কালনা আদালতের বেহাল পরিকাঠামো দেখে গেলেন রাজ্যের ডিরেক্টর অফ প্রসিকিউশন আশিস চক্রবর্তী। আলোচনা করলেন সরকারি আইনজীবীদের সঙ্গে। আশ্বাস দিলেন ব্যবস্থা নেওয়ার।
শনিবার আশিসবাবু কালনা শহরে পৌঁছন। দুপুরে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের ট্রেজারি ভবনের দ্বিতল বিভাগে সরকারি আইনজীবীদের সঙ্গে একটি বৈঠক সারেন। তিনি জানতে চান, মহকুমায় বিচারব্যবস্থার কী পরিকাঠামো রয়েছে। আইনজীবীরা তাঁকে জানান, মামলা মোকদ্দমার চাপ বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু আদালতের পরিকাঠামো সেই পুরনো আমলেরই রয়ে গিয়েছে। আদালত লাগোয়া জিআরও অফিস নিয়েও দীর্ঘক্ষণ কথাবার্তা হয়। আইনজীবীরা জানান, সরকারি এই কার্যালয়ের অত্যন্ত খারাপ অবস্থা। স্যাঁতসেঁতে ছোট্ট একটি ঘরে আলমারি, তাক আর মেঝেতে ডাঁই করা রয়েছে অজস্র ক্রিমিনাল মামলার নথি। অযত্নের কারণে সেই নথির বেশির ভাগ অংশই চলে গিয়েছে উইয়ের পেটে। ফলে প্রয়োজন পড়লেও কার্যালয় থেকে মিলছে না গুরুত্বপূর্ণ নথি। বর্ষায় ছাদ চুঁইয়ে জল মেঝেতে জল পড়ে জিআরও অফিসে। আইনজীবীদের বসার জন্য নির্দিষ্ট জায়গাও নেই। ফলে মক্কেলদের সঙ্গে আলোচনায় গোপনীয়তা রক্ষাও সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই অনেক আইনজীবী অন্যের দোকানে বা মাথার উপর পলিথিনের আচ্ছাদন দিয়ে রাস্তার পাশে অস্থায়ীভাবে বসছেন। আইনজীবীরা আরও জানান, আদালতে বহু মামলা জমে রয়েছে। তাঁদের দাবি, সরকার পরিবর্তনের পর সরকারি আইনজীবীদের নতুন প্যানেল তৈরি হলেও নতুন করে সরকারি আইনজীবী নিয়োগ হয়নি। মহকুমা আদালতে একজন ম্যাজেস্টেরিয়াল পর্যায়ের বিচারকেরও অভাব রয়েছে। |
বৈঠকে উপস্থিত সরকারি আইনজীবী মলয় পাঁজা বলেন, “অপরাধমূলক বিভিন্ন মামলার প্রাথমিক তদন্তের পর্যায়ে পুলিশের বিভিন্ন পরামর্শের প্রয়োজন হয়। অথচ পুলিশকে মামলার ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়ার জন্য জেলা সদরে মাত্র একজন মাত্র সরকারি আইনজীবী রয়েছেন। তাঁর একার পক্ষে গোটা জেলার অজস্র মামলার ঠিকঠাক রায় দেওয়া সম্ভব নয়। আমরা কালনা মহকুমায় একজন সরকারি আইনজীবীর দাবি করেছি, যার প্রধান কাজই হবে মামলার স্বার্থে পুলিশকে সময়মতো সঠিক পরামর্শ দেওয়া।” মলয়বাবুর দাবি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুলিশের চার্জশিট দেওয়া হয়ে যাওয়ার পরে সরকারি আইনজীবীরা মামলা হাতে পান। অনেক সময়ে তার আগেই মামলার তদন্ত অনেক দূর এগিয়ে যায়। তাই পরে মামলার কোনও দুর্বলতা নজরে এলেও আইনজীবীদের কিছু করার থাকে না। সরকারি আইনজীবী বিকাশ রায় জানান, বৈঠকের পর নিজেই পরিকাঠামো ঘুরে দেখেন আশিসবাবু। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, “আমি বড় হয়েছি কালনায়। কালনার প্রতি আমার আলাদা দুর্বলতা রয়েছে। এখানকার অব্যবস্থার দিকগুলি ঊধ্বর্র্তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে কিছু করার চেষ্টা করব।” |