সম্পাদকীয়...
বৃদ্ধ ও বৃদ্ধি
ক বিশাল আন্তর্জাতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, গত চার দশকে মানুষের গড় আয়ু নাটকীয় ভাবে বৃদ্ধি পাইয়াছে। ১৯৭০-এর পৃথিবীর তুলনায়, ইদানীং পুরুষরা গড়ে আরও এগারো ও মহিলারা আরও বারো বৎসর বাঁচেন। শুনিয়া উল্লাস অনুভূত হওয়া বিচিত্র নহে, বেশি দিন বাঁচিবার আকাঙ্ক্ষাই তো মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রার্থনা। আরও বাঁচিব, দেখিব, পৃথিবীর এই অনবদ্য লীলা আরও ভোগ করিব, প্রতি মুহূর্তে এই সাধটুকু লালন করিয়াই তো মানুষ জড়তার বিরুদ্ধে তাহার প্রাণ চালিত করিতেছে। কিন্তু ওই সমীক্ষাতেই প্রতীয়মান, এই বাড়তি আয়ুষ্কাল মানুষ খুব সুখে কাটাইতেছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক অসুখে জর্জরিত হইয়াই শেষ বয়স নির্বাহ হইতেছে। অর্থাৎ, মানুষ বাঁচিতেছে বেশি দিন, অসুস্থও থাকিতেছে বেশি দিন। এইখানেই বোধহয় খোদার উপর খোদকারির বিপদ, অথবা পূর্ণ খোদকারি সম্পন্ন হইবার পূর্বের অবস্থার সমস্যা। চিকিৎসাজগতে প্রবল উন্নতির ফলে ইদানীং শিশুমৃত্যুর হার উল্লেখ্য ভাবে কম, প্রাপ্তবয়স্কেরও অপুষ্টি ও সংক্রামক ব্যাধির প্রকোপ হইতে মৃত্যু অনেক কম। ঔষধ ও যন্ত্রাদির অবদানে মানুষ আয়ু বাড়াইয়া লইতেছে। কিন্তু মুশকিল হইল, তাহার অঙ্গগুলিকে এই প্রলম্বিত সময় অবধি যথাযথ কার্যকর রাখিতে পারিতেছে না। বেশি বয়স অবধি বাঁচিয়া, বৃদ্ধ অবস্থায় প্রায়ই নিজ চক্ষু বা কর্ণের ব্যবহার হারাইতেছে, অথবা গাত্রবেদনায় চলাফেরাই দুষ্কর হইয়া পড়িতেছে। ইহার সহিত তাল মিলাইয়া বাড়িতেছে বিষাদ এবং উদ্বেগ। ফলে শারীর-মানসিক ভাবে পর্যুদস্ত হইয়া তাহার বর্ধিত আয়ু টিমটিম করিয়া টিকিয়া আছে মাত্র, আলো ছড়াইতেছে না।
গালিভারের ভ্রমণবৃত্তান্তের এক পর্বে সে দেখা পাইয়াছিল অমর মানুষের। দেখা করিতে যাইবার পূর্বে তাহার উল্লাস আর বাঁধ মানে না। না জানি কী অকল্পনীয় সুখী মানুষদিগকে সে দেখিবে, যাহারা যুগের পর যুগ ধরিয়া জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, রস সঞ্চয় করিয়াছে, অনাগত কালের প্রাচুর্য দেখিবার জন্য উৎসুক জীবন যাপিতেছে। না জানি অমরত্ব তাহাদের হৃদয়ে কী অনন্ত আশার বর্তিকা জ্বালাইয়া রাখিয়াছে। গিয়া সে দেখিল, অসম্ভব হতাশ ও বিমর্ষ কিছু অতি বৃদ্ধ মানুষ অশেষ তিক্ততা লইয়া তাকাইয়া আছে। তখন সে বুঝিল, অমরত্ব বলিতে আমরা চট করিয়া ভাবিয়া লই অশেষ যৌবন, কিন্তু তাহা তো নহে। অমরত্বের অর্থ তো হইতে পারে মৃত্যুর অক্ষমতা। এই জীবন বহিয়া চলিবার সহিয়া চলিবার অনন্ত অভিশাপ। এই কাহিনি আমাদের মূল ভুলটি ধরাইয়া দেয়। আয়ু বৃদ্ধির অর্থ সর্বাঙ্গীণ স্বাস্থ্যোন্নতি নহে। কেবল বাঁচিয়া থাকিবার সময়টুকু বাড়িয়া যাইলে, হয়তো অনভিপ্রেত বালাইগুলিকে লইয়া উত্ত্যক্ত হইবার দিনগুলিই বাড়িবে। বিষাদের অপরাহ্ণগুলি দীর্ঘতর ছায়া বিস্তার করিবে। যৌবনের ফুর্তিময় সময় বৃদ্ধি পাইবে না। ফলে এই সমীক্ষার উপসংহারটি আমাদের নিকট সুসংবাদ না দুঃসংবাদ তাহা লইয়া ধন্দ থাকিয়া যায়। এবং কয়েকটি ধারণা পুনরায় চালিয়া লইবার প্রয়োজন ঘটে। প্রথমত, চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রকৃত সু-অবদান হইবে কেবল জীবনকাল বর্ধন নহে, সমগ্র আয়ুব্যাপী সুস্বাস্থ্য ভোগ করিবার উপায় আবিষ্কার। দ্বিতীয়টি হইল জীবন-পরিকল্পনার পরিবর্তন। আমরা অধিকাংশ মানুষই, যৌবনটি চমৎকার কাটাইয়া, বাকি সময়টি কোনও মতে পার করিয়া দিবার মানসিকতা লইয়া বাঁচি। কিন্তু এই বার কোনও অর্থেই বার্ধক্যকে হেলা করিলে চলিবে না। উহাও আমাদের ক্রিয়াশীল সময়ের অন্তর্গত করিয়া লইবার প্রয়াস সচেতন ভাবে করিয়া যাইতে হইবে, তাহার জন্য প্রস্তুতি লইতে হইবে। কেবল অর্থের সাশ্রয় নহে, প্রসন্নতারও একটি আমানত করিয়া রাখিতে হইবে। শেষ বয়সে অধিক বাঁচিবার সুযোগ পাইলে তাহা ছাড়িয়া দিবার প্রশ্নই উঠিতেছে না, কিন্তু তাহা বাঁচিতে হইবে মাঝবয়সের পরাক্রমে। নহিলে, সব খারাপ যাহার শেষ খারাপ!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.