যে হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে খ্যাতির চূড়ায় উঠেছিলেন, সেই হাসপাতালেই মৃত্যু হল অঙ্গ প্রতিস্থাপনের অগ্রদূত জোসেফ এডওয়ার্ড মারের। ১৯৫৪ সালে তিনিই প্রথম সাফল্যের সঙ্গে অন্য ব্যক্তির দেহ থেকে মরণাপন্ন এক রোগীর দেহে কিডনি প্রতিস্থাপন করে বিশ্ব জুড়ে আলোড়ন ফেলে দেন। গত বৃহস্পতিবার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। প্রতিস্থাপন জগতে তাঁর বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯০ সালে শারীরবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার পান জোসেফ মারে।
|
জোসেফ এডওয়ার্ড মারে |
১৯১৯ সালের ১ এপ্রিল আমেরিকার মিলফোর্ডে জন্মগ্রহণ করেন মারে। ১৯৪৩ সালে হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুল থেকে স্নাতক হয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। সেখানেই যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈনিকদের পুড়ে যাওয়া ত্বক প্রতিস্থাপনে হাতেখড়ি হয় তাঁর। তখনই অঙ্গ প্রতিস্থাপনের চিন্তা তাঁর মাথায় আসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে জোসেফ বস্টনের পিটার বেন্ট ব্রিগহাম হাসপাতালে যোগ দেন। কিন্তু প্রথমেই বাধা আসে হাসপাতালের অধ্যক্ষের কাছ থেকে। তিনি জোসেফকে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ভাবনা ত্যাগ করতে বলেন। শুধু তাই নয়, ধর্মের বিরুদ্ধে কাজ করছেন বলে বিভিন্ন মহল থেকে হুমকিও আসে। কিন্তু নাছোড় জোসেফ আর তাঁর কয়েক জন সহকর্মী হাসপাতালের কাজ শেষ হয়ে গেলে অসুস্থ কুকুরের উপর অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। অবশেষে এল ১৯৫৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর। ক্রনিক নেফ্রাইটিসে আক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী এক যুবককে বাঁচানোর মরিয়া চেষ্টায় কিডনি প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন জোসেফ ও তাঁর সহকর্মীরা। দাতা হিসেবে পাওয়া যায় তাঁরই যমজ ভাইকে। এর পরের ঘটনা তো ইতিহাস। প্রথম সফল অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে ইতিহাসের পাতায় নাম উঠে যায় জোসেফের। এর পরেও অনেক বার অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে বহু রোগীর জীবনদান করেন তিনি। তাঁর অনেক ছাত্র-ছাত্রী পরে অঙ্গ প্রতিস্থাপনে বিশ্ব জোড়া খ্যাতি পেয়েছেন। সারা জীবনে একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন জোসেফ। তবে অবসরের পর অস্ত্রোপচার করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বরং তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। তবে সব সময় ছাত্র-ছাত্রীদের বলতেন “চোখ খুলে চলো। সব সময় রোগীদের সাহায্য করাই যেন তোমাদের প্রথম উদ্দেশ্য হয়।” নোবেল পুরস্কারে পাওয়া টাকার সবটাই তিনি দান করে গিয়েছিলেন পিটার বেন্ট ব্রিগহাম হাসপাতালে। |