তদন্তের দাবি নয় বা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বলার কথা নয়। বরং তিন তৃণমূল কর্মী খুনে প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ অমিতাভ নন্দীকে ‘সরাসরি দায়ী’ করে, তাঁকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়ে বিতর্কে জড়ালেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
সোমবার রাতে হাবরার বেড়গুম এলাকায় তৃণমূল কার্যালয়ে আগুন লাগানোর ঘটনাকে ঘিরে এই গোটা বিতর্কের সূচনা। রবিবারই ওই কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন খাদ্যমন্ত্রী। উদ্বোধনের জন্য যে তোরণ ও মুখ্যমন্ত্রীর কাটআউট লাগানো হয়েছিল, তার একাংশও পুড়িয়ে দেওয়া হয় শনিবার রাতে। এর আগে ৪ জানুয়ারি রাতেও হাবরার ফুলতলায় ভস্মীভূত হয় একটি তৃণমূল কার্যালয়। বেড়গুমের মঙ্গলবার পুলিশের কাছে দলের তরফে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপারকে নিজের বিধায়ক প্যাডে ওই চিঠি লেখেন খাদ্যমন্ত্রী। সেই চিঠিতেই অমিতাভবাবু-সহ দুই সিপিএম নেতাকে গ্রেফতারের দাবি করেছেন জ্যোতিপ্রিয়বাবু। |
মন্ত্রীর এই চিঠি আসলে পুলিশের উপরে ‘চাপ’ সৃষ্টির কৌশল বলেই মনে করছেন জেলা সিপিএম নেতারা। তাঁদের ক্ষোভ, “ভাঙড়ে আমাদের আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা প্রকাশ্যে মার খেলেন। ঘটনার ৭২ ঘণ্টা পরেও ধরা পড়লেন না অভিযুক্ত প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলাম। বামনঘাটায় সিপিএম কর্মীদের লক্ষ করে গুলি চালানোয় ফের নাম জড়িয়েছে ওই তৃণমূল নেতার। তদন্ত হল না। তৃণমূলের মন্ত্রীরা বিনা বিচারে বলে দিচ্ছেন, ‘আরাবুলই আক্রান্ত’। অথচ, আমাদের প্রাক্তন সাংসদকে ‘সরাসরি খুনের ঘটনায় জড়িত’ দাবি করে তাঁকে ধরার দাবি করছেন খাদ্যমন্ত্রী। এ কেমন দ্বিচারিতা?”
খাদ্যমন্ত্রীর ওই চিঠিতে অমিতাভবাবু ছাড়াও নাম রয়েছে হাবরার বেড়গুম ১ পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান, সিপিএম নেতা অসীম ঘোষের। জ্যোতিপ্রিয়বাবু চিঠিতে দাবি করেছেন, গোপালনগর, হাড়োয়া এবং মিনাখাঁর তিন তৃণমূল কর্মী খুনের জন্য অমিতভাবাবু ‘সরাসরি দায়ী’। অন্য দিকে, সোমবার রাতে বেড়গুম ১ অঞ্চল তৃণমূল কার্যালয়ে আগুন লাগানোর ঘটনায় সিপিএম নেতা অসীমবাবু জড়িত বলে খাদ্যমন্ত্রী অভিযোগ তুলেছেন নিজের চিঠিতে। সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, “বিচারের আগেই কী করে খাদ্যমন্ত্রী এ কথা বলতে পারেন?”
খাদ্যমন্ত্রীর নিজের ব্যাখ্যা, “খাদ্যমন্ত্রী হিসাবে নয়, অভিযোগটা আমি বিধায়ক এবং তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক হিসাবে করেছি। আমরা নিশ্চিত, অমিতাভ নন্দী ও অসীম ঘোষ এই ঘটনায় জড়িত।” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “এই জেলায় আমাদের ছ’টি পার্টি অফিসে ও একটি তোরণে অগ্নিসংযোগ এবং তিনটি খুনে অমিতাভ নন্দীর ইন্ধন রয়েছে।” মঙ্গলবার সরকারি কাজে বাইরে ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সুব্রত সেন। তাঁর বক্তব্য, “ফিরে সব দেখে তবে মন্তব্য করব।”
অমিতাভবাবুর বক্তব্য, “দলীয় কার্যালয় পোড়ানো আমাদের রাজনীতি নয়। তা ছাড়া, এখন আমাদের আক্রমণের নয়, বরং আত্মরক্ষার সময়। তৃণমূলের সমস্ত নেতা, মন্ত্রী উন্মাদ হয়ে গিয়েছেন! আমি দিনরাত প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছি। ইচ্ছে হলেই তাঁরা আমাকে গ্রেফতার করতে পারেন।” |