পশ্চিমে রাস্তা তৈরি নিয়ে চিন্তায় প্রশাসন
ক বছরে বহু রাস্তা তৈরির অনুমোদন মিলেছে। মিলবে টাকাও। তবু স্বস্তিতে নেই প্রশাসন। পরিকাঠামো না থাকায় অত সংখ্যক রাস্তা কী ভাবে তৈরি হবে, সেটাই এখন দুশ্চিন্তা।
প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় গত ১২ বছরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ১৩৯০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির সুযোগ পেয়েছিল। চলতি বছরে একসঙ্গে ১৫১০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির সুযোগ মিলেছে। যা ১২ বছরে পাওয়া যায়নি, তা এক বছরে পাওয়া গেল কী করে? প্রশাসন জানিয়েছে, মাওবাদী অধ্যুষিত জেলা হওয়ায় যে পরিমাণ রাস্তা করতে চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল, তার পুরোটাই অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এত দীর্ঘ রাস্তা তৈরির পরিকাঠামোই নেই পশ্চিম মেদিনীপুরে। জেলায় যা পরিকাঠামো রয়েছে তাতে বছরে বড় জোর ২০০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা সম্ভব।
২০০৮-এর বন্যায় ভেসে গিয়েছে পাকা রাস্তা। স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে উঠল না আজও।
দাঁতনের মনোহরপুর-ভসরা রাস্তায় চকজলপালানিয়া গ্রামের কাছে কৌশিক মিশ্রের তোলা ছবি।
প্রশাসন সূত্রে খবর, এই প্রকল্প রূপায়ণে উপযোগী পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। মাত্র ২টি ডিভিশন গ্রাম সড়ক যোজনার কাজ করে। একটি জেলা পরিষদের, অন্যটি জাতীয় সড়ক বিভাগের ২ নম্বর ডিভিশন। সেখানে সব মিলিয়ে ২ জন এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, ৮ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ও ১৩ জন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন। অর্থাৎ পর্যাপ্ত আধিকারিক না থাকা একটা বড় সমস্যা। চলতি বছরে জেলায় যে ১৫১০ কিলোমিটার রাস্তা হওয়ার কথা, তাতে রাস্তার সংখ্যা ২৮৯টি। হিসেব মতো একজন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে ২২টি রাস্তার দায়িত্ব নিতে হবে। অথচ নতুন রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে একজন বড় জোর ২-৩টি রাস্তা দেখভাল করতে পারেন বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
এর বাইরেও রয়েছে নানা সমস্যা। এই প্রকল্পে রাস্তা অবশ্যই ৭.৫ মিটার চওড়া হতে হবে অর্থাৎ ২৪ ফুট। তার মাঝখান দিয়ে ১২ ফুট চওড়া পিচ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। মানুষকে বুঝিয়েই জমি নিতে হয়। তাতে পূর্ব অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের ঝাঁকরা থেকে কদমতলা পর্যন্ত রাস্তা তৈরি করতে গিয়ে সমস্যা হয়েছিল। স্থানীয়রা জমি দিয়েছিলেন। রাস্তার কাজও এগিয়েছিল। কিন্তু মাঝে একটি পাকা বাড়ি পড়ে যায়। সেই বাড়ি এড়িয়ে পাশ দিয়ে সামান্য সরু করে রাস্তা করতে গিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু এলাকাবাসী সাফ জানিয়ে দেন, যেহেতু তাঁরা জমি দিয়েছেন, তাই বাড়িও ভাঙতে হবে। ফলে সেটুকু অংশে রাস্তা হয়নি। দু’দিকে রাস্তার কাজ শেষ হলেও মাঝে ওই বাড়িটি থেকে গিয়েছে। কেশপুর ব্লকের মহারাজপুর থেকে রানিয়র পর্যন্ত রাস্তার মাঝে আবার ১৭০ ফুট অংশে কাজ করা যায়নি। কারণ, ওই জমি যাঁর, তিনি আদালতে গিয়েছেন। সবংয়ের বাদলপুর থেকে ভিষিণ্ডিপুরের রাস্তায় বাদলপুরের কাছে একজন জমি না দেওয়ায় কালভার্ট হয়নি। ফলে রাস্তা করেও সুফল মেলেনি।
সমস্যার পাশাপাশি উপকরণ জোগাড় নিয়ে রয়েছে আশঙ্কাও। রাস্তা তৈরির মুখ্য উপকরণ দু’টি বিটুমিন ও চিপস। বিটুমিন পাওয়া যায় আইওসি (ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন) থেকে। তার উপরে দুই মেদিনীপুর ছাড়াও পাশাপাশি বেশ কিছু জেলা নির্ভরশীল। বছরে যে পরিমাণ বিটুমিন পাওয়া যায়, তা দিয়ে জেলাগুলিতে সাধারণ রাস্তা সংস্কার ও কিছু নতুন রাস্তার পক্ষে যথেষ্ট হলেও বড় রাস্তার জন্য নগণ্য। অন্য দেশ থেকে বিটুমিন এলেও তা সরকারি কাজে ব্যবহারে বাধা রয়েছে। বড় চিপস আসে মূলত ঝাড়খন্ড ও ওড়িশা থেকে। বীরভূমেও চিপস পাওয়া যায়। কিন্তু ১৫১০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরিতে যে বিশাল পরিমাণ চিপস লাগবে, তা পাওয়া যাবে কিনা সংশয় রয়েছে।
তার উপর প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের আগ্রহ অনেকটা কমেছে। দেখা গিয়েছে, ৫ বার টেন্ডার ডাকার পরেও ১৪টি রাস্তা তৈরির জন্য কোনও ঠিকাদার আগ্রহ দেখায়নি। জেলায় এই প্রকল্পে কাজ করে প্রায় ১৫টি সংস্থা। যেহেতু এই রাস্তা নির্মাণের পরে ৫ বছর রক্ষণাবেক্ষণেরও দায়িত্ব নিতে হয়, তাই এত ঝক্কি করে রাস্তা বানানোর পর বেশিরভাগ এজেন্সিই প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার কাজ করতে রাজি হচ্ছেন না। কিছু ক্ষেত্রে ঝাড়গ্রাম, খড়্গপুর মহকুমা ও মেদিনীপুর মহকুমার কিছু অংশে, যেখানে লাল কাঁকরে মাটি, রাস্তা ভাঙার আশঙ্কা কম সেখানে কিছু এজেন্সি মিললেও ঘাটাল, দাসপুর, সবং, ডেবরা, পিংলা প্রভৃতি এলাকায় এজেন্সিই মেলে না। এই রাস্তার ক্ষেত্রে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা রয়েছে। তা হল, চলতি বছরেই কাজ শেষ করতে হবে। পরের বছরের তালিকায় ওই রাস্তার নাম এই প্রকল্পে দেওয়া যাবে না। পরের বছরে খরচ বাড়লে সেই অর্থ দিতে হবে রাজ্য সরকারকেই। রাজ্য সরকার সেই অর্থ দেওয়ার কথা জানিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি চাইলে তবেই সেই রাস্তা তৈরির অনুমতি মিলবে
তা হলে কেন এক বছরেই এই বৃহৎ পরিমাণ রাস্তার অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে পরিবর্তনের পরেই দ্রুত উন্নয়ন ঘটানোর একটা চাপ তৈরি হয় প্রশাসনিক কর্তাদের উপর। মাওবাদী অধ্যুষিত হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারও অনুমোদন দেবে বলে আশ্বাস দেয়। তাই বাকি দিক খতিয়ে না দেখেই ২৫০-৫০০ জনবসতি রয়েছে, এমন এলাকা দেখলেই রাস্তা করার পরিকল্পনা নিয়ে নেয় প্রশাসন। সেই তালিকাও অনুমোদন করে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। এখন কীভাবে সেই কাজ সম্পন্ন করা হবে তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে প্রশাসনিক কর্তাদের মধ্যে। ফলে আশানুরূপ অনুমোদন মেলায় আনন্দের চেয়ে দুশ্চিন্তাই বেড়েছে বেশি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.