বিদ্যুৎ বা ডিজেলের ইঞ্জিনেই রেলগাড়ি তো চলেই। কিন্তু ১৮৫৩ সালে ভারতে যখন প্রথম বার মুম্বই থেকে থানে পর্যন্ত রেলগাড়ি চলেছিল, তার ইঞ্জিন তো এমন ছিল না। কয়লা পুড়িয়ে, ধোঁয়া উড়িয়ে চলত সেই গাড়ি। তার পরে বহু বছর রেলের জ্বালানি হিসেবে কাজ করেছে কয়লা। কেমন দেখতে ছিল সেই কয়লাচালিত ইঞ্জিন, কী ছিল তার প্রযুক্তি কৌশল, এ সব এই প্রজন্মের অনেকেরই অজানা। তাদের জন্যই নতুন বছরে চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ রেল ইঞ্জিন কারখানা নিয়ে এসেছে পুরনো ভারী সেই কয়লাচালিত ইঞ্জিনের একটি ছোট্ট সংস্করণ। নাম রাখা হয়েছে ‘ফেয়ারি প্রিন্সেস’।
চিত্তরঞ্জন রেল কারখানার তরফে জানানো হয়েছে, ‘হেরিটেজ’ তালিকায় জায়গা করে নেওয়া ৪ মিটার দীর্ঘ এই ছোট রেলগাড়িটি রাখা হয়েছে শহরের দেশবন্ধু পার্কে। শুধু দাঁড়িয়ে থাকবে না, দর্শকদের নিয়ে ছুটবেও সেই গাড়ি। সম্প্রতি পরীক্ষামূলক ভাবে পার্কে এক বার চালানোও হয়েছে ইঞ্জিনটি। একাধিক কামরা নিয়ে সেই যাত্রা সফলও হয়েছে। |
কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, সপ্তাহের শেষ দিনে পার্কের কিনারা দিয়ে ছুটবে এই ছোট রেল। আসানসোল শিল্পাঞ্চল-সহ আশপাশের এলাকার স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের কথা ভেবেই তাঁদের এই প্রয়াস। পড়ুয়ারা সফর করতে পারবেন নিখরচায়। কী প্রযুক্তিতে, কী ভাবে চলছে গাড়ি, রেলের আধিকারিকেরাই হাতে-কলমে বুঝিয়ে দেবেন পড়ুয়াদের। কারখানার জেনারেল ম্যানেজার রাধে শ্যাম বলেন, “এ দেশে কী ভাবে রেলগাড়ির পত্তন হয়েছিল, সেই ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই আমাদের এই প্রয়াস।” পার্কে বেড়াতে এসে এমন ছোট রেলগাড়ি দেখে অবাক খুদেরা। নবম শ্রেণির পড়ুয়া অভিরূপ বাগচির কথায়, “বিজ্ঞানের বইতে কয়লার ইঞ্জিনের কথা পড়েছি। এ বার চোখে দেখলাম।”
কারখানার তরফে দাবি করা হয়েছে, ভারতীয় রেলের ইতিহাসে এমন উদ্যোগ এই প্রথম। গাড়িটি তৈরির সিংহভাগ কৃতিত্বের দাবিদার কারখানার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পড়ুয়ারা। যাবতীয় কারিগরি সাহায্য করেছেন সংস্থার মেকানিক্যাল দফতরের আধিকারিক ও কর্মীরা। ওই দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, ২০ অশ্বশক্তি সম্পন্ন ইঞ্জিনটি প্রতি ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে। জ্বালানি হিসেবে লাগবে প্রায় পাঁচশো কিলোগ্রাম কয়লা। ‘পথের পাঁচালি’র অপু-দুর্গা কাশবনের মধ্যে দিয়ে দৌড়ত রেলগাড়ি দেখবে বলে। এ প্রজন্মের অপু-দুর্গাদের জন্য নতুন বছরে এটাই উপহার চিত্তরঞ্জন রেল কারখানার। |