ফের গত ২৪ ঘণ্টায় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরও ৫টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে গত বৃহস্পতিবার থেকে ৬ দিনে ২৪টি শিশুর মৃত্যু হওয়ায় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের পরিবারের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এই ঘটনার কথা চাউর হতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুদের অভিভাবকদের উদ্বেগ বেড়েছে। যেমন বৈষ্ণবনগরের মাধব মন্ডল বলেন, “তিন দিন হল আমার ৯ মাসের মেয়েকে জ্বর ও পেট ব্যাথা নিয়ে ভর্তি করেছি। একদিন চিকিৎসক এসে আমার মেয়েকে দেখে গিয়েছেন। এখন নার্সদের ডাকলে ধমক খাচ্ছি। যা শুনছি তাতে মেয়েকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়াক কথাও ভাবতে হচ্ছে।” ৬ দিনে ২৪ শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ‘স্বাভাবিক’ বলে দাবি করেছেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ উচ্ছ্বল ভদ্র। তিনি বলেন, “৭৫০ বেডের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরিকাঠামো রয়েছে ৬০০ বেডের। সেখানে হাসপাতালে ১৪০০ রোগী ভর্তি থাকছে। প্রতিদিন শিশু বিভাগে ৩৫ থেকে ৪০ টি শিশু ভর্তি হচ্ছে। শিশুদের জন্য এসএসিইউ ওয়ার্ড, শূন্য থেকে ২৮ দিনের শিশুদের ওয়ার্ড ও শিশু ওয়ার্ডে এখন ১৫৬ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। কম ওজনের ও শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ওই শিশুগুলি মারা গিয়েছে। চিকিৎসায় গাফিলতির কোনও অভিযোগ ঠিক নয়। এই মৃত্যুর হার স্বাভাবিক।
গত সেপ্টেম্বরে শিশু বিভাগে ৪৩৫টি ভর্তি হয়। তার মধ্য্যে ৫০টি শিশুর মৃত্যু হয়। অক্টোবর মাসে ৫৪২টি শিশুভর্তি হয়েছিল। ৫৪টি শিশু মারা গিয়েছে। গত বছর মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশুমৃত্যু রুখতে এসএনসিইউ ওয়ার্ড খুলে প্রচুর সরঞ্জাম পাঠানো হয়। কিন্তু চতুর্থ শ্রেণি কর্মী ও নার্সের অভাবে আজও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ধুঁকছে। ২০১১ সালে মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ১২০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী ৪৫ জন নার্সের শূন্যপদ ফাঁকা ছিল। গত এক বছরে নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ না হওয়ায় সেই সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। পর্যাপ্ত নার্স না-থাকায় সমস্যায় হাসপাতাল। শিশু বিভাগের কয়েকজন নার্স বলেন, “ওয়ার্ডে ৩৫-৩৬ জন নার্স প্রয়োজন। সেখানে ২৪ জনকে সামাল দিতে হচ্ছে। প্রত্যেক শিশুকে যেভাবে দেখভাল করা উচিত তা করা সম্ভব হচ্ছে না। কিছু হলেই আমাদের উপর চোটপাট করা হচ্ছে। দোষারোপ করা হচ্ছে।”
এ দিন মহাকরণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “যে শিশুগুলি মারা গিয়েছে তাদের অধিকাংশই সেপ্টিসেমিয়া ও অন্য রোগে আক্রান্ত ছিল।” এদের অধিকাংশই বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী রাজ্য থেকে এসেছে বলেও জানান তিনি। |