রেশন দিতে মাসে ক্ষতি ৫ কোটির
অর্ধেকের বেশি কার্ড ভুয়ো
রাইয়ে ৪৭ চা বাগানে বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। অথচ রেশনের চাল ও গম বরাদ্দ হয় প্রায় ২ লক্ষ বাসিন্দার জন্য। গত ৭ বছর ধরে এমনটাই চলছে। অভিযোগ, প্রতি মাসে সরকারের ক্ষতি হচ্ছে পাঁচ কোটি টাকা। এই অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবারই তদন্ত শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বাম আমলেই ওই দুর্নীতির সূত্রপাত বলে খাদ্য সরবরাহ দফতরের কর্মীদের একাংশের অভিযোগ। ওই কর্মীদের অনেকের বক্তব্য, “এমন ভুয়ো রেশন কার্ড যেখানে রয়েছে, সেখানে চা বাগানে ফের নতুন করে ৪১ জন ডিলার নিয়োগ করে স্বজনপোষণের অভিযোগ নিয়ে বাম আমলেই হইচই হয়।”
প্রাক্তন খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর ভূমিকা নিয়েও তদন্তের দাবি পৌঁছেছে বর্তমান মন্ত্রীর কাছে। যদিও প্রাক্তন খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রী পরেশ অধিকারী বলেছেন, “এমন অভিযোগ শুনলে হাসি পায়। মন্ত্রী তো নিজে কিছু বরাদ্দের তালিকা তৈরি করেন না। যা কিছু বরাদ্দ করা হয়েছে সরকারি তথ্যের ভিত্তিতেই হয়েছে। হতেই পারে এখন সরকারি আধিকারিকরা উল্টো তথ্য দিচ্ছেন।” তাঁর প্রশ্ন, “তরাইতেও যদি অনিয়ম হয়ে তাকে, তবে তার তদন্ত না করে কেন নতুন করে প্রতিটি চা বাগানের জন্য রেশন ডিলার নিযুক্ত করা হচ্ছে কেন? এত তাড়াহুড়ো কীসের?”
সম্প্রতি ডুয়ার্সের চা বাগানগুলিতে ভুয়ো রেশন কার্ডের বিষয়ে তদন্ত হয়। তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়ে চমকে উঠেছেন খোদ মন্ত্রীই। শিলিগুড়ির যুগ্ম শ্রম কমিশনারের দফতর থেকে খাদ্য দফতরকে পাঠানো তালিকায় জানানো হয়, বর্তমানে ডুয়ার্সের তিনটি এবং দার্জিলিঙের মোট চারটে বন্ধ চা বাগানে শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা ১৭৫৮৪ জন। অথচ গত চার বছর ধরে খাদ্য দফতর রেশন বরাদ্দ করে ১ লক্ষ বন্ধ চা বাগানের শ্রমিকদের জন্য।
অভিযোগ, রেশনের তালিকায় ভুয়ো শ্রমিকদের নাম ঢুকিয়ে কোটি কোটি টাকার চাল-গম খোলা বাজারে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। একই ঘটনা ঘটে চলেছে তরাইতেও। ২০০৫-এ চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের সরাসরি খাদ্য দফতর থেকে রেশন ব্যবস্থা চালুর পর থেকে তরাইয়ের ৪১টি চা বাগানে প্রায় ১ লক্ষ ত্রিশ হাজার বাসিন্দাকে রেশন বরাদ্দ শুরু হয়।
শ্রমিক সংখ্যা যোগ করলে প্রতি মাসে চা বাগানে রেশন প্রাপকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২ লক্ষ। শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, তরাইয়ে চা শ্রমিক ও তাদের পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৮০ হাজারের কাছাকাছি। গত মাসেই শিলিগুড়ি মহকুমা খাদ্য নিয়ামকেদর দফতর থেকে তরাইয়ের চারটি বাগানে রেশন বরাদ্দ তালিকা পরীক্ষা হয়। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চারটে বাগানে অন্তত ৪ হাজার ভুয়ো রেশন কার্ড পাওয়া গিয়েছে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “বাম জমানায় ডুয়ার্স ও তরাইয়ের চা বাগানগুলিতে রেশন বিলি নিয়ে ভুরি ভুরি দুর্নীতি হয়েছে। ডুয়ার্সের রিপোর্ট আমার হাতে এসেছে। তরাই নিয়েও তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি।” শিলিগুড়ির যুগ্ম শ্রম কমিশনার মহম্মদ রিজওয়ানও অভিযোগ গুরুতর বলে স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “তরাইয়ের চা বাগানের শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মিলিয়ে মোট সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার।” ভুয়ো চা শ্রমিকদের নাম রেশন প্রাপকদের তালিকায় থাকায় প্রতি মাসে সরকারের কোষাগারে অন্তত ৫ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী।
এমতাবস্থায়, খাদ্য সরবরাহ দফতর কেন তরাই ও ডুয়ার্সের চা বাগানে নতুন ডিলার নিযুক্ত করবে তা নিয়েই প্রশাসনিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। প্রকৃত শ্রমিক সংখ্যা জানতে সমীক্ষা না করে নতুন করে ডিলার নিয়োগ বন্ধ রাখার জন্য মন্ত্রীর কাছে আর্জি পৌঁছেছে। দফতরের এক কর্তা বলেন, “ভুয়ো রেশন কার্ড চিহ্নিত না-করে নতুন ডিলার নিয়োগ হবে কি না সে ব্যাপারে ভাবনা শুরু হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.