লক্ষ্মী লাভে শিক্ষা ঋণ
ত দিন যাচ্ছে, তত তীব্র হচ্ছে চাকরি-বাজারের প্রতিযোগিতা। তাই সেই বাজারে (বিশেষত একটু ভাল কাজের জন্য) কল্কে পেতে তাল মিলিয়ে বাড়ছে উচ্চশিক্ষার চাহিদাও। বিশেষ করে, ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানেজমেন্টের মতো চাকরি-উপযোগী (‘জব-ওরিয়েন্টেড’) পাঠ্যক্রমগুলিতে। আবার সেই চাহিদা যত বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চড়ছে ‘দাম’ও। ঠিক এই কারণেই ক্রমশ আকাশ ছুঁচ্ছে ওই সব পাঠ্যক্রমের খরচ (বিশেষত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে)। যা মেটাতে বিপুল অর্থবল না-থাকলে ঋণের দ্বারস্থ হতেই হবে আপনাকে।

বৃত্তি পেয়েও ঋণ?
অনেকেই প্রশ্ন করেন, কোনও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০০% বৃত্তি (স্কলারশিপ) পাওয়া সত্ত্বেও কেন ধার নিতে হবে আমাকে? উত্তর হল, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখায় যায়, ওই বৃত্তি শুধুমাত্র পড়ার খরচ (টিউশন ফি)-এর জন্য। এর বাইরেও যে সেখানে যাওয়া, থাকা, খাওয়ার খরচ রয়েছে, তার অনেকটাই বইতে হবে নিজেকে। তাই ১০০ শতাংশ বৃত্তি না-পেলে তো কথাই নেই, ধার করতে হতে পারে তা পাওয়ার পরেও। এ নিয়ে বিশদে আলোচনা করব আমরা।

গৌরী সেন কে?
সকলেই জানতে চান যে, এই ধার দেবে কে? উত্তর হল, এখন শিক্ষা ঋণ দিতে মুখিয়ে থাকে প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্কই। যদি আপনি আইআইটি-আইআইএমের মতো কুলীন প্রতিষ্ঠানে ডাক পান, তা হলে তো কথাই নেই। সে ক্ষেত্রে ঋণ দেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাবে ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে।
তা ছাড়া কোনও ভাল, অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেলেও, ঋণ দিতে এগিয়ে আসবে ব্যাঙ্কগুলি। অনেক সময়ে আবার কোনও-না-কোনও ব্যাঙ্কের গাঁটছড়া বাঁধাই থাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। সে বিষয়ে আগাম খোঁজ নিন। জেনে নিন, সে ক্ষেত্রে আলাদ করে কী কী সুবিধা পেতে পারেন। তবে গৃহ ঋণ বা গাড়ি ঋণ যেমন ব্যাঙ্ক ছাড়াও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওয়া যায়, শিক্ষা ঋণের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত তেমনটা হয় না। এই ধার শুধুমাত্র ব্যাঙ্ক থেকেই পাবেন আপনি।

সব পড়াতেই ধার?
দেশে-বিদেশে যে-কোনও পাঠ্যক্রমে ভর্তি হতেই ঋণের জন্য আবেদন করতে পারেন আপনি। তবে ব্যাঙ্কগুলির দাবি, ভারতে সরকারি কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পড়ার খরচ এখনও অনেকটাই কম হওয়ায় তার জন্য ঋণের আবেদন করেন না প্রায় কেউই। অধিকাংশ আবেদনই আসে হয় বিদেশে পড়তে যেতে, নয়তো দেশে ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিং (বেসরকারি কলেজে) আর ম্যানেজমেন্ট পড়ার জন্য।
এই কারণেই ওই সব কলেজ কিংবা বিজনেস স্কুলে ভর্তির সময়ে ক্যাম্পাসে ভিড় করে ব্যাঙ্কগুলি। স্টল দেয় ক্যাম্পাসে। সেখানে ঋণের সুযোগ-সুবিধার কথা পড়ুয়াদের সামনে তুলে ধরে তারা। ব্যাঙ্কের তরফে সাধারণত এমন ধরনের পাঠ্যক্রমে ঋণ দেওয়ার আগ্রহ বেশি থাকে, যা পাশ করার পর চট করে চাকরি মেলার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য অনেক সময়ে পরীক্ষার ফলাফল কিংবা ‘ক্যাম্পাসিং’য়ের রেকর্ড প্রতিষ্ঠানের কাছে জানতে চায় তারা।
কী পড়তে ঋণ?
সাধারণত যে-সব কোর্সের জন্য শিক্ষা ঋণ পাওয়া যায়, তার মধ্যে রয়েছে দেশে ইউজিসি স্বীকৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম।
• এআইসিটিই অনুমোদিত ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা প্রযুক্তি বিদ্যার কোর্স।
• এআইবিএমএস অথবা আইসিএমআর অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে ডাক্তারি।
• বাণিজ্য শাখার (বিশেষত অ্যাকাউন্টিং সংক্রান্ত) বিভিন্ন পাঠ্যক্রম। যেমন, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি (সিএ), চার্টার্ড ফিনান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট্যান্ট (সিএফএ), আইসিডব্লিউএ ইত্যাদি।
• ম্যানেজমেন্ট (তা সে আইআইএমের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানে হোক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে)।
• এনআইএফটি, এনআইডি-র মতো প্রতিষ্ঠানে ডিজাইনিং নিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে।
• নিয়ন্ত্রক ডিরেক্টর জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন/শিপিং অনুমোদিত অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, পাইলট ট্রেনিং, শিপিং ইত্যাদি সংক্রান্ত ডিগ্রি অথবা ডিপ্লোমা কোর্স করতে।
• নামী বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত কোনও পাঠ্যক্রম, যা ভারতে পড়ানো হয়।
• এ ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে নামী প্রতিষ্ঠান পরিচালিত আরও বেশ কিছু কর্মসংস্থানমুখী (‘জব ওরিয়েন্টেড’) পাঠ্যক্রম।

সতর্ক থাকুন
মনে রাখবেন, শিক্ষাঋণ মঞ্জুর করার সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও পাঠ্যক্রমের মান যাচাই করে ব্যাঙ্কগুলি। খতিয়ে দেখে, ওই প্রতিষ্ঠান ভুয়ো কি না। তাই এই সমস্যা এড়াতে স্বীকৃত বা অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানেই ভর্তি হওয়া ভাল।
কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম অবশ্যই রয়েছে। যেমন, ইন্ডিয়ান স্কুল অফ বিজনেসের (আইএসবি) ম্যানেজমেন্ট পাঠ্যক্রম এআইসিটিই অনুমোদিত নয়। কিন্তু তার গুণমান, খ্যাতি বা প্লেসমেন্ট রেকর্ড নজরকাড়া। তাই সেই ধরনের ক্ষেত্রে ধার পেতে কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না আপনাকে।
এখন যা বাজার, তাতে অনেক অননুমোদিত/ অনামী প্রতিষ্ঠানে পড়তে গেলেও গোড়ায় ঋণ পেতে অসুবিধা হবে না। কিন্তু পরে ভাল চাকরি (প্লেসমেন্ট) না-পেলে সেই ধারের জোয়াল বইতে হবে আপনাকেই। তাই কোথাও ভর্তি হতে ধার নেওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি/ অনুমোদন যাচাই করুন।

দেশি কোর্সের কষ্টিপাথর
কিছু ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান বা পাঠ্যক্রমের কথা বাদ দিলে, শিক্ষা ঋণের জন্য আবেদন করার আগে জেনে নিন, যেখানে ভর্তি হচ্ছেন, তা সরকারি ভাবে স্বীকৃত কিনা। বিভিন্ন ঘরানার পড়াশোনার বেলায় যে-সব সরকারি প্রতিষ্ঠান স্বীকৃতি দেয়, তাদের ওয়েবসাইটে যান। খতিয়ে দেখুন, আপনার পছন্দের প্রতিষ্ঠান বা পাঠ্যক্রম তাদের অনুমোদনের তালিকায় রয়েছে কি না। তার জন্য নীচের তালিকা খাতায় তুলে রাখতে পারেন
• কলা, বিজ্ঞান, বাণিজ্য ইত্যাদিতে স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তর: www.ugc.ac.in
• ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রযুক্তি বা ম্যানেজমেন্ট (টেকনিক্যাল এডুকেশন): www.aicte-india.org
• ডাক্তারি: www.mciindia.org
• শিক্ষক-শিক্ষা (টিচার-এডুকেশন: বি-এড ঘরানার কোর্স): www.ncte-india.org
• দাঁতের ডাক্তারি: www.dciindia.org
• ফার্মেসি: www.pci.nic.in
• নার্সিং: www.mohfw.nic.in
• স্থাপত্যবিদ্যা বা আর্কিটেকচার: www.coa-india.org
এই সংক্রান্ত তথ্যের হদিস পেতে পারেন আরও কয়েকটি ওয়েবসাইটে। তাদের মধ্যে রয়েছে
www.education.nic.in
www.aiuweb.org
এই সব কিছুর সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারতে ভুলবেন না।
আর বিদেশ পাড়ির জন্য?
বিদেশে ভাল প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পেলে, অবশ্যই ঋণ পাবেন আপনি। সাধারণত যে সব পাঠ্যক্রম এ বিষয়ে অগ্রাধিকার পায়, সেগুলি হল
• নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা, বিজ্ঞান ও বাণিজ্যে অনুমোদিত স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং গবেষণা (পিএইচডি) স্তরের পাঠ্যক্রম।
• ম্যানেজমেন্ট (যেমন, এমবিএ)।
• ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডাক্তারি।
• অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, পাইলট ট্রেনিং, শিপিং ইত্যাদি সংক্রান্ত কোর্স, যা ভারত অথবা বিদেশে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বীকৃত।

খাঁটি চেনার মাপকাঠি
এ বিষয়ে ভীষণ ভাবে সতর্ক হতে হবে। প্রতিষ্ঠানের নাম ভারতে বা সারা বিশ্বে সবাই এক ডাকে চিনলে আলাদা কথা। নইলে কিন্তু খতিয়ে দেখতে হবে, তার পাঠ্যক্রম সে দেশে স্বীকৃত কি না। বা সহজ কথায়, পাশ করে ভারতে বা বিদেশে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে ডিগ্রির বৈধতা নিয়ে অসুবিধা হবে কি না। এ বিষয়ে কয়েকটি ওয়েবসাইট সহায়ক হতে পারে। যেমন
• অস্ট্রেলিয়ার জন্য:
www.studyinaustralia.gov.au
• ইউনাইটেড কিংডমে (ইউকে) পড়তে:
(১) www.britishcouncil.org
(২) www.educationuk.org
(৩) www.qaa.ac.uk
• মার্কিন মুলুকে পা রাখতে:
(১) www.newdelhi.usembassy.gov
(২) www.educationusa.state.gov
(৩) www.chea.org
এ ছাড়া, বিভিন্ন তথ্য খুঁজতে ‘বিশ্বস্ত’ সার্চ-ইঞ্জিন তো রয়েইছে।

ঋণের সর্বোচ্চ সীমা
•সাধারণত ভারতে পড়ার জন্য ১০ লক্ষ টাকা।
•বিদেশে এই অঙ্ক ২০ লক্ষ।

পুরোটাই ধার?
•কিছু খুচরো ব্যতিক্রম বাদ দিলে, ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণের পুরোটাই দেয় ব্যাঙ্কগুলি। তবে দেশে পড়ার জন্য তার বেশি টাকা চাইলে, মোট ঋণের ৫% দিতে হবে নিজের পকেট থেকে (মার্জিন মানি)। বিদেশে পড়ার ক্ষেত্রে নিজেকে দিতে হবে ঋণের ১৫%।
•তবে মার্জিন মানি একসঙ্গে দিতে হবে না। সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া ‘শিডিউল’ মেনে কিস্তিতে ঋণের টাকা দিয়ে থাকে ব্যাঙ্কগুলি। এক-এক কিস্তিতে যত টাকা ঋণ দেওয়া হবে, তার ৫ বা ১৫% মার্জিন মানি গুনতে হবে আপনাকে।
•স্কলারশিপ পেলে, বৃত্তির অঙ্ক মার্জিন মানি হিসেবে দেখানো যাবে।
চেকলিস্ট

শিক্ষাঋণের জন্য ব্যাঙ্ক যা যা নথিপত্র চায়, তার তালিকা মোটামুটি এ রকম—
মাধ্যমিক অথবা উচ্চমাধ্যমিক (কিংবা সমতুল্য) পরীক্ষা পাশের মার্কশিট।
পাঠ্যক্রমের খরচের হিসাব। ওই চিঠি আপনাকে দেবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানই।
জয়েন্ট এন্ট্রান্সে উত্তীর্ণ হয়ে থাকলে, তার ‘মেরিট র্যাঙ্কিং’ সার্টিফিকেট।
অন্য প্রবেশিকা পরীক্ষার ক্ষেত্রে তাতে বাছাই হওয়ার প্রমাণ।
পড়ুয়ার প্যান কার্ড। আবেদন করার সময় না-থাকলে, তা পরে করিয়ে দিতে হবে।
ঠিকানা এবং পরিচয়ের প্রমাণপত্র।
সাধারণত পড়ুয়ার দু’কপি ছবি। কো-বরোয়ার হিসাবে বাবা-মা থাকলে, তাঁদেরও ফোটো লাগবে দু’কপি করে।
বিদেশে পড়তে যাওয়ার ঋণ পেতে উপরের নথি তো লাগবেই। সঙ্গে দিতে হবে:
(১) পাসপোর্টের প্রতিলিপি
(২) প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার চিঠি
(৩) যে-টাকা পকেট থেকে মেটাতে হবে (মার্জিন মানি), তা দেওয়ার সঙ্গতির প্রমাণ সংক্রান্ত নথি।
পাওয়ার পরিধি
গোড়াতেই বলেছিলাম, শুধু পড়ার খরচ (টিউশন ফি) জোগাড় হলেই হবে না। কারণ, থাকা-খাওয়া-যাতায়াত ইত্যাদির জন্যও অনেক টাকা (বিশেষত বিদেশে পড়ার জন্য) খরচ করতে হয় পড়ুয়াকে। সে কথা মাথায় রেখেই এ সবের জন্যও ঋণ দেয় ব্যাঙ্কগুলি। সাধারণত যে-সব খরচ মেটাতে ধার পাওয়া যায়, তার মধ্যে রয়েছে—
•পড়ার খরচ (টিউশন ফি)।
•হোস্টেলে থাকা-খাওয়ার খরচ।
•পরীক্ষার ফি।
•লাইব্রেরি ও ল্যাবরেটরির টাকা।
•যাতায়াত (বিদেশে পড়ার ক্ষেত্রে) ও তার আনুষঙ্গিক খরচ।
•ঋণ নেওয়ার সময়ে করানো বিমার প্রিমিয়াম।
•বই ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার খরচ।
•কম্পিউটার, ইউনিফর্ম ইত্যাদি কেনার খরচ।
•শিক্ষামূলক ভ্রমণ (স্টাডি ট্যুর), প্রজেক্ট, থিসিস তৈরির খরচ।
এমনকী পেতে পারেন ‘কশন ডিপোজিট’ কিংবা ‘বিল্ডিং ফান্ড’ বাবদ প্রদেয় টাকাও। তবে এ জন্য সাধারণত টিউশন-ফির ১০% হাতে পেতে পারেন। লাগবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেওয়া বিল/রিসিট-ও।

লাগতে পারে বন্ধক/গ্যারান্টর
•সাধারণত ঋণের অঙ্ক ৪ থেকে ৭.৫ লক্ষের মধ্যে হলে, কো-বরোয়ার হতে হয় অভিভাবককে। জোগাড় করতে হয় থার্ড-পার্টি গ্যারান্টরও। তবে ব্যাঙ্ক উপযুক্ত ক্ষেত্রে ইচ্ছে করলে, গ্যারান্টর না-ও চাইতে পারে।
•৭.৫ লক্ষ টাকার বেশি ঋণে অবশ্য অতিরিক্ত হিসেবে ব্যাঙ্ক চাইতে পারে সমমূল্যের সম্পত্তি, ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরের স্থায়ী আমানত, ঋণপত্র, সোনা, শেয়ার সার্টিফিকেট ইত্যাদি। অনেক সময়ে ঋণের মধ্যে কম্পিউটার কেনার খরচ ধরা থাকলে, ব্যাঙ্কের কাছে তা-ও বন্ধক রাখতে হতে পারে।

সুদ কেমন?
এক একটি ব্যাঙ্কে এক এক রকম। তবে সাধারণত ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণে বেস রেটের থেকে আরও ২% বেশি সুদ নেয় ব্যাঙ্কগুলি। ধার ৪ লক্ষ টাকা ছাড়ালে, বেস রেটের উপর আরও ২.৭৫% মতো গুনতে হবে আপনাকে। সুদ সব ক্ষেত্রেই পরিবর্তনশীল (ফ্লোটিং)। ঋণ নেওয়ার আগে সুদ কত, কোনও লুকনো খরচ আছে কি না, ইত্যাদি জেনে নিতে ভুলবেন না।

প্রসেসিং ফি
দেশে পড়াশোনার জন্য ঋণ নিলে, সাধারণত প্রসেসিং ফি দিতে হয় না। বিদেশের ক্ষেত্রে অবশ্য ০.২% প্রসেসিং চার্জ নেয় ব্যাঙ্কগুলি। তবে এ ক্ষেত্রেও ঋণ দেওয়ার পালা শেষ হওয়ার পর ফি ফেরত পাওয়া যায়।

শোধের সময়
•৭.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ শোধের জন্য সর্বোচ্চ মেয়াদ ১০ বছর। টাকার অঙ্ক আরও বেশি হলে, ১৫ বছর। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য এর হেরফের হতে পারে। সাধারণত শোধ দিতে হয় মাসিক কিস্তিতে (ইএমআই)।
•আবেদনের ভিত্তিতে অনেক সময়ে এই সময়সীমা বাড়ানো যেতে পারে। তবে তার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ম মেনে ঋণ ঢেলে সাজা জরুরি।
•মেয়াদের আগে ঋণের পুরো টাকা শোধ করে দিলেও অবশ্য জরিমানা গোনার ঝক্কি নেই।

চাকরি পেয়ে তবে শোধ
এই ঋণের মস্ত সুবিধা হল, পরের মাস থেকেই তা শোধ করার বাধ্যবাধকতা নেই। পাঠ্যক্রম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাকরি না-পেলে ধার শোধ শুরু করতে হবে এক বছর পর থেকে। চাকরি পেয়ে গেলে অবশ্য কিস্তি শুরু হবে ৬ মাস পর থেকেই।
ধার নেওয়ার পরে যত দিন পর্যন্ত তার প্রথম কিস্তি দিতে না-হয়, সেই সময়সীমাকে বলে মরেটোরিয়াম। শিক্ষা ঋণের ক্ষেত্রে মরেটোরিয়াম সাধারণত এক বছরের বেশি হয় না (ক্ষেত্র বিশেষে ব্যাঙ্ক তার হেরফের করতে পারে)। এবং এই ‘পিরিয়ড’ ধরা থাকে ধার শোধের সময়সীমার মধ্যেই। অর্থাৎ, সময়সীমা ১০ বছর হলে, মরেটোরিয়াম বাদ দিয়ে তা মেটানোর সময় পাওয়া যাবে ৯ বছর।
তবে (কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) মরেটোরিয়াম চলাকালীনও ঋণে সুদ গুনবে ব্যাঙ্ক। তার উপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হবে মাসিক কিস্তির অঙ্ক।

সুদে ছাড়
কয়েকটি ক্ষেত্রে এই সুবিধা পেতে পারেন। যেমন—
• মরেটোরিয়াম চলাকালীনই সুদ মিটিয়ে দিলে, ওই সময়ে প্রদেয় সুদের উপর এক শতাংশ ছাড় মেলে। অর্থাৎ, সুদ ১২.৫০% হলে, ওই সময়ে দিতে হবে ১১.৫০% হারে।
• ছাত্রীদের জন্য ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কম নেওয়ার ব্যবস্থা আছে।

ভর্তুকির খোঁজ নিন
পারিবারিক আয় বার্ষিক সাড়ে চার লক্ষ টাকার কম হলে, ভর্তুকির ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্র। কোর্স চলাকালীন
যে-সুদ হয়, সেই টাকা ভর্তুকি হিসেবে পেতে পারেন। তবে তার জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে (জেলা শাসক, মহকুমা শাসক ইত্যাদি) পরিবারিক আয়ের সার্টিফিকেট আদায় করতে হবে।

ধার পেতে কত দিন?
সমস্ত কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর সাধারণত ১৫ দিন থেকে ১ মাসের মধ্যে ঋণ মঞ্জুর করে ব্যাঙ্ক। আবেদন অগ্রাহ্য হলেও তা জানিয়ে দেওয়া হয় ওই সময়ের মধ্যে।

বিমার সুরক্ষা
শিক্ষা ঋণের জন্য জীবন বিমা করানো বাধ্যতামূলক নয়। তবে পড়া চলাকালীন অভিভাবকের মৃত্যু হলেও যাতে শিক্ষায় ছেদ না-পড়ে, তার জন্য ওই বিমা করানোর পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তা ছাড়া, এই বিমা করানো থাকলে, ধার দিতেও অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করে ব্যাঙ্কগুলি।

বিদেশি মুদ্রা ব্যবহারে সুবিধা
বিদেশে পড়ার ক্ষেত্রে পড়ুয়াকে অনাবাসী ভারতীয় হিসেবে ধরা হয়। সেই কারণে ডলার, পাউন্ডের মতো বিদেশি মুদ্রা ব্যবহারের আইন ফেমা-র সুবিধা পান তাঁরা। তা ছাড়া, আত্মীয়দের কাছ থেকে বছরে বিভিন্ন খরচ মেটাতে এক লক্ষ ডলার পর্যন্ত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

পরিশেষে...
এত ক্ষণ পর্যন্ত যা-আলোচনা হল, আশা করি তাতে শিক্ষা ঋণের বিষয়টি কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে আমাদের কাছে। কিন্তু মনে রাখবেন, এখানে যে যে তথ্য দেওয়া হল, তা বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া। তাই আপনি যেখানে খোঁজ নিচ্ছেন, সেই ব্যাঙ্কে সুদের হারে হয়তো কিছুটা হেরফের হতে পারে। খানিকটা আলাদা হতে পারে নিয়ম কিংবা শর্তাবলি। তাই নিজে ব্যাঙ্কে ঢুঁ মারুন। পারলে একাধিক ব্যাঙ্কে গিয়ে যাচাই করুন সুযোগ-সুবিধার তালিকা। ধার যখন নিচ্ছেনই, একটু দেখে-শুনে নিতে দোষ কোথায়?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.