রাজ্য সরকারের ‘বিবেক ও যুব উৎসব’ নিয়েও এ বার ‘আমরা-ওরা’-র অভিযোগ উঠল। অভিযোগ উঠল, তৃণমূল সরকার দলের নেতাদেরই এই উৎসবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিচ্ছেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির নেতারা থেকে যাচ্ছেন দূরে। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
রাজ্য যুব কল্যাণ দফতর রাজ্য জুড়েই প্রতিটি ব্লক ও পুরসভা এলাকায় এই মেলার আয়োজন করে। প্রতিটি মেলার কমিটিতে এক জন করে পেট্রন বা পৃষ্ঠপোষক রাখা হয়েছে। আর এই পদটিকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। সম্প্রতি রাজ্য যুব কল্যাণ দফতরের যুগ্ম সচিব জেলা আধিকারিকদের একটি চিঠি দিয়ে কোন উৎসবে কে পেট্রন পদে থাকবেন তার একটি তালিকা পাঠিয়েছেন। জেলায় ১৭টি ব্লক রয়েছে। অভিযোগ, ব্লকগুলির উৎসব কমিটিতে যেখানে যেখানে তৃণমূলের বিধায়ক রয়েছেন, সেখানে তাঁরাই পেট্রন পদে রয়েছেন। আর যেখানেই সিপিএম বা কংগ্রেসের বিধায়ক সেখানে ওই পদে তৃণমূলের নেতাদের রাখা হয়েছে। আর এই ঘটনাকেই ‘আমরা-ওরা’র বিভাজন বলে অভিযোগ করছেন কংগ্রেস ও সিপিএম।
চাপড়া ব্লকে ওই পদে রয়েছেন তৃণমূলের বিধায়ক রুকবানুর রহমান, চাকদহে নরেশচন্দ্র চাকি, হাঁসখালিতে সুশীল বিশ্বাস, হরিণঘাটায় নিলীমা নাগ, কালীগঞ্জে নাসিরুদ্দি আহমেদ, কৃষ্ণগঞ্জে সুশীল বিশ্বাস, কৃষ্ণনগর ১ ও ২ ব্লকে মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস, নবদ্বীপে পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা, নাকাশিপাড়ায় কল্লোল খাঁ, রানাঘাট ১ ব্লকে আবীররঞ্জন বিশ্বাস ও রানাঘাট ২ ব্লকে সমীরকুমার পোদ্দার। অথচ শান্তিপুর ব্লকে নেই বিধায়ক কংগ্রেসের অজয় দে। সেখানে ওই পদে রয়েছেন রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রের বিধায়ক তৃণমূলের পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়। শান্তিপুর ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬টিই কিন্তু শান্তিপুর বিধানসভা এলাকার মধ্যে পড়ে, চারটি পড়ে রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্রের মধ্যে। তেহট্ট মহকুমা এলাকার তিনটি বিধানসভাই সিপিএমের হাতে। করিমপুরে সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ, তেহট্টে রঞ্জিত মণ্ডল এবং পলাশিপাড়ায় এসএম সাদি। সেখানে করিমপুর ১ ব্লকের এই উৎসবের পেট্রন তৃণমূল নেতা কে আলি মণ্ডল আর করিমপুর ২ ব্লকের ওই পদে প্রকাশ চক্রবর্তী। কোথাও সিপিএম বিধায়কদের নাম নেই।
একই ভাবে জেলার ১০টি পুরসভা ও নোটিফায়েড এলাকাতেও ওই পদে পুরপ্রধানদের রাখা হয়নি। কংগ্রেস পরিচালিত কৃষ্ণনগর পুরসভার ওই উৎসবে পেট্রন তৃণমূলের বিধায়ক অবনীমোহন জোয়ারদার। তবে তৃণমূল পুরপ্রধানদেরও বাদ রাখা হয়েছে। নবদ্বীপ পুরএলাকার ওই উৎসবে ওই দায়িত্বে রয়েছেন নির্মল দেব। নরেশবাবুই উৎসবের ওই পদে রয়েছেন সিপিএম পরিচালিত চাকদহ পুরসভা এলাকার ওই উৎসবে। কল্যাণী পুরসভাও তৃণমূল পরিচালিত। সেখানে উৎসবের দায়িত্বে পুরপ্রধানের বদলে তৃণমূলেরই বিধায়ক রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস। রমেন্দ্রনাথবাবুই পেট্রন গয়েশপুর পুরসভা এলাকার ওই উৎসবে। গয়েশপুর পুরসভাটি অবশ্য বামফ্রন্টের দখলে। রানাঘাট পুরসভা তৃণমূলের হাতে। তবে এখানে পুরপ্রধান নন, ওই পদে রাখা হয়েছে পার্থসারথিবাবুকে। একই সঙ্গে তিনি কংগ্রেস পরিচালিত বীরনগর ও তৃণমূল পরিচালিত তাহেরপুর পুর এলাকার উৎসবের ওই পদে রয়েছেন। কংগ্রেস পরিচালিত কুপার্স ক্যাম্প নোটিফায়েড এলাকায় উৎসবের ওই পদে আবীররঞ্জন বিশ্বাস।
কংগ্রেসের অভিযোগ, পুরপ্রধানদের যখন উৎসবে ওই পদে আনা হচ্ছে না, তখন কিছু বলার নেই কিন্তু বিধায়কদের যখন দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে, তখন শান্তিপুরে কেন অজয়বাবুকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। অজয়বাবু বলেন, “তৃণমূল সব বিষয়ে সিপিএমকে টেক্কা দিতে চাইছে। সিপিএম এ ভাবেই তাদের আমলে নিজেদের দলের লোককে উৎসবের পৃষ্ঠপোষক করত। নির্লজ্জ সেই দলতন্ত্রকেই ফিরিয়ে নিয়ে এনেছে তৃণমূল।” তাঁর কথায়, “তা ছাড়া, পুরসভাকে বাদ দিয়ে এমন উৎসব কী করে সফল হবে, তাই তো বুঝতে পারছি না।” তেহট্টে সিপিএমের বিধায়ক রঞ্জিতবাবু বলেন, “যতগুলি কমিটি করা হয়েছে তার কোথাও সিপিএম বা কংগ্রেসের কেউ নেই। এ ভাবে কোনও উৎসব হয়?” যুব কল্যাণ দফতরের প্রাক্তন মন্ত্রী বর্তমানে কারিগরী দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বলবাবু অবশ্য বলেন, “সিপিএম আমলে দলতন্ত্র হত। তখন ডিওয়াইএফ সব জায়গায় উৎসব নিয়ন্ত্রণ করত। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি। রাজ্য যুব কল্যাণ দফতরই একটি তালিকা তৈরি করেছে। তাতে দলতন্ত্রের কোনও জায়গাই নেই। কমিটি যেখানে যাঁকে যোগ্য বলে মনে করেছেন, তাঁকে সেখানে রেখেছেন।” |