কল্যাণী জেএনএম
কড়া নেড়েও কেউ মেলে না রাতের হাসপাতালে
দিন কয়েক আগে মাঝ রাতে তীব্র প্রসব যন্ত্রণা। মাঝের চর থেকে দিদি কাবেরী সরকারকে নিয়ে কল্যাণীর জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন তাঁর ভাই অসিত।
আর সেখানে এসে তাঁর অভিজ্ঞতা: “রিশেপসনে কেউ নেই। এমার্জেন্সি ফাঁকা। ডাকাডাকি করে চিকিৎসক, নার্স কাউকে না পেয়ে ওয়ার্ড মাস্টারের ঘরে কড়া নাড়তে থাকি। হাসপাতালে কোনও ট্রলি বা স্ট্রেচার নেই। দিদি তখন মেঝেতেই ছটফট করছেন। ওয়ার্ড মাস্টারের ঘরের বন্ধ দরজার ভিতর থেকে সাড়া মেলেনি। শেষ পর্যন্ত পাশের নার্সিংহোমে গিয়ে দিদির প্রাণ বাঁচে।”
মজার ব্যাপার, জেএনএম হাসপাতালের গায়ে দু-বছর আগেই মেডিক্যাল কলেজের তকমা লেগেছে। ওই হাসপাতালটির সঙ্গে কল্যাণীর নেতাজী যক্ষ্মা হাসপাতাল এবং গাঁধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল দেড় কিলোমিটার পরিধির মধ্যে এই তিন হাসপাতালের ‘পরিকাঠামো’র ভরসাতেই কল্যাণীতে এইমস-এর ধাঁচে হাসপাতাল গড়ার দাবি জানিয়ে আসছে রাজ্য সরকার। কল্যাণীর ওই হাসপাতালকে ‘সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল’ তকমা দিয়ে সম্প্রতি গর্ব করেছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীও। ওই দিন রাতের ওই ঘটনা সম্পর্কে তিনি অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
কাবেরীদেবীর অভিজ্ঞতা অবশ্য ব্যতিক্রম নয়। আশপাশের মফস্সলের বহু মানুষ গত কয়েক মাসে কল্যাণীর ওই হাসপাতালে রাত্রে রোগী নিয়ে এসে ফিরে গিয়েছেন চিকিৎসক থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী, কাউকে না পেয়ে। হাসপাতালের সুপার নিরুপম বিশ্বাস ঘটনাটি শুনেছেন। দুঃখপ্রকাশ করা ছাড়া তিনি আর কিছুই বলতে চাননি। এমন ঘটনা কি প্রায়ই ঘটে এই হাসপাতালে? নিরাপমবাবু বলেন, “হাসপাতালে কর্মী সংখ্যা কম। তাই রাতে কেউ থাকেন না। ওয়ার্ড মাস্টারও থাকেননা।” অসুস্থ হয়ে পড়ার তো কোনও নির্দিষ্ট সময় নেই, সেক্ষেত্রে অসুস্থ কাউকে রাতে ওই হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়াই ভাল? সুপার বলেন, “যা ভাল বোঝেন!”
দিনের পর দিন এমনই অজস্র অভিযোগের পাহাড় জমতে তাকায় সোমবার রাতে হাসপাতালের রাতের চেহারা দেখতে সরেজমিনে গিয়েছিলেন রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা কল্যাণীর মহকুমাশাসক শৈবাল চক্রবর্তী।
তাঁর অভিজ্ঞতা: কাউকে না পেয়ে ওয়ার্ড মাস্টারের ঘরে কড়া নাড়েন তিনি। ভিতর থেকে সাড়া মেলে “কে?” নিজের পরিচয় দেওয়ায় চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মী ঘুম চোখে দরজা খুলে দেন। শৈবালবাবু বল্নে, ‘‘সোমবারের হাজিরা খাতা বলছে সারাদিনে ওয়ার্ড মাস্টার একবারের জন্যও আসেননি। হাসপাতালের সুপারতেও ডেকে তোলার চেষ্টা করা হয়। তাঁর ঘুম ভাঙেনি।’’ এ ব্যাপারে সুপারের জবাব, “উনি ডেকেছিলেন, কই আমি তো শুনেকেই পাইনি।” হাসপাতালের তিন চতুর্থ শ্রেণির কর্মীকে শো-কজ করে সুপার ও মেডিক্যাল সুপারকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই গাফিলতির কারণ দর্শাতে বলেছেন তিনি। কল্যাণী ঘোষপাড়ার সাধন দাস বলেন, ‘‘ভয়ে কিছু বলা যায় না। রোগী ভর্তি রয়েছে। পাছে তাঁর চিকিৎসার অবহেলা করে। তবে এটুকু বলতে পারি, এই হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে কর্মী, সকলেই খিট খিট করেন। না রাতে কারও দেখা মেলে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.