অরুণোদয় ভট্টাচার্য • কলকাতা |
জুলাই মাসে শিলান্যাস করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের মঙ্গলবারের সিদ্ধান্তে ফের অনিশ্চিত হয়ে পড়ল উত্তরবঙ্গের সার্কিট বেঞ্চ চালু হওয়ার বিষয়টি।
নতুন ভবন না হওয়ায় উত্তরবঙ্গের তিনটি জেলা নিয়ে অস্থায়ী ভাবে সার্কিট বেঞ্চ চালু করে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের কাছে আবেদন করেছিল। সেই আবেদন খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার আলোচনায় বসেছিল কলকাতা হাইকোর্টের ফুল বেঞ্চ। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে এ বার রাজ্যকেই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। কেন্দ্র বললে তার পরেই কলকাতা হাইকোর্ট এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে। হাইকোর্ট সূত্রের খবর, এই সিদ্ধান্তের পরে সার্কিট বেঞ্চ তৈরির প্রক্রিয়াটি আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।
হাইকোর্ট সূত্রের খবর, সম্প্রতি রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক (এখন তাঁর দফতর বদল হয়েছে) কলকাতা হাইকোর্টের অস্থায়ী প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়ে সার্কিট বেঞ্চের নতুন ভবন না হওয়া পর্যন্ত কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিংকে নিয়েই সার্কিট বেঞ্চের কাজ শুরু করে দেওয়া যায় কি না, তা বিবেচনার অনুরোধ করেছিলেন।
রাজের সদ্য প্রাক্তন আইনমন্ত্রী (বর্তমানে কৃষিমন্ত্রী) মলয়বাবু এ দিন বলেন, “সার্কিট বেঞ্চের নতুন ভবন পুরোপুরি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সেখানে এক সঙ্গে ছ’টি জেলার কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। এই অবস্থায় কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত (এখন উত্তরাখণ্ড হাইকোর্টের বিচারপতি)-কে চিঠি লিখে আপাতত তিনটি জেলা নিয়ে সার্কিট বেঞ্চ চালু করার আর্জি জানিয়েছিলাম।”
গত জুলাই মাসে মুখ্যমন্ত্রী জলপাইগুড়িতে এক জনসভায় বলেন অগস্ট মাসেই অস্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ চালু হবে। সেই সময় রা্যজ্যের তৎকালীন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী সলমন খুরশিদকে চিঠি লিখে অস্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ চালু করার জন্য আবেদন জানান। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কলকাতা হাইকোর্টের মতামত জানতে চান। এই বিষয়ে ফুল বেঞ্চ করার পর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানিয়ে দেন, সার্কিট বেঞ্চ চালু করার পরিকাঠামো নেই। স্থায়ী ভবনের নির্মাণ কাজ পুরোদমে শুরু না হলে অস্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ চালু করা যাবে না। প্রধান বিচারপতির এই চিঠি পাওয়ার পরে স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রক নীরব হয়েযায়। কলকাতা হাইকোর্ট অস্থায়ী সার্কিট বেঞ্চের সম্মতি না দিলে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকের আর কিছু করার থাকে না। এর পরেই অস্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ চালু করার সমস্ত প্রচেষ্টা স্তব্ধ হয়ে যায়।
তবু মুখ্যমন্ত্রী ও তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল গত ১ সেপ্টেম্বর জলপাইগুড়িতে স্থায়ী ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সেই অনুষ্ঠানেও মুখ্যমন্ত্রী জানান, কয়েক দিনের মধ্যেই অস্থায়ী সার্কিট বেঞ্চ চালু হয়ে যাবে। রাজ্য সরকারের বরাদ্দ করা ২০ লক্ষ টাকার সিংহ ভাগই খরচ হয়ে যায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে।
সোমবার হাইকোর্ট সুত্রে জানা যায়, স্থায়ী ভবনের কাজের জন্য আর নতুুন করে টাকা বরাদ্দ হয়নি। কোনও কাজও এগোয়নি। এ দিন কলকাতা হাইকোর্টের ফুল বেঞ্চের সিদ্ধান্তের পরে কবে যে উত্তরবঙ্গের সার্কিট বেঞ্চ কাজ শুরু করবে, তা কেউ বলতে পারছেন না। |