একাধিক বৈঠকেও অধরা সমাধানসূত্র
সেতুর জন্য জমি দিয়েও ক্ষতিপূরণে বঞ্চিত চাষিরা
দীর উপর সেতু তৈরির জন্য কৃষিজমি অধিগ্রহণ করা হলেও সেই বাবদ ক্ষতিপূরণ পাননি কৃষকেরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মথুরাপুর-২ ব্লকে মৃদঙ্গভাঙা নদীর উপরে নন্দকুমার পঞ্চায়েতে মহম্মদনগর বলেরবাজার ও পাথরপ্রতিমা ব্লকের লক্ষীজনার্দনপুর পঞ্চায়েতের পূর্ব দ্বারিকাপুর আদিবাসীপাড়ার মধ্যে সংযোগকারী ওই সেতুর অনুমোদন হয়েছিল ২০১০ সালে। সাড়ে সাতাশ মিটার লম্বা সেতুটির কাজ ওই বছরেই মহম্মদনগর থেকে শুরু হয়। কয়েক মাস কাজ চলার পর উল্টোদিকের আদিবাসীপাড়ায় সেতুর কাজ শুরু করতে গিয়ে দরকার হয় জমির। সেই সময় জেলা প্রশাসনের তরফে বাসিন্দাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অধিগ্রহণ করা হয় প্রায় ১০ বিঘা দো-ফসলি জমি। কিন্তু আজ পর্যন্ত ক্ষতিমূরণ পাননি জমিদাতারা। তাঁদের অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে বারবার প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও আজ পর্যন্ত কোনও টাকাই মেলেনি।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, দ্বারকাপুর আদিবাসীপাড়ায় যে ১৪টি পরিবারের জমি সেতুর জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তাঁদের জমির বৈধ কাগজপত্র ছিল না। কিন্তু ওই পরিবারগুলি বহু বছর আগে জঙ্গল কেটে ওই এলাকায় বসবাস শুরু করেছিল। তাই তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, পরিবারগুলি যেন যথাযথ ক্ষতিপূরণ পায়। এ বিষয়ে ২০১০ সালের ৯ এপ্রিল প্রথম যে সভা ডাকা হয়, তাতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পেলেই যে জমি দেওয়া হবে সেই সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
মৃদঙ্গভাঙা নদীর উপরে এই সেতুর জন্যই জমি অধিগ্রহণ করা হয়। —নিজস্ব চিত্র।
কিন্তু তাতে সুরাহা না হওয়ায় ফের ওই বছরেই ১৮ জুন প্রশাসনের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে সভা হয়। সেখানে লিখিত সিদ্ধান্ত হয় যে, ওই জমির মালিকেরা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে তাঁদের জমির মালিকানা নথিবদ্ধ করবেন এবং সেই সঙ্গে সরকারি ক্ষতিপূরণ বিধি অনুযায়ী ‘আমার বাড়ি’ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহনির্মাণের সুবিধা পাবেন।
এর পর ২০১১ সালের মে মাসে রাজ্যে নতুন সরকার আসে। কিন্তু জমিদাতা ওই চাষিরা এখনও ক্ষতিপূরণ বাবদ কিছুই পাননি। বাধ্য হয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা কাজ বন্ধ করে দেন। ২০১১ সালের ১৩ অক্টোবর সেতুর নির্মাণকারী সংস্থার প্রতিনিধি, সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রীর প্রতিনিধি-সহ এলাকার প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে আবার সভা হয়। সেই সভায় ১৫ দিনের মধ্যে সমস্ত কৃষকের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু তার পরেও ক্ষতিপূরণ না মেলায় ফের বন্ধ হয়ে যায় কাজ। ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সরকারি আধিকারিক এবং জমির মালিকপক্ষকে নিয়ে আলোচনা সভা হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, গীতাঞ্জলি প্রকল্পের মাধ্যমে ওই সব জমিদাতাদের ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে এবং নদীর চর ভরাট করে সমপরিমাণ কৃষিজমি প্রদান করা হবে। কিন্তু তারপরেও কিছুই জোটেনি জমিদাতাদের ভাগ্যে। বার বার প্রশাসনের টালবাহানায় ক্ষিপ্ত জমিদাতারা আন্দোলনে নামতে উদ্যোগী হয়েছেন। তৈরি করেছেন পূর্ব দ্বারিকাপুর আদিবাসী ভূমিরক্ষা কমিটি।
কমিটির সম্পাদক রবীন্দ্র সর্দারের বক্তব্য, “আমরা দীর্ঘ ৫০-৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে জঙ্গল কেটে এখানে বাস করছি। কিন্তু সচেতনার অভাবেই কখনও জমির কাগজপত্র তৈরি করিনি। তাই আমাদের জমির কোনও নথিপত্র নেই।” পাশাপাশি তাঁর দাবি, জঙ্গল কেটে ওই এলাকাকে বসবাস যোগ্য করে তোলায় জমির উপরে তাঁদের অধিকার রয়েছে। তিনি বলেন, “আগের সরকার বলেছিল প্রত্যেকের নামে নথিভুক্ত করে ক্ষতিপূরণ দেবে। কিন্তু রাজ্যে সরকার বদলের পরে সব নিয়ম বদলে গেল। জোর করে দুঃস্থ, আদিবাসী পরিবারগুলির জমি দখলের ব্যবস্থা হচ্ছে।” কমিটির আর এক সদস্য কানাই দাস বলেন, “রাজ্য সরকার দ্বিচারিতা করছে। বাম আমলে কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী থাকাকালীন জমি নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বর্তমান সরকারের মন্ত্রীর প্রতিনিধিরা জমির কাগজপত্র দেখতে চাইছেন। জমি চলে গেলেও কানও ক্ষতিপূরণ পাচ্ছি না। শীঘ্রই কমিটির বৈঠকে আমাদের আগামী দিনের কর্মপদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হবে।”
চাষিদের ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার প্রসঙ্গে প্রাক্তন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “ওই পরিবারগুলি দীর্ঘ দিন ধরে ওখানে বাস করছে। তাই আমি বিভাগীয় আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছিলাম, জমির মালিকানার ব্যবস্থা করে যাতে ওই চাষিরা ক্ষতিপূরণ পান সে ব্যাপারে উদ্যোগী হতে।”
পাথরপ্রতিমার তৃণমূল বিধায়ক সমীর জানা বলেন, “ওই পরিবারগুলির মধ্যে তিন জন ছাড়া কারও কাছে জমির বৈধ কাগজপত্র নেই। তবে সকলের জন্য গীতাঞ্জলি প্রকল্পে গৃহনির্মাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গেই চরে মাটি ফেলে তা কৃষিজমিতে পরিণত করে ওঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।”
সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, ‘‘ওই সেতুর জন্য জমির সমস্যা মেটাতে দফতরের আধিকারিকদের এলাকা পরিদর্শনে যেতে বলেছি। শীঘ্রই এই বিষয়ে বৈঠক করা হবে।” চাষিদের এখনও ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, “জমির বৈধ কাগজ না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। তবে সমস্ত বিষয়টিই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আশা করি সমস্যা মিটিয়ে সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করা যাবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.