মহেন্দ্র সিংহ ধোনির পিচ-ভাগ্য কি এ বার তাড়া করছে লক্ষ্মীরতন শুক্লকে?
আশ্চর্য শোনালেও বাস্তব। শনিবারের ইডেন কোথাও যেন মিলিয়ে দিয়ে গেল দুই অধিনায়ককে।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ডুবেছিলেন ইডেনে টার্নার চেয়ে।
লক্ষ্মীরতন শুক্ল এখনও পুরোপুরি ডোবেননি। তবে ইডেনে ‘অর্ডারি’ সবুজ পিচে তাঁর বঙ্গ-ব্রিগেডের কী দশা, সেটা বুঝতে বিশেষজ্ঞের দরকার পড়ে না। ব্যাটিং লাইন আপে চোখ বোলালেই পরিষ্কার।
রোহন বন্দ্যোপাধ্যায়—০।
অভিষেক ঝুনঝুনওয়ালা—১।
ঋদ্ধিমান সাহা—৪।
দেবব্রত দাস—০।
লক্ষ্মীরতন শুক্ল—৮।
সায়নশেখর মণ্ডল—৫। |
পাঁচ মিনিটও ক্রিজে থাকা যাচ্ছে না, উড়ে যাচ্ছে উইকেট! কী ওপেনিংয়ে, কী মিডল অর্ডারে। টিমের পেস ব্যাটারি যাতে সবুজ পিচে আগুন ছোটাতে পারে, সেই কারণেই পিচে ছিল বেশি ঘাস। কিন্তু লক্ষ্মীরতনের কপাল খারাপ। দিনের শেষে সেই ঘাসের উইকেটই বুমেরাং হয়ে ফিরল বাংলা শিবিরে। এক দিনে পড়ল আঠারো উইকেট! শেষ এ জিনিস কবে দেখেছে ইডেন?
সিএবি কর্তারা আবার বাংলা ব্যাটিংয়ের দশা দেখছেন, এবং পুড়ছেন অপমানবোধে। ঘরের মাঠে হায়দরাবাদকে ১১৫-তে শেষ করেও এমন কুৎসিত বিপর্যয়। হজম হওয়ার কথা নয়। হচ্ছেও না। কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে তো বলেই দিলেন, “আর কী করতে হবে আমাদের, একটু বলে দেবেন? ক্রিকেটাররা পছন্দের পিচ চাইল। দিলাম। আর কী কী ব্যবস্থা করব ওদের রান পাওয়ার জন্য?” বলা হচ্ছে, লক্ষ্মী-মনোজের মতো দু’একজন ছাড়া কেউই আর সিংহহৃদয় নন। টিমে অধিকাংশের ক্ষমতাই নেই সামান্যতম দৃঢ়তা দেখানোর। এমনকী মিডল অর্ডারের এক ক্রিকেটারের (ইনি মনোজ তিওয়ারি নন) বিরুদ্ধে ‘পালিয়ে যাওয়ার’ অভিযোগও উঠে পড়ল! সরকারি বয়ান, তাঁর চোট। কিন্তু কী চোট, সেটা বোর্ডের ডাক্তারও ধরতে পারছেন না!
লক্ষ্মী যখন অধিনায়ক, দিনের শেষে তাঁকে আগুন নেভানোর চেষ্টায় নামতেই হত। লক্ষ্মী নামলেন। বললেন, “কথা দিচ্ছি, এই ম্যাচটা জিতে মাঠ ছাড়ব। আজ পারিনি। কিন্তু এখনও তিনটে দিন আছে। ঠিক লড়ে নেব।” কিন্তু রাতের লক্ষ্মীর গলাই আবার বিষণ্ণ শোনায়। যখন বলে ফেলেন, “বাংলার জার্সির গর্বটা নিজে বুঝি। কিন্তু বাকিদেরও তো বুঝতে হবে।” |
সবুজ পিচের আতঙ্ক |
হায়দরাবাদ ইনিংস: ১৬৮ মিনিট, দশ উইকেট, ১১৫ রান।
ভাঙলেন যাঁরা: দুই পেসার সামি আহমেদ (৪-৩৬) এবং বীরপ্রতাপ সিংহ (৩-৩১)।
বাংলা ইনিংস: ১৮২ মিনিট, ৮ উইকেট, ৭৯ রান।
ভাঙলেন যাঁরা: ডান হাতি-বাঁ হাতির সুইং বোলিং। আশিস রেড্ডি (৫-৩০), আনোয়ার আহমেদ (৩-৩০)।
বিপর্যয়ের কারণ: একেবারে সবুজ উইকেটে সুইং-বাউন্স সামলাতে না পারা। |
|
শনিবার একটা সময় পর্যন্ত কিন্তু অধিনায়কের ‘ব্লু প্রিন্ট’ মেনেই এগোচ্ছিল ম্যাচ। টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়া। লাঞ্চের পরপরই ভিভিএস লক্ষ্মণহীন অনভিজ্ঞ হায়দরাবাদকে ১১৫ রানে গুঁড়িয়ে দেওয়া। সামি-বীরপ্রতাপের দুর্ধর্ষ বোলিং। লক্ষ্মীর নিজের দু’উইকেট। কিন্তু বিপক্ষের স্টাম্প ছিটকে দিয়ে সামির উচ্ছ্বাস নয়, দিনের শেষে চোখে লেগে থাকে উইকেট হারানোর রাগে লক্ষ্মীর ব্যাট ছোড়ার দৃশ্য।
ম্যাচের ভবিষ্যৎ তা হলে কী? যে পিচে দিনে আঠারোটা উইকেট পড়ে, সেই পিচে যে রেজাল্ট হবে, তা নিশ্চিত। তিন নয়, এই ম্যাচে বাজি ছ’পয়েন্ট। পারবে বাংলা? এখনও অরিন্দম দাস আছেন। যদি আরও গোটা কুড়ি-পঁচিশ তুলেও শেষ করা যায়, বাংলা একেবারে মুছে যাবে না।
আর অধিনায়কের নাম যখন লক্ষ্মীরতন শুক্ল, এটুকু ভরসা এখনও রাখাই যায়।
|
সংক্ষিপ্ত স্কোর
হায়দরাবাদ ১১৫ (সুমন্ত ২৫, সামি ৪-৩৬, বীরপ্রতাপ ৩-৩১, লক্ষ্মী ২-২১)
বাংলা ৭৯-৮ (অরিন্দম ৩৭ ব্যাটিং, আশিস রেড্ডি ৫-৩০, আনোয়ার আহমেদ ৩-৩০)। |