নিজস্ব সংবাদদাতা • কোচবিহার |
ঐতিহ্যবাহী রাসমেলা শুরু হল কোচবিহারে। মেলা প্রশাসনিক সূত্রে জানানো হয়েছে, এ বার ২০০ বছরে পড়ল। মঙ্গলবার রাতে রীতি মেনে পুরোহিতের পাশে বসে রাজাদের কুলদেবতা মদনমোহন দেবের মন্দিরে বিশেষ পুজো করেন কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী। তার পরেই রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ রাসচক্র ঘুরিয়ে উৎসবের সূচনা করেন তিনি। সন্ধ্যায় এমজেএন স্টেডিয়াম মাঠে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাসমেলারও উদ্বোধন করেন জেলাশাসক। ওই অনুষ্ঠান মঞ্চে নাটাবাড়ির বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, জেলা পুলিশ সুপার প্রণব দাস সহ বিশিষ্ট জনেরা উপস্থিত ছিলেন। কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, ‘রাসমেলার দুশো বছর পূর্তির উদ্বোধন করার অনুভূতিটাই আলাদা। সকাল থেকে উপোস করে ওই শুভক্ষণের অপেক্ষায় ছিলাম। সত্যিই এমন দায়িত্ব পালন সৌভাগ্যের ব্যাপার।” রাসমেলার আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে কোচবিহার পুরসভা। এমজেএন স্টেডিয়াম ও লাগোয়া মাঠে এবার মেলা চলবে টানা ১৮ দিন। |
শুরু হল রাসমেলা। মেলার মাঠে রাসচক্র। |
মেলায় ইতিমধ্যে দু’দুটো সার্কাস, ব্রেক ডান্স, চিত্রহার, মৃত্যুকূপ, টয় ট্রেন, হরেক রকমের নাগরদোলা সহ দুই হাজারের বেশি স্টল বসানোর কাজ অনেকটা এগিয়েছে। মেলা উপলক্ষে পুরসভার সাংস্কৃতিক মঞ্চে কলকাতা ও মুম্বইয়ের খ্যাতনামা শিল্পীদের এনে জলসার বন্দোবস্ত করেছেন উদ্যোক্তারা।
কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান বীরেন কুণ্ডু বলেন, “মেলার দুশো বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে আমরা কোন ঘাটতি রাখতে চাইনি।” অন্যদিকে মদনমোহন মন্দির চত্বরে কীর্তন,ভাগবত পাঠ, ধর্মীয় যাত্রানুষ্ঠান সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছে দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড। মন্দির চত্বরে পুরানো কাহিনীর খন্ডচিত্রের পুতুল ঘর সাজানো, বিশাল চেহারার পুতনা রাক্ষসী তৈরির কাজ অবশ্য সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। মেলা উপলক্ষ্যে কোচবিহার জুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করেছে জেলা পুলিশ। বিশ্বসিংহ রোড, সুনীতি রোড সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
• কোচবিহার জেলায় আরও তিনটি এলাকায় রাসের উদ্বোধন হয়েছে। মঙ্গলবার তুফানগঞ্জের হরিরহাটে ১০০ বছরের পুরানো রাসমেলার উদ্বোধন করেন নাটাবাড়ির বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। কোচবিহার সদরের বাণেশ্বরের কালজানি গ্রামে মেলার উদ্বোধক ছিলেন বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। মাথাভাঙার লতাপোতায় স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে আয়োজিত রাসমেলার উদ্বোধন করেন এলাকার বিধায়ক বিনয় বর্মন। |
উদ্বোধনে জেলাশাসক মোহন গাঁধী। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব। |
• রাজাদের কুলদেবতা মদনমোহন দেবের মন্দিরে পুরোহিতে পাশে বসে বিশেষ পুজোর পর প্রাথর্না করলেন কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী। মঙ্গলবার রাতে। উপস্থিত জনতার কৌতূহল প্রার্থনায় কি চাইলেন জেলাশাসক? প্রশ্ন ছুঁড়তেই জেলাশাসকের জবাব, “কোচবিহারের মানুষের মঙ্গল, শান্তি, সমৃদ্ধি প্রার্থনা করেছি।”
• একদা মেলার শুরু হয় দিনহাটার ভেটাগুড়িতে। ১৮১২ সালে মহারাজ হরেন্দ্রনারায়ণের আমলে প্রথম রাসমেলা হয়। পরে তা কোচবিহার শহরে সরে আসে। এবার ২০০ বছর পূর্তিতে তাই নাগরিক কমিটি গড়ে রাসমেলার জন্মস্থান থেকে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের দাবি তুলেছিলেন সেখানকার বাসিন্দারা।
• রাসমেলার প্রথম দিনে জিলিপি দোকানে ভিড় উপচে পড়ল। মঙ্গলবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জেলার পদস্থ কর্তা থেকে জনপ্রতিনিধিরা যখন ব্যস্ত তখনও ভিড় জিলিপির দোকানে। গরম জিলিপির মজাই আলাদা বলছেন ‘রসিক’জনেরা। |
রাসমেলায় আমন্ত্রণ ঘিরে বিতর্ক
নিজস্ব সংবাদদাতা • কোচবিহার |
এলাকার ফরওয়ার্ড ব্লক সাংসদ নৃপেন রায় বটেই, জেলার বাসিন্দা রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মনকেও কোচবিহারে রাসমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। নৃপেনবাবুর ক্ষোভ, “উদ্বোধন মঞ্চকে আয়োজকরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চান। সে জন্যই বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিদের একটা কার্ড পর্যন্ত পাঠানো হয়নি। ” |