নিউ মার্কেট যাওয়ার পথে ট্যাক্সিতে বমি করে ফেলেছিল চার বছরের মেয়েটি। সেই ‘অপরাধে’ তার মায়ের কাছ থেকে দাবি করা হল দু’হাজার টাকা ‘জরিমানা’। এমনকী, দাবিমতো টাকা না-দিলে বাচ্চাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল এক ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে। বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে রাজভবনের সামনে। পরে পুলিশ ওই চালককে গ্রেফতার করে।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে বেলুড়ের বি কে পাল টেম্পল রোডের বাসিন্দা পিঙ্কি সাহা তাঁর মেয়ে নিষ্ঠা, ছয় বছরের ছেলে কৃষ ও বোন রেশমীকে নিয়ে হাওড়ার গোলাবাড়ি থেকে একটি ট্যাক্সিতে চেপে নিউ মার্কেটে আসছিলেন। দুপুর দেড়টা নাগাদ ট্যাক্সিটি রাজভবনের দক্ষিণ গেটের সামনে পৌঁছলে কেজি-র ছাত্রী নিষ্ঠা ট্যাক্সিতে বমি করে ফেলে। তখন পিঙ্কিদেবী মেয়ের মুখ ধুইয়ে দেওয়ার জন্য চালককে ট্যাক্সিটি থামাতে বলেন। ওই মহিলার অভিযোগ, চালক ট্যাক্সিটি রাস্তার ধারে দাঁড় করিয়েই আগে বমি সাফ করে দিতে বলেন। পিঙ্কিদেবী বলেন, “আমি চালককে বলি, মেয়েটার মুখ ধুইয়ে দিই। তার পরে ট্যাক্সি পরিষ্কার করব। আমাকে একটা কাপড় দিন।”
|
ছেলের সঙ্গে পিঙ্কিদেবী। —নিজস্ব চিত্র |
ওই মহিলার অভিযোগ, কোনও কথাই শুনতে চাননি ওই চালক। উল্টে তিনি হুমকি দেন, ট্যাক্সি তখনই সাফ করে না-দিলে দু’হাজার টাকা ‘জরিমানা’ দিতে হবে। পিঙ্কিদেবীর কথায়, “কেন এত টাকা দিতে হবে, এ প্রশ্ন করতেই ওই চালক আমাকে ফের হুমকি দিয়ে বলেন, ‘টাকা না দিলে ছেলেকে তুলে নিয়ে যাব’।” এর পরেই ওই মহিলা তাঁর স্বামী আশিসবাবুকে ফোনে বিষয়টি জানান। এর মধ্যে চালকের সঙ্গে দুই মহিলার কথা কাটাকাটি হতে দেখে সেখানে আসেন এক ট্রাফিক পুলিশকর্মী।
এ দিন বিকেলে হেয়ার স্ট্রিট থানায় দাঁড়িয়ে আশিসবাবু বলেন, “ফোনে ওই ট্রাফিক পুলিশকর্মীকে অনুরোধ করি, ওই ট্যাক্সি ও চালককে আটকে রাখুন। ট্যাক্সিচালক আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে যাবেন বলেছেন। মৌখিক অভিযোগ করছি। গিয়ে লিখিত দেব।” কিন্তু ট্যাক্সির নম্বর লিখে রাখার পরামর্শ দিয়েই ওই ট্রাফিক পুলিশকর্মী ট্যাক্সিটিকে চলে যেতে বলেন বলে দাবি পিঙ্কিদেবীর।
আশিসবাবু জানান, খবর পেয়ে তিনি হাওড়া থেকে রাজভবনের সামনে চলে আসেন। এসে দেখেন, রাস্তায় তাঁর স্ত্রী, শ্যালিকা ও দুই সন্তান দাঁড়িয়ে। এর পরেই তাঁরা নিউ মার্কেট এলাকায় হেয়ার স্ট্রিট থানার আউট পোস্টে যান। সেখান থেকে হেয়ার স্ট্রিট থানায় এসে লিখিত অভিযোগ করেন। পুলিশ জানায়, অভিযোগ পাওয়ার পরে ওই ট্যাক্সি (ডব্লিউবি ০৪ডি-৯০১১)-সহ অভিযুক্ত চালক রাজকুমার প্রসাদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি হরিশ মুখার্জি রোডের বাসিন্দা। ওই চালকের বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে আটকে রাখা ও ভয় দেখানো (৩৪১/৫০৬) এই দুটি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। |