নাকড়াকোন্দা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র
চিকিৎসক নেই, তালা দিলেন বাসিন্দারা
দিন দুই একজনও চিকিৎসক নেই। এর ফলে খয়রাশোলের নাকড়াকোন্দা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসা রোগীরা কোনও পরিষেবা পাচ্ছেন না। এই আভিযোগ তুলে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা নাগাদ ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীদের ভিতরে রেখে মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় কিছু বাসিন্দা। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের আভিযোগ, ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যদি চিকিৎসকই না থাকেন, মানুষ চিকিৎসা পরিষেবাই যদি না পান তাহলে আমরা কোথায় যাব। শেষ পর্যন্ত খয়রাশোলের বিডিও মহম্মদ ইসরার ঘটনাস্থলে এসে মহকুমাশাসক এবং জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিলে ঘন্টাখানেক পরে তালা খুলে দেন বাসিন্দারা।
তবে এ দিনের জন্য কোনও চিকিৎসকের বন্দোবস্ত করা যায়নি। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অরুণকুমার মণ্ডল বলেন, “জেলায় এখন ৫২ জন চিকিৎসকের ঘাটতি রয়েছে। যে কোনও হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক তুলতে গেলেই সমস্যা হচ্ছে বলে এদিন কোনও ব্যবস্থা করা যায়নি। আজ বুধবার থেকে ওখানে চিকিৎসক বাপ্পাদিত্য হালদার যোগ দেবেন।” খয়রাশোলের বিডিও মহম্মদ ইসরার বলেন, “এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হতে এসে যে সব রোগীকে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে তাঁদের মধ্যে যদি কেউ আর্থিক সমস্যার জন্য যেতে না পারেন তাঁদের বিনা ভাড়ায় গাড়ি করে দুবরাজপুর গ্রামীণ হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
মঙ্গলবার খয়রাশোলে তোলা নিজস্ব চিত্র।
স্থানীয় বাসিন্দা তথা নাকড়াকোন্দা পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্য শ্রীমন্ত মুখোপাধ্যায়, কাজল ধর এবং কাঞ্চন দে বললেন, “বিএমওএইচ-সহ একজন চিকিৎসকও সোমবার দুপুর থেকে না থাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র পুরোপুরি অচল হয়ে গিয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে এখনে আসা প্রসূতি থেকে আন্যান্য রোগী কাউকেই ভর্তি করা হয়ইনি। চিকিৎসক না থাকায় মঙ্গলবার ফেরত পাঠানো হয়েছে বর্হিবিভাগে আসা রোগীদের।” বাসিন্দাদের প্রশ্ন, “এমনিতেই এলাকায় প্রচুর গরীব মানুষ বাস করেন। তাঁদেরকে হঠাৎ সিউড়ি বা দুবরাজপুরে যেতে বলা হলে তাঁরা যাবেন কী ভাবে? পয়সা কোথায় পাবেন? আর যাঁরা ব্লকের বিভিন্ন জায়গা থেকে বর্হিবিভগে দেখাতে এসে ঘুরে যাচ্ছেন তাঁরাই বা কোথায় দেখাবেন?” কথাটা যে মিথ্যা নয় তা এদিন নাকড়াকোন্দা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়েই বোঝা গেল। বর্হিবিভগে দেখাতে এসে ঘুরে যেতে হল রূপক ঘোষ, বাপ্পা গড়াই, সবিতা বাগদিদের মতো বহু রোগীকে। রোগীদের অসুবিধার কথা মেনে নিয়েছেন দায়িত্বে থাকা নার্স কল্পনা চট্টপাধ্যায়ও। তিনি বললেন, “গতকাল থেকে নিরুপায় হয়ে ভর্তি হতে আসা রোগী ও এক প্রসূতিকে ঘোরাতে হয়েছে। কারণ চিকিৎসক না থাকলে আমাদেরই বা করার কী আছে। যেটুকু সম্ভব করছি। আর আশঙ্কায় কাটাতে হচ্ছে এই বুঝি ঝামেলা হবে।”
এই সমস্যা হল কেন?
স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে যেটা জানা গিয়েছে, ৩০ শয্যা বিশিষ্ট নাকড়াকোন্দা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিন জন চিকিৎসক রয়েছেন। সম্প্রতি পিতৃ বিয়োগের কারণে ছুটিতে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত বিএমওএইচ সরূপ মাণ্ডি। ছুটিতে রয়েছেন এনআরএইচএমের এক চিকিৎসক বাপ্পাদিত্য হালদারও। শনিবার থেকে টানা দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন শিবরাম মুখোপাধ্যায় নামে আরেক চিকিৎসক। তিনিও ‘অসুস্থতার’ কারণে সোমবার সকালের পর আর ডিউটি করেননি। খয়রাশোলেরই বড়রা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে সুমন্ত মুখোপাধ্যায় নামে এক চিকিৎসকেও নিয়মিত দায়িত্ব সামলাতে হত ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। উচ্চ শিক্ষায় সুযোগ পাওয়ায় উনিও রিলিজ নিয়েছেন। ফলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও চিকিৎসকই ছিলেন না।
তবে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অরুণকুমার মণ্ডল আবশ্য বলেন, “যে চিকিৎসক দায়িত্বে ছিলেন নিয়ম আনুয়ায়ী অপর একজন চিকিৎসক যতক্ষণ না তাঁর জায়গায় আসছেন ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁরই দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়া উচিত ছিল। এক্ষেত্রে সেটা হয়নি। জেলাশাসকের নির্দেশে ওই চিকিৎসককে শো-কজ করা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.