে ফেলার সম্ভাবনা থাকছে। তাই কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখুন
• কার্ড পেলেই পিছনে সই করুন।
• এটিএম-এ টাকা তুলে মেশিন থেকে কার্ড ফেরত নিন। ব্যাগে রাখুন বা ছিঁড়ে ফেলুন ট্রান্জাকশন স্লিপও।
• যেখানে-সেখানে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করবেন না। বিশেষত অচেনা, অনির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটে।
• ক্রেডিট কার্ডের টাকা সুদমুক্ত মেয়াদের মধ্যেই মিটিয়ে দিন। না-হলে অন্তত ন্যূনতম অঙ্ক জমা দিন।
• স্টেটমেন্ট ভাল করে পরীক্ষা করে নিন। সব লেনদেন আপনার তো?
• কার্ড হারালে তৎক্ষণাৎ তা কর্তৃপক্ষকে জানান।
• ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা তুললে, ব্যাঙ্ক-স্টেটমেন্ট মিলিয়ে নিন। সুবিধা নিন মোবাইল অ্যালার্ট-এর।
• কার্ড রাখুন সুরক্ষিত জায়গায়।
• মাঝেমধ্যেই বদলান পিন নম্বর।
|
কখনও নয় |
উটকো ঝামেলা এড়াতে প্রথমেই প্রতিজ্ঞা করুন কিছু জিনিস না করার
• অপরিচিত ব্যক্তিকে কার্ডের পিন নম্বর বা তথ্য দেবেন না।
• পিন নম্বর মুখস্থ করুন। বা সাংকেতিক ভাবে মোবাইলে সেভ করুন। যেখানে-সেখানে লিখবেন না।
• ই-মেল বা এসএমএসে কার্ডের তথ্য কাউকে পাঠাবেন না।
• ক্রেডিট কার্ড দিয়ে এটিএম থেকে টাকা না তোলাই ভাল। চড়া সুদ দিতে হয়। বরং নিজের ব্যাঙ্কের এটিএম থেকে ডেবিট কার্ড দিয়ে টাকা তুলুন।
• ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সামর্থ্যের বাইরে কেনাকাটা না করাই ভাল।
• পকেটে নগদ টাকা থাকলে, কার্ডের ব্যবহার কম করুন।
• অন্যের হাতে কার্ড দেবেন না।
• এটিএম-এ কার্ড ব্যবহারের সময় অপরিচিত ব্যক্তির সাহায্য নেবেন না। |
লেখক ম্যাকলিওড রাসেল ইন্ডিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কোম্পানি সেক্রেটারি (মতামত ব্যক্তিগত) |
|