রবিবার সকালে ইট বোঝাই একটি ট্রাকের চাপে ভেঙে পড়ল জলপাইগুড়ির ধরলা সেতু। শহরে হাসপাতাল পাড়া এবং সেনপাড়ার সংযোগস্থলে ধরলা নদীর ওপর কংক্রিটের সেতুটি মাঝ বরাবর ভেঙে গিয়েছে। এই ঘটনায় এক মহিলা-সহ তিন ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাঁরা সকলেই লাগোয়া এলাকার বাসিন্দা। এ দিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ সেতুটি ভেঙে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রায় তিন দশক আগে সেতু তৈরির পরে আর কোনও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। ভারী যানবাহন চলাচলের চাপে সেতুটিতে বেশ কয়েকটি ফাটলও তৈরি হয়। সেতুটি দুর্বল হয়ে পড়লেও যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ না করাতেই এই ঘটনা ঘটেছে। সেতুটি ভেঙে পড়ায় হাসপাতাল পাড়া থেকে সেনপাড়া রায়কত পাড়ার যোগাযোগ বন্ধ। |
১৯৬৮ সালের জলপাইগুড়িতে বন্যার পরে করলার শাখা নদী ধরলার উপরে এই সেতুটি তৈরি করা হয় বলে জানা গিয়েছে। বর্তমানে সেতুটি জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। বছরখানেক আগে পুরসভার তরফে সেতুর দুই দিকে ‘দুর্বল সেতু’র সাইনবোর্ড লাগানো হলেও কিছু দিন পরে বোর্ডটিই উধাও হয়ে যায় বলে অভিযোগ। তবে কোনও সময়েই সেতু দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়নি বলে বাসিন্দাদের দাবি। তুলনামূলক ভাবে ছোট রাস্তা হলেও তাড়াতাড়ি পৌছনোর জন্য ছোট বড় গাড়ি যেমন সেতুটি দিয়ে চলাচল করত তেমন পণ্যবাহী ট্রাকও শহরের যানজট এড়ানোর জন্য শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের গলিপথে যাতায়াত করে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনও ইট বোঝাই ট্রাকটি সেতুর ওপরে উঠতেই বিকট শব্দ করে সেতুটি হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। এলাকার বাসিন্দা অর্ণব পাল বলেন, “সকালে সবে ঘুম ভেঙেছে। হঠাৎই প্রচণ্ড শব্দ শুনে বাইরে বেরিয়ে দেখি সেতুটি ভেঙে পড়েছে।” সেতুর ওপর দিয়ে প্রাতর্ভ্রমণ করছিলেন পরিতোষ সাহা। তিনি বলেন, “আমি তখন সেতুর উপরেই ছিলাম। ট্রাকটি উঠতেই সেতুটি দুলতে শুরু করে। হকচকিয়ে গিয়ে পিছন দিকে আমি লাফ দিয়ে সেতু থেকে সরে যাই। নিমিষে সেতুটি মাঝবরাবর ভেঙে পড়ে। সেতুর মধ্যে থাকা আরও দুই জন গড়িয়ে নীচে পড়ে যান। তবে নদীতে তেমন জল না থাকায় কারও তেমন কোনও রকম আঘাত লাগেনি।”
এ দিকে, সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার তা নিয়েই শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। পুর এলাকার সেতুর দায়িত্ব সাধারণত সংশ্লিষ্ট পুর কর্তৃপক্ষ অথবা পূর্ত দফতর কিংবা জেলা পরিষদের উপরেই থাকে। তবে ধরলা সেতুটি কার দায়িত্বে রয়েছে এ দিন দিনভর তা নিয়েই জল্পনা তৈরি হয়েছে প্রশাসনিক মহলে। পূর্ত দফতর সূত্রে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেতুটি তাঁরা তৈরি করেননি। সেতু সম্পর্কিত কোনও নথিও তাদের কাছে নেই। জলপাইগুড়ি পুরসভাও জানিয়েছে, সেতুটি পুরসভার রেকর্ডে নেই। এ কথা জানিয়েছে জেলা পরিষদও। পুর চেয়ারম্যান মোহন বসু বলেন, “নথিতে সেতুর উল্লেখ নেই। জেলা পরিষদের আগে ডিস্ট্রিক্টবোর্ড ছিল। তাঁরাই হয়তো তৈরি করে থাকবেন। যাই হোক পুর এলাকার সেতুটি নতুন ভাবে তৈরি করতে পুরসভা উদ্যোগী হবে।” |