সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু অনেক কথা বলার বাকি।
তাই শেষটা ঝড়ের গতিতেই বলতে হল।
ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের অধিবেশনে এটাই পরিচিত ছবি। গবেষকেরা বলছেন, সময়ের অভাবেই এই অনুষ্ঠানে ভাল করে নিজের বক্তব্য পেশ করা যায় না। তাঁদের প্রশ্ন, আরও একটু সময় কি বাড়ানো যায় না? একটি নির্দিষ্ট শহরের বদলে সারা বছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান করে বিজ্ঞান কংগ্রেস অনুষ্ঠিত করা যায় নাকি, সে প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।
শহরের গবেষকেরা বলছেন, বিজ্ঞান কংগ্রেসের বিভিন্ন বিভাগে গড়ে দেড় থেকে দু’ঘণ্টা সময় পাওয়া যায়। গবেষণাপত্র থাকে অন্তত পনেরোটি। যার ফলে এক-এক জন গবেষকের ভাগ্যে জোটে আট থেকে দশ মিনিট সময়। এত অল্প সময়ে আদৌ ভালমানের গবেষণাপত্র পেশ করা সম্ভব কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যার এমিরেটাস অধ্যাপক প্রতিমা চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, এত অল্প সময়ে ভাল গবেষণাপত্র পেশ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “অনেক ছাত্র-গবেষকই পরিশ্রম করে গবেষণাপত্র তৈরি করেন। ঠিক মতো সময় না পেলে তাঁদের হতাশ হতে হয়।” তিনি মনে করেন, গবেষণা নিয়ে বলার ক্ষেত্রে আরও একটু সময় দিলে ছাত্রেরা উৎসাহ পাবেন।
একই কথা বলছেন শহরের এক রসায়নবিজ্ঞানী-অধ্যাপকও। তিনি বলেন, “কোনও আলোচনাচক্রেই ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে বক্তব্য রাখা যায় না। সেই গবেষণা নিয়ে আলোচনা তো দূর অস্ৎ।” তাঁর মতে, বিভিন্ন বিভাগে যে ভাবে বিষয় ভাগ করা হয়, তা যুগোপযোগী নয়। একই সুর আরও এক বিজ্ঞানীর গলায়। তিনি বলেছেন, “কোনও উন্নত দেশে এ ভাবে আলোচনাচক্র আয়োজিত হয় না। বিজ্ঞান কংগ্রেসের শুরু যে ভাবে হয়েছিল, তাতে এমন কাঠামোর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আজ সময় বদলেছে।”
সময়ের কারণে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেক ছাত্র-গবেষকও। তাঁরা বলছেন, “বিজ্ঞান কংগ্রেস কুম্ভমেলার মতো হয়ে গিয়েছে। অনেক লোকের ভিড় কিন্তু কাজের কাজটা হচ্ছে না।” যদিও বিজ্ঞান কংগ্রেসের কর্তারা এমনটা মানতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, “বিজ্ঞান কংগ্রেসের মঞ্চটা জনমানসে বিজ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। তাই কোনও বিষয়ের ‘স্পেশালাইজেশন’ করাটা সম্ভব নয়।”সময়ের অভাবটা থাকলেও এক দল গবেষক কিন্তু তা নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। শারীরবিদ্যার অধ্যাপিকা কৃষ্ণা দত্ত বলছেন, “গবেষণাপত্র পেশ করার সময় কম মিলবে জানি। তবে সেটা না হলে এত লোককে সুযোগ দেওয়া যাবে না।” কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যার এক ছাত্র-গবেষকের কথায়, “সময় কম এটা সত্যি ঘটনা। কিন্তু তা না হলে আমাদের মতো অনেক নতুন মুখ নিজেদের পেশ করতে পারত না।” তাঁর দাবি, “বিজ্ঞান কংগ্রেসের মঞ্চের কথা মাথায় রেখে গবেষণাপত্র সে ভাবেই তৈরি করা উচিত। যাতে নিজের ভাবনাটা অল্প সময়ে বলা যায়।”
আর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বছরভর বিজ্ঞান কংগ্রেস চালানোর দাবিও বাস্তবসম্মত নয় বলে সংগঠনের কর্তাদের দাবি। বিজ্ঞান কংগ্রেস সূত্রের খবর, মূল অধিবেশনের আগে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে দু’টি আঞ্চলিক বিজ্ঞান কংগ্রেসের আয়োজন করা হয়। তবে তাতে বিশেষ ফল হয় কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
সময়ের এই অভাবের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞান কংগ্রেসের সময়সীমা আরও কিছু দিন বাড়ালে ভাল হত কি না,
সে প্রশ্নও উঠছে। বোস ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা ও ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের আঞ্চলিক সম্পাদক শিবাজী রাহা
মনে করেন, বিজ্ঞান কংগ্রেসের অনুষ্ঠান পাঁচ দিনের বেশি লম্বা হলে গবেষকেরা আগ্রহ হারাবেন। বিষয়টি বাস্তবসম্মত নয় বলেও তাঁর দাবি। একইসঙ্গে তিনি বলেন, “বিজ্ঞান কংগ্রেসে অনেক বেশি গবেষককে সুযোগ দিতেই সময়সীমার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি করতে হয়।” |