পলাশি মনুমেন্টেই চলছে পিকনিক, নিশ্চুপ প্রশাসন
লাশির প্রান্তরের নবাব সিরাজদৌল্লা ও ক্লাইভের মধ্যে হওয়া যুদ্ধক্ষেত্র শীত পড়তেই পিকনিক স্পটের চেহারা নিয়েছে। পেল্লায় সাইজের হাঁড়ি, কড়াই, ডেকচিতে চলছে নানা উপাদেয় সব পদের রান্না। বড় গ্যাসের সিলিন্ডার আনা হচ্ছে মাংস রান্নার জন্য। সঙ্গে তো রয়েছেই শীতের রকমারি সবজি, চাটনি, সাদা ভাত। শীতকালীন এই বনভোজনে বাদ নেই মিষ্টিরও আয়োজনও। মনুমেন্টের ভিতরেই চলছে শীতের রোদে পিঠ রেখে তাস খেলা।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির আমবাগানে ব্রিটিশ ও বাংলার ফৌজ মুখোমুখি হয়েছিল, সেখানেই আপাতত ২৫ ডিসেম্বরের বনভোজন! অনেকেই ইতিহাস প্রসিদ্ধ এই স্থানে পিকনিকের আসর দেখে হতচকিয়ে যাচ্ছেন। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের যুক্তিও ফেলনার নয়। নেই সেই আগের আম্রকুঞ্জ, নেই সরকারি স্তরে কোনও পরিচর্যা। গত এক বছরে রাজ্য সরকারের পক্ষে পর্যটন মন্ত্রী রচপাল সিংহ ঘুরে গেলেও একটি নতুন ইটও গাঁথা হয়নি। সব মিলিয়ে সরকারি উদাসীনতায় ধুঁকছে ইতিহাস খ্যাত এই প্রান্তর। পলাশি সুগার মিল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, শীতে উৎসবের দিনগুলোয় এখানে লোকজন না এলে এলাকা ফাঁকাই থাকে। বাইরের জেলা থেকে যদিও বা কেউ আসেন বেড়াতে, কোনও লোক না থাকলে ভয়ে তাঁরা ফিরেও যান।
স্থানীয় বাসিন্দা অপরেশ মণ্ডল বলেন, “আমরা ওখানে পিকনিক করি। অনেকে তাসও খেলেন। কিন্তু শহিদদের অপমান করার মতো কোনও কাজ করা হয় না। সাধ্যমতো এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করি।” কমলা দাস বলেন, “দু’বছর ধরে বিবাহ সূত্রে পলাশিতে রয়েছি। ইতিহাসের সেই পলাশি প্রান্তর, যেখানে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজিত হন, প্রথম বছর সেখানে পিকনিক করার আগে মনের মধ্যে একটা কিন্তু কিন্তু ভাব কাজ করছিল। পরে সব ঠিক হয়ে যায়। কী আর করা যাবে!”
পর্যটকেরা পিকনিক করার পর নোংরা পাতা অন্যত্র ফেলে? পূর্ত দফতরের চৌকিদার কানন রায় বলেন, “কেউ ফেলে, কেউ কেউ আবার ফেলে না।” মঙ্গলবার যাঁরা ওখানে উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে বকুল রায় বলেন, “আমরাও জানি, এই এলাকা হল পলাশির সেই ঐতিহাসিক যুদ্ধস্থল। কিন্তু কাছাকাছি কোনও পিকনিক স্পট না-থাকায় এই নিরিবিলিই ভরসা।” স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী এই পলাশির প্রান্তরের রক্ষানাবেক্ষনে ব্যাপারে সরকারের কোনও হেলদোলই নেই। ঠান্ডা পড়তেই পিকনিকের আয়োজনে শহীদবেদির অসম্মান হলেও প্রশাসন নিশ্চূপ। এ প্রসঙ্গে নদিয়া জেলা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পলাশি শাখার সম্পাদক ধনঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, “এই জায়গার সংরক্ষণের ব্যাপারে প্রশাসনকে বার বার জানিয়েও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নজরদারির অভাবে স্মারকের উপরেই রমরমিয়ে চলছে বনভোজনের আসর। নিরাপত্তার ব্যাপারে প্রশাসনের গয়ংগচ্ছ মনোভাবের দরুন বছর দশেক আগে ওই স্মারক থেকে একটি মূল্যবান তাম্রফলক চুরি হয়ে যায়।” কালীগঞ্জের বিডিও তনুশ্রী বটব্যাল বলেন, “ সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের অনুরোধ ওই ঐতিহাসিক স্থানের পরিবর্তে পাশের অতিথিশালা বা অদূরের ফাঁকা মাঠে পিকনিক করুন। ওই স্থান রক্ষা করার ব্যাপারে আমাদেরই উদ্যোগী হতে হবে।” কালীগঞ্জ মাটিয়ারি গার্লস অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষিকা অঞ্জনা নাগ বলেন, “ঐতিহ্য নষ্ট করার অধিকার আমাদের নেই। প্রশাসনিক নজরদারি বাড়লেই পিকনিকের মতো অবাঞ্ছিত কাজকর্ম বন্ধ হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.