সৌজন্যে সরকারি বিধি
ঠাঁই হয়নি হোমে, দু’বছর ধরে শিশু হাসপাতালেই
রকারি নিয়মের জাঁতাকলে পড়ে দু’বছর ধরে কোনও হোমে জায়গা হচ্ছে না ছোট্ট ঝিল্লির। তার ঠিকানা, হাওড়া জেলা হাসপাতাল। ক্রমশ স্কুলে যাওয়ার বয়স হচ্ছে। দরকার পড়ছে সমবয়সী বন্ধু এবং একটি সুস্থ পরিবেশের। কিন্তু আদৌ ঝিল্লির তা জুটবে কি না, জুটলেও কবে, জানেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কারণ, তাঁদের কোনও আশ্বাস দিতে পারেননি সমাজকল্যাণ বিভাগের কর্তারা। ফলে রোগী, রোগ, ওষুধ, গজ, ব্যান্ডেজের মাঝখানেই শৈশব আটকে ঝিল্লির।
আড়াই বছরের ঝিল্লি অনাথ নয়। তার মা রয়েছেন। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ঝিল্লির মা জারিনা মানসিক ভারসাম্যহীন। হাওড়া জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঝিল্লি পুরোপুরি সুস্থ। কিন্তু নিয়মের জেরে তাকেও থাকতে হচ্ছে একই হাসপাতালের শিশুবিভাগে। যে শিশুর মা রয়েছে, তাকে মায়ের থেকে আলাদা করে কোনও হোমে পাঠানো যায় কি না, এই সমস্যারই সমাধান করতে পারছে না সমাজকল্যাণ বিভাগ ও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি। হাওড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, তাঁরা একাধিকবার হাওড়ার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে আবেদন জানিয়েছেন। মা বেঁচে থাকায় শিশুটিকে কাউকে দত্তক দেওয়া যাবে না, কিন্তু হোমে তো রাখাই যায়। অভিযোগ, প্রতিবারই কমিটি নিয়মের কথা তুলে আবেদন এড়িয়ে যাচ্ছে।
হাসপাতালে ঝিল্লি। —নিজস্ব চিত্র
হাওড়া হাসপাতালের সুপার শুভ্রাংশু চক্রবর্তীর কথায়, “ঝিল্লির হোমে যাওয়ার বিষয়টি নিয়মের গেরোয় আটকে গিয়েছে। এমন সুস্থ, ফুটফুটে একটি শিশু কি আজীবন হাসপাতালে থেকে যাবে? ওর পড়াশোনা, স্কুলে যাওয়ার কী হবে? সমাজকল্যাণ দফতরের একটু মানবিকতার সঙ্গে বিষয়টি দেখা উচিত।”
হাসপাতাল সূত্রের খবর, ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাতে আহত জারিনাকে একটি মাস পাঁচেকের শিশুসমেত হাওড়া হাসপাতালে নিয়ে আসেন এক ব্যক্তি। তিনি জানিয়েছিলেন, বাখরার কাছে পথ দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মহিলা পড়েছিলেন। পাশেই ছিল শিশুটি। এর পর ওই ব্যক্তির আর খোঁজ মেলেনি। সেই থেকে হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগে ভর্তি জারিনা। শুভ্রাংশুবাবুর কথায়, “মাঝে আমরা জারিনাকে ঝিল্লির কাছে এনে রেখেছিলাম। তাতে ও একদিন নিজের মেয়ের গলা টিপে ধরেছিল। তার পর থেকে চিকিৎসক আর নার্সরাই ঝিল্লির দেখাশোনা করেন।”
গত এপ্রিলে ঝিল্লিকে কোনও হোমে রাখার জন্য চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিকে চিঠি লেখেন হাওড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, কোনও উত্তর আসেনি। তার পর আবার গত নভেম্বরে লিখিত আবেদন করা হয়। শুভ্রাংশুবাবুর কথায়, “চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি আমাদের জানায়, মা ও শিশুকে আলাদা করা যাবে না। কিন্তু অসুস্থ জারিনাকে এখন ছাড়া যাবে না।”
তা হলে ঝিল্লির ভবিষ্যৎ কী? হাওড়া চাইল্ডওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম রায়ের কথায়, “আমি খুব বেশিদিন দায়িত্ব নিইনি। বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু আমাদের নিয়মে মায়ের থেকে আলাদা করে বাচ্চাকে হোমে দেওয়া যায় না। আবার মায়ের সঙ্গেও ওকে পাঠানো যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করতে হবে।”
কলকাতা চাইল্ডলাইন কর্তৃপক্ষ বলছেন, তাঁরা কিছু শিশুকে আলাদা ভাবে হোমে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, কারণ তাঁদের মায়েরা মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন। এঁদের এক জন পাভলভ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে তাঁর হাতে শিশুকে তুলেও দেওয়া হয়েছে।
হাওড়ার ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে না কেন? সমাজকল্যাণ কমিশনার সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিগুলির সিদ্ধান্তকেই সর্বোচ্চ মান্যতা দিয়ে থাকি। তবে এই ঘটনাটি ব্যতিক্রমী। আইন শিথিল করা যায় কি না দেখা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.