শান্তির দাবি ম্লান গোয়েন্দা-বয়ানে
মাওবাদী স্কোয়াডে এখনও ঝুঁকে জঙ্গল-যৌবন
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায়ই দাবি করেন, জঙ্গলমহল এখন হাসছে। তাঁর বক্তব্য, সেখানে এখন উন্নয়নের জোয়ার বইছে এবং মাওবাদীরা কোনও হিংসাত্মক কার্যকলাপও চালাতে পারছে না।
কিন্তু রাজ্যের গোয়েন্দাদের খবর, সেই ‘সদা হাস্যমুখর’ জঙ্গলমহল থেকেই গত তিন মাসে অন্তত ৩০ জনকে নিজেদের অ্যাকশন স্কোয়াডে নিয়োগ করেছে মাওবাদীরা। ওই ৩০ জনের মধ্যে আছেন কিছু তরুণীও। নতুন সদস্যেরা ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার চাকুলিয়ার জঙ্গলে অস্ত্র-প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, ‘পার্টি ক্লাস’ করছে বলেও জেনেছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের দাবি, শিমুলপাল ও বাঁশপাহাড়িতে নতুন স্কোয়াড-সদস্যদের ল্যান্ডমাইন পোঁতার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
২০০১ থেকে ২০১১। টানা ১১ বছর জঙ্গলমহলে মাওবাদী হিংসায় তিনশোরও বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পরে, ২০১২-য় পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদীদের হাতে এক জনও খুন হননি বলে সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু রাজ্যের পুলিশকর্তাদের একাংশ বলছেন, এই তথ্যের ভিত্তিতে দাবি করা চলে না যে, জঙ্গলমহলে স্থায়ী ভাবে শান্তি ফিরে এসেছে।
মাওবাদীদের দলে সদ্য নাম লেখানো ওই তরুণ-তরুণীরা কারা?
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ওই নতুন মাওবাদীদের অধিকাংশই ঝাড়গ্রাম ও সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা। আর তরুণীদের বেশির ভাগই গিয়েছে লালগড় এলাকা থেকে। গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, লালগড়ের ঝিটকা ও কাঁটাপাহাড়ির মতো এলাকা থেকে মাওবাদীরা নতুন সদস্য পেয়েছে। তাদের অধিকাংশেরই বাড়ির লোক অবশ্য পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, ভাল মাইনেতে নুন ও ডালের কারখানায় কিংবা রাজমিস্ত্রির কাজ পেয়ে তারা ভিন্ রাজ্যে গিয়েছে।
আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) গঙ্গেশ্বর সিংহ বলেন, “মাওবাদীদের দলে নাম লেখানো নতুনদের ব্যাপারে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। কোন কোন গ্রামের কোন ছেলে বা মেয়ে মাওবাদীদের সঙ্গে গেল, কেন গেল, সেটা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে।”
কিন্তু জঙ্গলমহলে যদি উন্নয়নের জোয়ার এসে থাকে এবং শান্তি বিরাজ করে, তা হলে ওই তরুণ-তরুণীরা কোন অভাব বা হতাশা থেকে মাওবাদীদের সঙ্গে যোগ দিল?
জঙ্গলমহলের মানুষ এ ব্যাপারে মুখ খুলবেন না, এটাই স্বাভাবিক। তবে শাসক দল তৃণমূল এবং প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের বক্তব্য থেকে এই প্রবণতার কিছুটা ব্যাখ্যা মেলে। তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “উন্নয়ন কিংবা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অনেক পিছনে থাকা জঙ্গলমহলের অবস্থা রাতারাতি বদলে দেওয়া যে সম্ভব নয়, এলাকার মানুষও তা জানেন। কিন্তু আমাদের দলেরই স্থানীয় বিধায়ক ও নেতাদের একাংশ সিপিএমের কায়দায় পুলিশকে বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করছেন। অনেক ক্ষেত্রে নিরীহ মানুষও হয়রান হচ্ছেন। তারই সুযোগ নিচ্ছে মাওবাদীরা।”
কী রকম হয়রানি?ওই তৃণমূল নেতা জানান, নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে চন্দ্রি থেকে এক সিপিএম নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ দাবি করল, তাঁর ঘরে মাওবাদী পোস্টার পাওয়া গিয়েছে। অথচ তিনি মাওবাদীদের হাত থেকে সিপিএমের এলাকা পুনর্দখলের লড়াইয়ের সময়ে সশস্ত্র হার্মাদদের একটি শিবিরের নেতৃত্বে ছিলেন। শাসক দলের ওই নেতা বলেন, “সিপিএমের ওই নেতার ঘরে মাওবাদী পোস্টার পাওয়ার দাবি হাস্যকর। মানুষ এ-সব ভাল ভাবে নিচ্ছে না।” সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ডহরেশ্বর সেন বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানো হচ্ছে। আবার আমরা অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ এফআইআর নিচ্ছে না।”
পুলিশ এমনটা করছে কেন? আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) বলেন, “পুলিশ কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। সেই সব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
ঝাড়গ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা অবশ্য পুলিশি হয়রানির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমার কাছে এই ধরনের কোনও খবর নেই। জঙ্গলমহলে এখন যে-সব গোলমাল হচ্ছে, সে-সবের পিছনে রয়েছে সিপিএমের হার্মাদেরা।”
অর্থাৎ গোলমাল যে এখনও হচ্ছে, মন্ত্রীও তা অস্বীকার করতে পারছেন না। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, অসন্তোষ যাতে আর না-বাড়ে, সেই উদ্দেশ্যে ৫ জানুয়ারি মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর সভামঞ্চে জাগরী বাস্কের মতো আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের কয়েক জনকে আনতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। যাতে তাঁদের মাধ্যমে সরকারের ‘সদিচ্ছা’র বিষয়ে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.