বাঙালির কপালে পাওয়ার চেয়ে হারানোর ভারই বেশি
প্রস্থান আছে, আগমন নেই।
প্রাপ্তি যত, হারানো তার চেয়ে বেশি। ক্ষুদ্র বাঙালি ক্ষুদ্রতর। এক নজরে ২০১২।
যে কোনও প্রয়াণই দুঃখের। তবে কোনও কোনও চলে যাওয়া দেশ-কালের গণ্ডি পেরিয়ে এক সর্বব্যাপী মাত্রা পায়। পণ্ডিত রবিশঙ্কর, লেসলি ক্লডিয়াস, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তেমনই তিন জন। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর দু’মাসের ব্যবধানে প্রয়াত তাঁরা। একই বছরে এত ক্ষত বহন করল বাঙালি।
সেতারশিল্পী পণ্ডিত রবিশঙ্কর সর্ব অর্থেই আন্তর্জাতিক। কাজের জীবনে অনেকটা সময় আমেরিকায় কাটিয়েছেন। জীবনাবসানও সেখানেই। তবে এই দেশ এবং এই শহরের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ কখনও ছিন্ন হয়নি। তাঁকে সামনে রেখে বাঙালি বারবার জগৎসভায় মাথা তুলেছে।
ভারতীয় হকির প্রবাদপুরুষ বলে অভিহিত লেসলি ক্লডিয়াস ছিলেন ১৯৪৮, ’৫২ ও ’৫৬-র অলিম্পিকে সোনাজয়ী ভারতীয় হকি দলের অন্যতম সদস্য। লেসলির ঠিকানা ছিল কলকাতা। খেলার দুনিয়ায় তাঁর মর্যাদা এতটাই আকাশছোঁয়া ছিল যে, তাঁর জীবদ্দশাতেই এই বছর লন্ডন অলিম্পিক্সের সময় বুশে টিউব স্টেশনের নাম রাখা হয়েছিল তাঁর নামে।
লেসলি ক্লডিয়াস সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় রবিশঙ্কর
দুর্গাপুজোর অষ্টমীর গভীর রাতে হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। জনপ্রিয়তা ও ব্যাপ্তির নিরিখে এখন বাংলায় তাঁর তুল্য লেখক আর কেউ নেই। সুনীলের শেষযাত্রায় জনস্রোত তার সাক্ষী।
এক দিকে বাঙালি যখন দীন হয়ে পড়ছে, অন্য দিকে তখনই তার জন্য ইতিহাসের পাতায় লেখা হল এক সম্মানচিহ্ন। তাঁর দল সিপিএমের ‘ঐতিহাসিক ভুলে’ জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী হতে না পারলেও এই প্রথম রাষ্ট্রপতি হলেন বীরভূমের ব্রাহ্মণ সন্তান প্রণব মুখোপাধ্যায়। দৈনন্দিন রাজনৈতিক ব্যস্ততাকে কার্যত অতীত করে দিয়ে ২৫ জুলাই থেকে তিনি রাইসিনা হিল্সের বাসিন্দা। অনেক না-পাওয়ার মধ্যে এই পাওয়া বাঙালির কাছে নিশ্চয় খুশির খবর।
বাইশ গজে ব্যাট হাতে আর নামবেন না সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এক অর্থে, মাঠের মধ্যে তিনিও অতীত হয়ে গেলেন এই বছর থেকেই। তবে দাদা থাকতেই পারেন নতুন অবতারে, কমেন্ট্রি বক্সে। নয়া অবতারে ভাষ্যকার সৌরভকে পাওয়াও গিয়েছে।
বাংলা সিনেমায় কিছু দিন ধরে নতুন মুখের আকাল। প্রধানত চেনাদের ওঠা-নামা। এ বার হৈ হৈ করে ফিরে এলেন জিৎ। তাঁর ‘আওয়ারা’ বাজার মাত করেছে। বঙ্কিমবাবু বলেছিলেন, রমণীগণ কদলী বৃক্ষের ন্যায়। স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় কি জানতেন সেই কদলী-ই তাঁকে তালগাছে তুলে দেবে! ভূতের ভবিষ্যৎ-ছবির সঙ্গে স্বস্তিকার ভবিষ্যতও এ বছর ঝলমলে হয়েছে ‘কদলীবালা’-র জন্য।
তাঁর অভিনয় দক্ষতা আপাতত আলোচনার ঊর্ধ্বে।
প্রণব মুখোপাধ্যায় স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় জিৎ
প্রতিভাসম্পন্ন বাঙালি অভিনেত্রীদের মধ্যে সোহিনী সেনগুপ্ত এখন এক বিশিষ্ট নাম। গত বছর ‘ইচ্ছে’ ছবিতে তাঁর অভিনয় প্রশংসা পেয়েছিল ব্যাপক। আরও একটি বাংলা ছবির কাজ শুরু করেছেন তিনি। মঞ্চে ‘কন্যাদান’, ‘মাধবী’, ‘অন্ত-আদি-অন্ত’-র মতো নাটক তো চলছেই।
ফিল্মে বাঙালির সাফল্যের অন্য এক কাহিনিও তৈরি হয়েছে এ বার। পাঁচ বাঙালি পরিচালক। বাংলা ছবি বানাননি কেউ। এবং সব ক’টি ছবিই সাড়া ফেলেছে। প্রথমেই সুজয় ঘোষের ‘কহানি’। কলকাতার পটভূমিকায় এমন একটি টানটান হিন্দি থ্রিলার তাক্ লাগিয়ে দেয়। ছবির সূত্রেই শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের ‘বব বিশ্বাস’ এখন মুখে মুখে ঘোরা নাম। পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় হয়ে গেছেন বিজ্ঞাপনের মুখ। স্পার্ম ব্যাঙ্ক নিয়ে যাবতীয় আড়ষ্টতার মাথায় ঘা মেরে সুজিত সরকার এই বছর তৈরি করেছেন ‘ভিকি ডোনার’।
এমনিতেই ‘বরফি’র মতো ছবি, তার ওপর দার্জিলিঙে শু্যটিং সব মিলিয়ে বাঙালির কাছে অনুরাগ বসুর কদর বাড়ল। দিবাকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সাংহাই’ সম সময়ের বাস্তবধর্মী ছবি। বিজ্ঞানী বেদব্রত পাইন নাসা-র পাট চুকিয়ে ছবি করতে এসেই নজরে পড়েছেন। তাঁর ‘চিটাগং’ এ বছরের আলোচিত একটি ফিল্ম।
কলকাতার মেয়ে ইন্দ্রাণী পালচৌধুরী এখন কানাডার নাগরিক। মডেল ও ফ্যাশন ফোটোগ্রাফিতে বিশ্ব তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন আগেই। সতীর্থ মার্কাস ক্লিন্কোর সঙ্গে এই ডিসেম্বরে বেরলো তাঁর প্রথম ফোটো-বই ‘আইকন্স’। উদ্যাপনের লগ্নে বাঙালির এটাও প্রাপ্তি।
সব হল। তবু না-পাওয়ার দুঃখ ঘুচল কই!
রানি মুখোপাধ্যায়ের বিয়ের ফুল এ বছরেও ফুটল না। রাজ্যসভায় যাওয়া হল না শুভাপ্রসন্নের।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.