পঞ্চাশে পা দিল চৌহাট্টা হাইস্কুল
জ থেকে ঠিক পঞ্চাশ বছর আগের কথা। কয়েক জন যুবক গ্রামে গ্রামে ঘুরে ভিক্ষা করেছিলেন। পাঁচ জন সহৃদয় ব্যক্তি এগিয়ে এসেছিলেন তাঁদের পাশে। স্বেচ্ছায় দান করেছিলেন নিজেদের জমি। সবার উদ্দেশ্য ছিল একটাই। আশেপাশে ‘স্কুল’ বলে কোনও ব্যবস্থার অস্তিত্ব না থাকা এলাকায়, একটি স্বপ্নের স্কুল গড়ে তোলা। এক পা এক পা করে সেই স্কুল মাটি থেকে মাথা তুলেছে। হয়ে দাঁড়িয়েছে এলাকার অন্যতম সম্মানের কারণ। সম্প্রতি পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করল লাভপুর ব্লকের সেই স্কুল চৌহাট্টা হাইস্কুল। আর সেই উপলক্ষেই স্কুলের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে মেতে উঠেছেন এলাকার আট-দশটি গ্রামের মানুষ। গত ২৬ ডিসেম্বর শুরু হওয়া ওই উৎসব-অনুষ্ঠান শেষ হচ্ছে আজ, শনিবার।
সেই উদ্যমের দিনের উদ্যোক্তাদের মধ্যে এখন জীবিত রয়েছেন জনাকয়েকই। তাঁদেরই কয়েক জন সামসুজ্জোহা মির্ধা, গোঁসাই দাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও রমেন্দ্র মুখোপাধ্যায় স্মৃতিচারণ করে বললেন, “প্রয়াত গোবিন্দচন্দ্র দাঁ ও বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়ই প্রথম আমাদের গ্রামে স্কুল করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই উদ্যোগে আমরা কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম!” তাঁরা জানালেন, তখন গ্রামের বেশির ভাগ ছেলেমেয়েই স্কুলের অভাবে পড়াশুনা করতে পারত না। তাই গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে স্কুল তৈরির জন্য টাকা তুলেছিলেন তাঁরা।
এলাকাবাসীর উদ্যোগ সফল হয় ১৯৬২ সালে। তৈরি হয় তিন কক্ষের একটি পাকা স্কুল। পরের বছরই সেটি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অনুমোদন পায়। এর পরে দীর্ঘ দিন পথ চলার মাঝে ১৯৬৮ সালে মাধ্যমিক পর্যন্ত ও ২০০০ সালে হাইস্কুলের অনুমোদন পায় চৌহাট্টার এই স্কুল। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্রমে তৎকালীন রাজ্যসভার সাংসদ প্রণব মুখোপাধ্যায়, এলাকার সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, বিধায়ক নবনীতা মুখোপাধ্যায় এবং সর্বশিক্ষা মিশনের আর্থিক সহায়তায় দোতলা বিল্ডিং তৈরি হয়েছে। স্কুলের বর্তমান প্রধানশিক্ষক দীনবন্ধু কর্মকার বলেন, “এমন একটি স্কুল থেকে পড়াশোনা করেই এলাকার বেশ কিছু পড়ুয়া কেউ চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়র কেউ বা কলেজের অধ্যাপক হয়েছেন।”
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চাশে পা রাখা চৌহাট্টা ছাড়া এলাকায় কাছাকাছি চার কিলোমিটারের মধ্যে নেই আর কোনও হাইস্কুল। ওই স্কুলের প্রায় আঠেরোশো পড়ুয়ার অধিকাংশই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। স্কুলে একটি আদিবাসী ছাত্রাবাসও আছে। সেখানে বিনা খরচে রাখা হয়েছে ৪৪ জন ছাত্রকে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু আচে মিড-ডে মিলও। তবে স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণিতে রয়েছে শুধু মাত্র কলা বিভাগ। সম্প্রতি বিজ্ঞান বিভাগও চালু করার চেষ্টা করছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে স্কুলের পড়ুয়ারা ভাল ফল করছে বলে দাবি প্রধান শিক্ষকের।
অন্য দিকে, সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক শৈবাল নন্দী ও জেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক স্বপ্না দে আইচ দু’জনেই একমত হয়ে বললেন, “স্কুলটির কথা জানি। ওই স্কুলের পরিবেশ ও পঠনপাঠন দুই-ই ভাল।”
তাঁদের দীর্ঘ দিনের লড়াইয়ের সাক্ষী সেই স্কুলেরই উৎসবেই এখন মজেছেন এলাকাবাসী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.