কোথাও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, কোথাও প্রতিবাদে গর্জে ওঠা। রবিবার সকাল থেকে শহর যেন দিল্লির ধর্ষণ-কাণ্ডে মৃত ‘দামিনী’-র জন্যই নিবেদিত ছিল।
ধর্মতলা মোড়ে মেট্রো চ্যানেলের সামনে এ দিন সকাল থেকে চলে ওই ঘটনার প্রতিবাদে ‘স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান’। তাতে সামিল হয়েছিলেন ছোট থেকে বড়, পথচলতি অসংখ্য মানুষ। পেশায় ইন্টিরিয়ার ডিজাইনার ঋতু মিশ্র দিল্লির ওই নির্যাতীত তরুণীর জন্য সুবিচার চেয়ে এই আয়োজন করেন। সঙ্গ দেন তাঁর বন্ধুরাও। সকাল দশটা নাগাদ মেট্রো চ্যানেলের সামনের রাস্তায় রেলিং বরাবর লাগানো হয় সাদা কাগজ। লম্বায় ৫০ মিটার। উদ্দেশ্য, ওই সাদা কাগজের পুরোটাই স্বাক্ষরে ভরে গেলে তাঁরা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন।
তবে সই দিতে গিয়ে অনেকেই তাঁদের মনোভাবও প্রকাশ করেছেন। মার্কার পেন দিয়ে তাঁরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-ক্ষোভ ও দামিনীর প্রতি তাঁদের সমবেদনার কথাও লিখে রাখলেন। সন্ধ্যা হতেই হাতে হাতে জ্বলে উঠল অসংখ্য মোমবাতি। মোমবাতি জ্বালানোর সময়ে অনেকের চোখই তখন অশ্রুসজল। স্বাক্ষর, মন্তব্য বা মোমবাতি ছাড়াও মেট্রো চ্যানেল ভরে উঠেছিল পোস্টার ও ব্যানারে। ‘দামিনী’-র জন্য ন্যায়ের লড়াই করতে চান পথচলতি বহু সাধারণ মানুষও। |
স্মৃতিতে সাহসিনী |
|
|
নীরব প্রার্থনা। |
মোটরবাইক-প্রতিবাদ। |
|
|
|
শিশুর শ্রদ্ধা। |
সুবিচারের দাবিতে স্বাক্ষর। |
|
|
মোমবাতি মিছিল। শহরের এখানে-ওখানে। রবিবার ছবিগুলি
তুলেছেন দেবাশিস রায়, সুমন বল্লভ ও রাজীব বসু। |
|
ধর্মতলা অঞ্চলে কেনাকাটা করতে আসা সাঁতরাগাছি রেলওয়ে কলোনি হাইস্কুলের শিক্ষক ইন্দ্রনীল দাস বললেন,“শিক্ষা সমাজের মেরুদণ্ড। সমাজকে শিক্ষিত, সচেতন করতে হবে। সমাজের জেগে ওঠার প্রয়োজন। এমন ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেই দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে।”
এক দিকে যখন মেট্রো চ্যানেলে স্বাক্ষর অভিযান চলছে, তখন গল্ফগ্রিন থেকে দেশপ্রিয় পার্ক পর্যন্ত হয়ে গেল মোটরবাইক র্যালি। প্রায় ৪০ জন মোটরবাইক আরোহী হেডলাইট জ্বালিয়ে দিল্লির ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ জানালেন। ওই মোটরবাইক র্যালিতে অনেকের হাতেই ছিল ধর্ষণের বিরুদ্ধে নানা রকম পোস্টার।
অন্য দিকে, তারাতলার গুরুদ্বারে সকালে ‘দামিনী’-র জন্য বসে প্রার্থনাসভা। বহু মানুষ সেখানে অংশগ্রহণ করেন। বিকেলে কলেজ স্কোয়ারে শিল্পী-সংস্কৃতি ও বুদ্ধিজীবী মঞ্চ থেকে আয়োজন করা হয় একটি সভার। দিল্লির তরুণ-তরুণীরা যেমন রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে ধর্ষণ-কাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, সে ভাবেই ভবিষ্যতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার ডাক দিল এই মঞ্চ। মঞ্চে অপর্ণা সেনের একটি চিঠি পাঠ করে শোনানো হয়। ওই চিঠিতে দিল্লির ঘটনাকে জাতীয় লজ্জা বলে উল্লেখ করে অপর্ণা সেন মেয়েদের নিরাপত্তা ও সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আবেদন জানান। |