সকালে জামথার ভিসিএ স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে ঢুকেই শোনা গেল মুম্বইয়ের এক দৈনিকের ক্রীড়া সম্পাদক ফোনে কাউকে বলছেন, “সচিনকে নিয়ে লেখাটা রেডি রাখো। ও অবসরের ঘোষণা করলেই পাঠিয়ে দিতে দেরি কোরো না।” তা হলে কি এই মুহূর্তে ভারতীয় ক্রিকেটে সবচেয়ে আলোচিত অথচ বেদনাদায়ক সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়ে গেল?
অক্টোবরে সেই স্মরণীয় টিভি সাক্ষাৎকারের পর থেকে সচিন তেন্ডুলকরের অবসরের সম্ভাবনা নিয়ে যে জল্পনার ‘সোপ অপেরা’ শুরু হয়েছে, শুক্রবার জামথায় মাত্র ২ রানে বোল্ড হয়ে ড্রেসিং রুমে ফিরে যাওয়ার পর তার টিআরপি বোধহয় যে কোনও ‘সাস-বহু’ সিরিয়ালকেও ছাড়িয়ে গেল। ছয় ইনিংস মিলিয়ে ৩১১ মিনিট ক্রিজে। এই তথ্য আর যাঁকেই মানাক, সচিন তেন্ডুলকরকে নয়। প্রেসবক্স থেকে জামথা স্টেডিয়ামের লাগোয়া অস্থায়ী পুলিস চৌকি সব জায়গাতেই তাঁর অবসর নিয়ে আলোচনা। |
জামথার গ্যালারিতেও দেখা গেল পোস্টার, ‘সচিন, ইফ ইউ’ল কুইট, উই’ল কুইট টু’। তিনি ক্রিকেট ছাড়লে তাঁরাও ক্রিকেট দেখা ছেড়ে দেবেন, দাবি একদল সচিনপ্রেমীর। সুদূর কানপুর থেকে খবর এল, সেখানে নাকি কোনও টিভি চ্যানেলে ‘স্ক্রোল’ চলছে, ‘সচিন নে ক্রিকেট সে সন্ন্যাস লেনে কা ফয়সালা লেঙ্গে নাগপুর টেস্ট কে বাদ’। দলের ওপর মানসিক প্রভাব পড়বে বলেই তিনি এই ঘোষণা টেস্টের শেষে করবেন, এমন গল্পও নাকি আওড়ানো হয়েছে।
তা হলে শনিবার সাত সকালে টিম বাস থেকে নেমেই যিনি সাজসরঞ্জাম নিয়ে সোজা নেটে ঢুকে পড়লেন আর মিডিয়ার নজরের আড়ালে ঝাড়া দেড় ঘণ্টা ব্যাট করে গেলেন, তিনি কে? তিনিও তো সচিন তেন্ডুলকর। ইনি তো আর কোনও অনামী চ্যানেলের ভাঁজা গল্পের সচিন নন। একেবারে আসল, জীবন্ত ক্রিকেট ঈশ্বর। কয়েকজন নেট বোলার ও দলের একজন সাপোর্ট স্টাফকে ডেকে নিয়ে এ দিন যে টানা ব্যাট করে গেলেন, তার মধ্যে কোথাও ছিটেফাঁটা অবসরের ইঙ্গিত নেই। বরং রয়েছে আগের দিনের ব্যর্থতার জ্বালা জুড়ানোর প্রতিজ্ঞা। রান না পেয়ে যিনি এখনও এত ছটফট করেন, তিনি দু’দিন পর ব্যাট হাতে তোলা ছেড়ে দেবেন!
সচিনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত মুম্বইয়ের এক সাংবাদিক এ দিন লিখেছেন, “নাগপুর টেস্টের পর সচিন অবসর না নিলে ক্রিকেটপ্রেমীরা অবাক হবেন।” এটা তাঁর খবর না ব্যক্তিগত মত, তা অবশ্য জানা নেই। তবে পুণের এক সাংবাদিক, যিনি দীর্ঘ দিন ধরে সচিনকে চেনেন, সাফ বলে দিলেন, “বাজে কথা। একমাত্র সচিনই জানে ও কবে অবসর নেবে। তাই এর সঠিক খবর সংবাদমাধ্যমে থাকার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। যা রটছে, পুরোটাই জল্পনা ছাড়া কিছুই নয়।” |
শনিবার সকালে সচিন যখন মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজেকে শীতল করার চেষ্টায়, তখন সেখানে প্রায় দৌড়ে গেলেন স্যর জিওফ্রে বয়কট। দুজনের কথা হল প্রায় মিনিট দশেক। সচিনকে স্টান্সও দেখাচ্ছিলেন প্রাক্তন ইংল্যান্ড ক্যাপ্টেন। যখন ফিরে আসছেন, তখন সচিনের অবসর নিয়ে চলতে থাকা ‘সোপ’ প্রসঙ্গ তুলতে বললেন, ‘‘অল রুবিশ, রিডিকিউলাস। ওর মধ্যে এখনও অনেক ক্রিকেট আছে। সেটা ওর সঙ্গে কথা বলে ফের বুঝলাম।”
সচিন-জল্পনায় জল ঢালার পক্ষে বয়কটের এই কথাগুলোই কি যথেষ্ট নয়?
|
ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ৩৩০
ভারত প্রথম ইনিংস (আগের দিন ৮৭-৪) |
কোহলি এলবিডব্লিউ সোয়ান ১০৩
ধোনি রান আউট ৯৯
জাদেজা এলবিডব্লিউ অ্যান্ডারসন ১২
চাওলা বো সোয়ান ১
অশ্বিন ব্যাটিং ৭।
অতিরিক্ত ১০।
মোট ২৯৭-৮।
পতন: ২৬৯, ২৮৮, ২৯৫, ২৯৭।
বোলিং: অ্যান্ডারসন ২৬-৫-৬৮-৪, ব্রেসনান ২৬-৫-৬৯-০,
পানেসর ৪৬-১৫-৬৭-০, সোয়ান ৩০.১-৯-৭৬-৩ |
|
|