উৎসবের ছুটিতেও আতঙ্কে ওডাফা
ই লিগ থেকে নির্বাসিত। সামনে কোনও আলো নেই। কলকাতা লিগের ম্যাচ কবে হবে কেউ জানে না। ওডাফা-টোলগেদের তাই ছুটিই দিয়ে দিলেন করিম বেঞ্চারিফা। ফুটবলের ভরা মরসুমে টানা তিন দিন ছুটি। “ফুটবলাররা ভীষণ ভেঙে পড়েছে। এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে ওদেরও কিছুটা সময় লাগবে। সামনে কোনও ম্যাচ নেই। তাই ছুটি দিয়েছি। এতে ফুটবলাররা মনস্তাত্বিক দিক দিয়ে কিছুটা চাঙ্গা হবে।”
কিন্তু বর্ষশেষে উৎসবের ছুটি কাটাবেন কী, মোহনবাগান ফুটবলারদের যা অবস্থা তাতে তাঁদের খেলোয়াড় জীবনই তো এখন প্রশ্ন চিহ্নের সামনে। মানসিক ভাবে ফুটবলাররা এতটাই বিধ্বস্ত যে তাদের কাছে এই ছুটিটা যেন অর্থহীন। পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে উৎসবে মেতে ওঠার কথা ছিল বাগান অধিনায়কের। কিন্তু ফুটবল-জীবনটাই যে হঠাৎ এলোমেলো হয়ে গিয়েছে! একদিকে ক্লাব আই লিগে খেলতে পারবে কী না তা নিয়ে চিন্তা, অন্যদিকে তাঁর উপর সাসপেনশনের খাঁড়া ঝুলছে। দিল্লিতে ফেডারেশন কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ৯ জানুয়ারি আই লিগ কোর কমিটির সভায় বড় শাস্তির সামনে পড়তে চলেছেন নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার। তাই এই মুহূর্তে পুরো ব্যাপারটাই বিবর্ণ ওডাফার কাছে। বলছিলেন, “ফুটবল খেলতে না পারলে ছুটির মূল্য থাকে না!” নির্মল ছেত্রীও বললেন, “কিছু ভাল লাগছে না। সবটাই কেমন ওলট-পালট হয়ে গেল। জানি না শেষ পর্যন্ত কী হবে।”
অক্ষেপ ঝরছিল জুয়েল রাজার কথায়। বলছিলেন, “এই ছুটি নিয়ে কী লাভ! ইস্টবেঙ্গল ম্যচ খেলছে, জিতে যাচ্ছে। আর আমরা বসে টিভি’তে খেলা দেখছি।” রাকেশ মাসির গলাতেও এক সুর।
নবির বয়ান
ক্লাব নির্বাসিত হওয়ায় আমি মর্মাহত। ডার্বি ম্যাচে বিরতির পর না খেলার জন্য আমার আঘাত অনেকাংশে দায়ী। ফুটবলার ও ফুটবলপ্রেমীদের কথা ভেবেই মোহনবাগান এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। শুনেছি, ছোড়া পাথরের সামান্য স্থান পরিবর্তন ঘটলে আমার মৃত্যু অনিবার্য ছিল। দুঃখের সঙ্গে বলছি, আমি মারা গেলে হয়তো সতীর্থদের পা থেকে হারিয়ে যেত না ফুটবল। আই লিগে না খেলতে পারার মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় জানা নেই। জানতে ইচ্ছে করছে, আমার মৃত্যু কি সতীর্থদের সঙ্গে বাঁচিয়ে দিত জাতীয় ক্লাবের শাস্তিকেও?
বললেন, “যদি আই লিগের ম্যাচগুলো খেলে প্রতিপক্ষদের হারাতে পারতাম, তবে বছর শেষের ছুটিতে চুটিয়ে আনন্দ করতাম। কিন্তু ফুটবলকে বাদ দিয়ে আনন্দের কোনও জায়গাই নেই।”
মোহনবাগান ফুটবলারদের অনেকের সামনে হঠাৎই অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে জীবনটা। ইস্টবেঙ্গল যখন কল্যাণীতে আই লিগের ম্যাচে অ্যারোজকে হারিয়ে জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা, তখন মোহনবাগান ফুটবলাররা বাড়িতে বসে মাঠে নামার জন্য ছটফট করছেন। কবে আবার ম্যাচ খেলবেন সেটা যে জানা নেই। অনুশীলনে ফুটবলারদের কী ভাবে উদ্দীপ্ত করবেন করিম, সেটা নিজেও জানেন না।
সেই কারণেই বোধহয় মোহনবাগান তাঁবুতে এ বার ফুটবলের বদলে অফিস স্পোর্টসের পিকনিকের সুরটা একটু বেশি চড়া!
মোহনবাগান ফুটবলার আর সদস্য-সমর্থকদের যন্ত্রণা চাপা পড়ে যাচ্ছে পিকনিক পার্টির বাজানো আধুনিক হিন্দি সিনেমার গানের আড়ালে। রবিবার মোহনবাগান ক্লাবকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন ব্রিগেড। ওডাফা, টোলগে, নবিরা যে মাঠে অনুশীলন করেন সেখানেই চলছিল উইকেট পুঁতে ক্রিকেট ম্যাচ, ব্যাডমিন্টন খেলা। পাশাপাশি জমিয়ে খাওয়াদাওয়া—কিছুই বাদ নেই! মোহনবাগান থেকে শুধু বাদ পড়ে গেছে ফুটবলটাই। আর এই পিকনির পার্টির ভিড়েই যেন হারিয়ে গিয়েছে বাগানের ফুটবলার আর ফুটবল সমর্থকেরা। প্রধান ফটকের সামনে পুলিশ দাঁড় করিয়ে ক্ষুব্ধ সমর্থকদের আটকানোর চেষ্টা চলছে। গেটে বেসরকারি রক্ষী। তাঁবুর সামনের চেয়ারগুলো খাঁ খাঁ করছে। ফেডারেশনের এক চিঠির ধাক্কায় সব যেন মরুভূমি। এর মধ্যেই আবার স্পনসরদের নিয়ে নানা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। মোহনবাগান নির্বাসনে গিয়ে আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনে খেললে ইউ বি ওডাফাদের ক্লাবকে টাকা দেবে কী না তা নিয়েই আলোচনা সর্বত্র।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.