কিছু আচার পালন করেছিলেন মৌলবি। কিন্তু বিয়ে নথিভুক্ত হয়নি। সেই অবস্থায় একটি তরুণীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে এক যুবকের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত যুবক পলাতক।
ধর্ষণের সঙ্গে সঙ্গে ওই তরুণীর আরও অভিযোগ, ব্যবসার ৫০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে তাঁকে বিষ খাইয়ে মারারও চেষ্টা করেন ওই যুবক। তরুণী জানান, মৌলবি এসে কিছু আচার পালন করে বলেন, যুবকের সঙ্গে তাঁর বিয়ে সম্পন্ন হল। পরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলে যুবকটি তাঁকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয়ও দেন। তরুণীর অভিযোগ, এ-সবই করা হয় তাঁর বিশ্বাস অর্জনের জন্য। যুবকের মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রতারণা। বুধবার ওই তরুণী আলিপুর আদালতের বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়ে বিস্তারিত ভাবে সব জানান।
গরফা থানা জানায়, তরুণী লিখিত অভিযোগ জানান ১৮ ডিসেম্বর। পুলিশের দাবি, একবালপুরের ব্রাউনফিল্ড রোডের বাসিন্দা অভিযুক্ত যুবক শেখ রেজাউল ওরফে বাপি করিম পলাতক। তরুণীর অভিযোগের সত্যতাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রেজাউল এক সময় রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের আপ্ত-সহায়ক ছিলেন বলে মহাকরণ সূত্রের খবর। মদনবাবু অবশ্য বুধবার মহাকরণে বলেন, “১৩ মাস আগেই ওকে ছেড়ে দিই।” কেন ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল? মন্ত্রী বলেন, “আমার কাছে অভিযোগ এসেছিল, বাপি লোকের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে। সঙ্গে সঙ্গে লিখিত ভাবে নির্দেশ দিই, ওকে যেন ঢুকতে দেওয়া না-হয়। বাবলু করিম আমাদের দলের কর্মী। ওর দাদা হিসেবে বাপিকে চিনতাম। তবে আইনের ঊর্ধ্বে কেউই নয়। আইন আইনের পথে চলবে।”
একটি ভ্রমণ সংস্থার মালিক ওই তরুণী পূর্বাচল স্কুল রোডের বাসিন্দা। পুলিশের কাছে তাঁর অভিযোগ, রেজাউল ২০১০ সালের ২০ অগস্ট মৌলবির মতো এক ব্যক্তিকে এনে তাঁর সামনে মুসলিম ধর্মে তাঁকে বিয়ে করেন। পরে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পূর্বাচল স্কুল রোডের বাড়িতে বাস করতে থাকেন। কিন্তু রেজাউল তাঁদের বিয়ে রেজিস্ট্রি করাননি। টাকা আত্মসাৎ করাই রেজাউলের উদ্দেশ্য ছিল বলে তরুণীর অভিযোগ। তাঁর বক্তব্য, রেজাউল তাঁর সঙ্গে স্বামীর মতো থাকতেন। পরে তাঁকে ব্যবসার ৫০% অংশীদার করতে চাপ দেন। তরুণী দামি গাড়িও কিনে দেন ওই যুবককে। রেজাউল তাঁকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে যৌথ অ্যকাউন্টও খোলেন।
পুলিশের কাছে তরুণী দাবি করেন, প্রথম দিকে রেজাউল জানান, তিনি প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করেছেন। পরে জানা যায়, তিনি তা করেননি। ১৪ নভেম্বর রেজাউল তাঁকে বিষাক্ত কিছু খাইয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেন বলে তরুণীর অভিযোগ। তাঁর চিকিৎসা হয় একবালপুরের এক নার্সিংহোমে। চিকিৎসার কাগজপত্রও পুলিশকে দিয়েছেন তরুণী।
পুলিশ জানায়, তরুণী অভিযোগে জানান, তিনি এখন রেজাউলের সঙ্গে থাকেন না। রেজাউলের সঙ্গে তাঁর মৌখিক চুক্তি হয়েছে, তিনি ৫০ লক্ষ টাকা ফিরিয়ে দেবেন। কিন্তু এখনও মাত্র পাঁচ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়েছেন।
কিন্তু এত দিন পরে রেজাউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন কেন? তরুণী বলেন, “যা বলার, আইনজীবী বলবেন।” তাঁর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেন, “রেজাউলের আচরণে তরুণী মানসিক ভাবে এতটাই ভেঙে পড়েন যে, পুলিশের কাছে সব জানাতে এত দিন ভয় পাচ্ছিলেন।”
তবে রেজাউলের আত্মীয়স্বজনের দাবি, কিছু দিন আগেও ওই তরুণী তাঁদের পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। তরুণী তাঁদের বলেছেন, রেজাউল প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ-বিচ্ছেদ করলে তাঁদের দাম্পত্য সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারে। |