দার্জিলিঙের এক চা বাগানের মালিক সম্প্রতি ঋণদানকারী একটি সংস্থার ইমেল পান। ব্যবসার প্রয়োজনে কয়েক লক্ষ টাকা তাঁকে ঋণ পাইয়ে দেওয়া হতে পারে বলে জানানো হয়। তিনিও জবাব দিয়ে প্রয়োজনীয় নথি-সহ আবেদন করেন। এর পরেই তাঁকে নির্দিষ্ট একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রায় ৭০ হাজার টাকা ‘প্রসেসিং ফি’ বাবদ জমা করতে বলা হয়। সন্দেহবশত বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে তিনি বুঝতে পারেন পুরোটাই ভুয়ো। একইভাবে মাটিগাড়ার এক স্কুল শিক্ষক এসএমএসে লটারি জেতার খবর শুনে, একই প্রসেসিং ফি বাবদ মুম্বইয়ের একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা জমা করেন। পরে ফের টাকা দাবি করা হলে তাঁর সন্দেহ হওয়ায় তিনি বুঝতে পারেন যে প্রতারিত হয়েছেন।
এ ভাবেই প্রতিদিন রাজ্যের তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দাদের তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে প্রতারিত করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে একটি অসাধু চক্র। শুধু তাই নয়, দেশের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) নাম, ভুয়ো ওয়েবসাইট ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রতারণার ঘটনা ঘটে চলেছে বলে অভিযোগ পেয়েছে আরবিআই অফিসারেরা। গুরুত্ব বিচার করে এবার ময়দানে নেমেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা বিভাগ। আরবিআই-এর এক উচ্চ পদস্থ অফিসার বলেন, “দেশের সব রাজ্যের সঙ্গে এই রাজ্যেই প্রচার অভিযানে নেমেছে আরবিআই। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, পুলিশ, ব্যবসায়িক সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করে এই ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি তা জানানো হচ্ছে।”
আরবিআই সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে শিলিগুড়িতেও একই ধরনের বৈঠক করে গিয়েছেন আরবিআই-র আধিকারিকেরা। বৈঠকে উপস্থিত ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “আমাদের সদস্যের মধ্যে বিষয়গুলি নিয়ে সতর্ক থাকার জন্য প্রচার করছি।” এসবিআই-র উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, “বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। আমরা আরবিআই-র অফিসারদের বিষয়টি নিয়ে তথ্য প্রযুক্তি, টেলিকম রেগুলেটরি অথারিটির সঙ্গে কথা বলতে বলেছি।” এই ব্যাপারে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার আনন্দ কুমার বলেন, “আমরা অভিযোগ পেলেই তদন্তে নামি। সিআইডি’র সাহায্য নেওয়া হয়। বাসিন্দারা সতর্ক হলে এই প্রবণতা অনেকটাই কমানো সম্ভব।” আরবিআই সূত্রে খবর, বিভিন্ন ব্যক্তি, ঋণদানকারী সংস্থা, শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের নাম করে টাকা তোলা হচ্ছে। সেখানে ঋণের প্রস্তাব, লটারি জেতা, চাকরি, বৃত্তির সুযোগ, বিদেশি মুদ্রায় অর্থপ্রাপ্তির টোপ মূলত দেওয়া হচ্ছে।
|
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পদক্ষেপ |
১) প্রতারিত হলে rbi.org.in ওয়েবসাইটে কী করতে হবে জানা।
২) বিভিন্ন জায়গায় প্রচার।
৩) স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, মেলা, পুজোয় তথ্য সম্পর্কিত পুস্তিকা বিলি।
৪) ‘জাগো গ্রাহক জাগো’ কর্মসূচির অধীনে বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা।
৫) রাজ্য পুলিশের সাইবার সেলের সঙ্গে সমন্বয় সাধন।
৬) সিআইডি’র ডিআইজি অপারেশনের দফতরে অভিযোগ।
৭) প্রতারণার তথ্য আরবিআই-এর দফতরে নথিভুক্ত করা। |
|