লাগল মোটে দু’দিন। আর তাতেই আশার বাইশ গজ জুড়ে প্রকট নিরাশা, বিভ্রান্তির দীর্ঘ ছায়া। রেশ এতটাই যে, দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে বাড়িমুখো বাংলা অধিনায়ক ঋদ্ধিমান সাহা বলে গেলেন, “আপাতত জেতার কথা ভাবছি না।”
ইডেনে হায়দরাবাদ ম্যাচ জেতার পরেই জেগেছিল সেই আশা। ঘরের মাঠে সঞ্জয় বাঙ্গারের রেলকে ‘পাঞ্চিং ব্যাগ’ বানিয়ে পয়েন্ট টেবলে নিজেদের ভদ্রস্থ জায়গায় নিয়ে যাওয়া যাবে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে প্রথম দিন সেই আশা যদি ক্যাচ ফেলার কুয়াশায় ঢেকে গিয়ে থাকে, রবিবার তা ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চলে গেল ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়। দলে সাত ব্যাটসম্যান। অথচ রেলওয়েজের প্রথম ইনিংসের ২১৪ রানও চিনের প্রাচীরের মতোই ঠেকল। অবিবেচকের মত ব্যাট চালিয়ে ঋদ্ধিদের প্রথম ইনিংস শেষ হল ১৫৭ রানে। সঞ্জয় বাঙ্গারের দল এগিয়ে থাকল ৫৭ রানে। দ্বিতীয় ইনিংস ব্যাট করতে নেমে রেলওয়েজ ২০-০। এ দিন প্রথম বলেই রঞ্জিত মালিকে ফিরিয়ে দিয়ে রেলের ইনিংসে দাঁড়ি টেনে দেন সৌরভ সরকার। এর পরেই ‘লং মার্চ’ শুরু বাংলার ব্যাটিং ব্যর্থতার। লাঞ্চের আগেই স্কোরবোর্ডে ৩৬-২। ড্রেসিংরুমে দুই ওপেনার রোহন (১০) এবং অরিন্দম (১৭)। এই ম্যাচে অভিষেক হওয়া সন্দীপন দাসের (১০) সঙ্গে সুদীপ চট্টোপাধ্যায় (৩৮) সবে খেলাটা ধরতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু রেলের দুই মিডিয়াম পেসার কৃষ্ণকান্ত (৩-৩০) এবং রঞ্জিত (৩-৩৯) এই সময় বুদ্ধি করে বলটা ঠিক জায়গায় রেখে গেলেন। দিনের শেষে কৃষ্ণকান্ত হাসতে হাসতে বলে গেলেন, “বাংলার ব্যাটসম্যানরা তাড়াহুড়ো করায় লাভ হল আমাদের।” আর এই ‘তাড়াহুড়ো’তেই লাঞ্চের পর দশ ওভারের মধ্যেই বাংলা ৯১-৪।
কিন্তু তার পরেও ঋদ্ধিমান, অভিষেক ঝুনঝুনওয়ালাদের সঙ্গে শেষ আশাটি বেঁচে ছিল। কিন্তু সেই আশার ওপর দিয়ে স্টিম ইঞ্জিন চালিয়ে দিলেন উইকেট টু উইকেট বল করে যাওয়া রেলের লেগ স্পিনার করণ শর্মা (৪-২২)। তাঁকে খেলতে গিয়ে দায়িত্বহীনের মতো উইকেট ছুড়ে দিয়ে এলেন ঋদ্ধি (২১), অভিষেকরা (৪৭)। রান পাননি দেবব্রত দাসও (১)। খেলা শেষে ঋদ্ধির সাফাই, “কোন সময়ে কোন শটটা খেলতে হবে তা নির্বাচনে ভুল করার খেসারত দিতে হল।”
বাংলার এই ব্যাটিং ভরাডুবি বিরক্তি বাড়াচ্ছে নির্বাচকদেরও। নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য ইন্দুভূষণ রায় এ দিন মাঠ ছাড়ার আগে বলে গেলেন, “ফের সেই ব্যাটিং ফ্লপ। মনোজ, লক্ষ্মীরা নেই। এই পরিস্থিতিতে কেউ যদি দায়িত্বশীল ইনিংস না খেলে তা হলে কবে খেলবে? আইপিএল-এ এরা ভাল খেলে কিন্তু রঞ্জিতে ২১৪ রান পেরোনো যাচ্ছে না!” বাংলা শিবির অবশ্য ছক কষছে আড়াইশোর মধ্যে সঞ্জয় বাঙ্গারের দলকে বেঁধে রেখে একটা পালটা লড়াই দেওয়ার। কিন্তু, যারা ২১৪ টপকাতেই থরহরিকম্প তাঁরা আড়াইশো প্লাস টপকাবে কী ভাবে? শুনে ঋদ্ধি বলছেন, “এখনও দু’দিন রয়েছে। এত তাড়াতাড়ি হার-জিতের অঙ্ক তৈরি হয় না।”
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রেলওয়েজ ২১৪ ও ২০-০
বাংলা ১৫৭ (অভিষেক ৪৭,
সুদীপ ৩৮,
করণ শর্মা ৪-২২) |