স্বামীর সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতে গলাটা ধরে আসে সেবিকা মিত্রের। তিনি জানান, স্বামী কর্মসূত্রে মধ্যপ্রাচ্যে। এ বার বড়দিনে আসতে পারলেন না। তাই শেষমেশ মন খারাপ করে আত্মীয়-পরিজনদের নিয়েই সারতে হবে বড়দিনের পার্বণ। তিনি বলেন, “সোমবার মধ্যরাতে বিশেষ প্রার্থনার জন্য গির্জায় গিয়েছিলাম। উৎসব উপলক্ষে বাড়িতে কেক ও বিরিয়ানি তৈরি হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে ফল ও মিষ্টি। সব কিছুর মধ্যে কমর্সূত্রে ইরাক প্রবাসীকে স্বামীর কথা খুব করে মনে পরছে।”
শুধু সেবিকাদেবীই নন, রানাঘাটের বৈদ্যপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বেগোপাড়া এলাকার অনেকেই বড়দিনের এই খুশির দিনে প্রিয়জন ছাড়াই কাটাচ্ছেন। রুটি-রুজির টানে এই এলাকার প্রায় ৫০ শতাংশ পুরুষই পাড়ি জমিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
কেউ কেউ বড়দিন উপলক্ষে বাড়ি ফিরলেও, বেশিরভাগই রয়ে গিয়েছেন বিদেশ বিভুঁইতেই।
আবার কয়েক বছর বিদেশে কাটানোর পর উৎসবের মুখে বাড়ি ফিরেছেন, তাঁদের পরিবারে বইছে খুশির হাওয়া। কর্মসূত্রে সৌদি আরবে থাকা তপন মণ্ডল বছর দু’য়েক পর এ বার উৎসবে যোগ দিতে বাড়ি এসেছেন। তিনি বলেন, “বাড়ি ফিরতে পেরে খুবই আনন্দিত। সারা বছর এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করি।”
রানাঘাট স্টেশন থেকে দুই কিলোমিটার দূরের বেগোপাড়ার এই খ্রিষ্টান মহল্লা বড়দিনে সেজে উঠেছে। এখানকার অ্যান্টনিপাড়া, মরিয়মপাড়া, যোশেফপাড়া, খালপাড়ার বিভিন্ন ক্লাব ও বাড়িতে তৈরিতে হয়েছে গোশালা। মেলা বসেছে।
এই মেলা চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান নগর রায় বলেন, “এখানকার মানুষ বড়দিন উপলক্ষে আনন্দে মেতে ওঠেন। মেলা বসে। এই মেলাকে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে সকলেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।”
এই উৎসব আজ কেবলমাত্র খ্রিষ্টধর্মাবম্বীদের মধ্যে আটকে নেই। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষই বড়দিনের আনন্দে সামিল হয়েছেন।
দয়াবাড়ির বাসিন্দা বিকাশ চৌধুরী বলেন, “আমাদের দুর্গাপুজোর সময় ওঁরা অংশ নেন। আমরাও বড়দিনের খুশিতে মেতে উঠি।” রানাঘাটের নাসারাপাড়ার বাসিন্দা নৌসাদ আলি বলেন, “আমাদের ঈদে খ্রিষ্টানরা আসেন। আমরাও ওঁদের পার্বনে যাই।” |