দু’পাশের দুই ২৪ পরগনায় লাগাতার কর্মসূচি। তাতে মানুষের সাড়াও ভাল। মাঝখানে কলকাতার হাল ক্রমশ সঙ্গিন! পরিস্থিতি সামলাতে দলের কলকাতা জেলা কমিটির উপরে নজরদারি বাড়াতে হল আলিমুদ্দিনকে। শহরে পুরভোটের অনেক আগেই।
রাজধানী শহরের নানা প্রান্তেও বিরোধী বামেদের উপরে হামলা, দল বা গণসংগঠনের কার্যালয়ে আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। অথচ আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানোর মতো নেতার দেখা মিলছে না কলকাতা জেলা সিপিএমে। সম্মেলন-পর্ব মিটে যাওয়ার এক বছরের মাথায় কলকাতায় দলের কর্মীদের হতাশা এবং ক্ষোভের আঁচ পেয়ে নড়েচড়ে বসেছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের জেরে জেলা সম্পাদক বদলাতে না-পারলেও কলকাতা জেলার কর্মসূচি, আন্দোলনের উপরে বিমান বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যেরা এ বার থেকে নিয়মিত নজরদারি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কলকাতা শহরে দল যে ভাবে চলছে, তা নিয়ে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশই বিমানবাবু-বুদ্ধবাবুর কাছে প্রভূত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলে দলীয় সূত্রের খবর। তার ভিত্তিতেই বাড়তি নজরদারির সিদ্ধান্ত।
সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “শুধু কলকাতা পুরসভা যে ভাবে চলছে, তার বিরুদ্ধে চাইলে প্রতিদিন পথে নামা যায়! পথে না নামলে মানুষ জানবেন কী করে, আমরা প্রতিবাদ করছি?” কলকাতার বর্ধিত জেলা কমিটির বৈঠকে গিয়ে সম্প্রতি বুদ্ধবাবু এবং বিমানবাবু পরামর্শ দিয়ে এসেছেন ধারাবাহিক ভাবে আন্দোলন-কর্মসূচির পথে থাকার জন্য। পাশাপাশিই আলিমুদ্দিন থেকে গোটা প্রক্রিয়ার উপরে নজরদারি বাড়িয়ে কলকাতার নেতৃত্বের উপরে চাপ রাখার কথা ভেবেছেন তাঁরা।
বস্তুত, কলকাতার জেলা সম্পাদক রঘুনাথ কুশারী নিজেই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। এ ছাড়াও আছেন রবীন দেব, যিনি ইদানীং পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দায়িত্বে। দুই ২৪ পরগনা এবং কলকাতা জেলার উপরে বরাবরই নিয়ন্ত্রণ থাকে আলিমুদ্দিনের। কিন্তু এখন দুই ২৪ পরগনার ‘ইতিবাচক’ রিপোর্টের উল্টো দিকে কলকাতার ‘হতাশজনক’ ছবি চিন্তা বাড়িয়েছে আলিমুদ্দিনের। দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে: গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব যা-ই থাক, উত্তর ২৪ পরগনায় কোনও গোলমাল হলে অমিতাভ নন্দী, তড়িৎ তোপদার, নেপালদেব ভট্টাচার্যেরা দৌড়ে যাচ্ছেন। তাঁরা নিজেরাও কখনও-সখনও হেনস্থার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তেমন কিছু ঘটলে মধ্যরাতেও হাজির হচ্ছেন জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী। আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়দের সহযোগিতা রয়েছে তাঁর সঙ্গে। অথচ কলকাতায় তেমন কাউকে চোখেই পড়ছে না! রাজ্য নেতৃত্বের তরফে রবীনবাবুর বিভিন্ন জায়গায় হাজিরা অবশ্য ব্যতিক্রম।
রবীনবাবু অবশ্য কলকাতার বিরুদ্ধে অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, “কলকাতা আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। বিভিন্ন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে কলকাতার কর্মীদের অংশ নিতে হয়। গোটা ২০১২ জুড়ে প্রতি সপ্তাহেই কোনও না কোনও কর্মসূচি কলকাতায় হয়েছে। অন্য কোনও জেলার সঙ্গে কলকাতার তুলনা করা ঠিক নয়।” কলকাতা জেলা নেতৃত্বের আরও বক্তব্য, পাশাপাশি জেলার কর্মসূচি পরিপূরকেরই কাজ করে।
নেতারা যা-ই বলুন, কলকাতা জেলা সিপিএমেরই একাংশের ক্ষোভ, কয়েক জন বাদে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর অধিকাংশ সদস্যকে সব সময় জেলা দফতরে পাওয়াই যায় না। কার্যালয়ে এসে আবার দুপরের খাওয়া ও বিশ্রাম সারতে দলের গাড়ি চেপে কেউ কেউ বাড়ি যান! দলের ওই অংশের মতে, তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের অপদার্থতা ও বেপরোয়া কার্যকলাপের বিরুদ্ধে পুরসভার ভিতরে ছাড়া কলকাতার সিপিএম সে ভাবে পথেই নামতে পারেনি এত দিনে! এক যুব নেতার কথায়, “কলকাতায় ইদানীং যা বড় কর্মসূচি হচ্ছে, তা-ও রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির সমাবেশের জন্য নিবিড় প্রচার চাই, সেটাও রাজ্য নেতৃত্বকে বলে দিতে হচ্ছে!”
পুরসভার দুর্নীতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি-সহ নারী নির্যাতনের ঘটনার বাড়বাড়ন্ত দেখে ফব কলকাতা জেলা কমিটি ২০০ জনকে নিয়ে আন্দোলন ব্রিগেড করছে। প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবন অবশ্য এখনও তেমন কিছু ভেবে উঠতে পারেনি। তারা আছে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বিবেচনার ভরসাতেই।
রাস্তার এ’পারের কার্যালয়ের শিথিলতাই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ও’পারে আলিমুদ্দিনের! |