পরিবহণ দফতরের দাবি, সংশোধিত ভাড়ার তালিকা বাসমালিকেরা নিতে আসছেন না। বাসমালিক সংগঠনের পাল্টা দাবি, তাদের তালিকা দেওয়া হচ্ছে না। এই কাজিয়ার মধ্যেই পুরুলিয়ার কিছু রুটে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দ্বিতীয় দফায় ভাড়া বাড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তের পরেও অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে কিছু বাস বলে যাত্রীদের অভিযোগ। জেলার প্রায় সর্বত্রই অটো ও ট্রেকার মালিকেরাও ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়েছেন বলে ক্ষোভ যাত্রীদের।
ইতিমধ্যেই ওই বিষয়ে পুরুলিয়ার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিকের (আরটিও) কাছে অভিযোগ জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছে এসইউসি। জেলা পরিবহণ বোর্ডের সদস্য তথা তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি সুজয় বন্দোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, কিছু বাস রুটে সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ পেয়েছেন। নির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর।
ঘটনা হল, রাজ্য সরকারের ঠিক করা বর্ধিত বাসভাড়ায় সন্তুষ্ট নন জেলার বাসমালিকেরা। পাশাপাশিই বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও তাঁরা মানতে নারাজ। বাস্তব অভিজ্ঞতা অবশ্য বলছে, বাসের ভাড়া নিয়ে কলকাতার পাশাপাশি জেলাগুলিতেও বিভ্রান্তি রয়েছে। ভাড়া নিয়ে নিত্য বচসা এবং কন্ডাক্টরদের হেনস্থার প্রতিবাদে সম্প্রতি জেলার সব ক’টি রুটের বাস চলাচল বন্ধ রেখেছিল হুগলির বাসমালিক সংগঠন। |
প্রশাসন সূত্রের খবর, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বাসের বর্ধিত ভাড়া আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর থেকে বাসমালিকদের জানানো হয়েছিল। পরে আবার দ্বিতীয় দফায় বাসভাড়া সংক্রান্ত নির্দেশিকা মহাকরণ থেকে পাঠানো হয়েছে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরে। দফতর সূত্রের খবর, আগে জেলায় ভাড়ার হার ছিল প্রথম ছ’কিলোমিটারে ৬ টাকা। পরের প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়বে ৪৫ পয়সা করে। সর্বশেষ নির্দেশিকায় সরকার জানিয়েছে, ভাড়া হবে প্রথম চার কিলোমিটারের জন্য পাঁচ টাকা। পরের প্রতি কিলোমিটারে তা বাড়বে ৫০ পয়সা করে। কিন্তু এখনও সেই নির্দেশিকা হাতে আসেনি বলে দাবি বাসমালিক সমিতির। বিভিন্ন জেলার বাসমালিকদের একই অভিজ্ঞতা। কেউই সংশোধিত ভাড়ার তালিকা হাতে পায়নি।
যদিও পুরুলিয়া আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “নতুন ভাড়া নির্ধারিত হওয়ার পরে বাসমালিকদের সঙ্গে পরিবহণ দফতরের আলোচনা করে বিভিন্ন রুটের সংশোধিত ভাড়ার তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। তার পরে বাসমালিকদের হাতে নতুন ভাড়ার তালিকা তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু পুরুলিয়ায় এখনও পর্যন্ত কোনও বাসমালিক ওই নতুন তালিকা নিতে আগ্রহ দেখাননি। আমাদের পক্ষেও সকলের কাছে ভাড়ার তালিকা পৌঁছে দেওয়াও সম্ভব নয়। এটার সুযোগ নিয়ে কিছু বাস রুটে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে।”
ভাড়া নিয়ে ক্ষোভও বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগে এসইউসি জানিয়েছে, দক্ষিণ পুরুলিয়ার কয়েকটি রুটে এবং পুরুলিয়া-রঘুনাথপুর রুটের বেসরকারি বাসে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশি নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “পুরুলিয়া থেকে লালপুর, রঘুনাথপুর, মানবাজার বা আড়শা যাওয়ার জন্য যে ভাড়া হওয়া উচিত, তার তুলনায় বেশি নেওয়া হচ্ছে।” উদাহরণ হিসাবে তাঁর দাবি, আড়শা থেকে পুরুলিয়ার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ২২ টাকা। নতুন ভাড়া অনুযায়ী হওয়া উচিত ১৮ টাকা। পুরুলিয়া থেকে সুইসার (বলরামপুর হয়ে) ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৩৮ টাকার বদলে ৫০ টাকা। আবার পুরুলিয়া-লালপুর রুটে বাসগুলি ভাড়া নিচ্ছে ২৫ টাকা। যা হবে ১৮ টাকা। পুরুলিয়া থেকে রঘুনাথপুর ভাড়া হওয়া উচিত ২৩ টাকা। নেওয়া হচ্ছে ২৮ টাকা।
রঙ্গলালবাবু বলেন, “বাসভাড়া নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে যথেষ্ট বিভ্রান্তি রয়েছে। দুই দফায় বাসভাড়া ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। পরিমার্জিত ভাড়ার তালিকা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয় যাত্রীরা। তারই সুযোগে সরকার নির্ধারিত হারের তুলনায় ৩৫ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। যে-সব রুটে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, সেগুলির তালিকা-সহ অভিযোগ জানিয়েছি জেলা পরিবহণ দফতর ও প্রশাসনের কাছে।”
আড়শার বাসিন্দা সত্যনারায়ণ কুমার, বাঘমুণ্ডির হারাধন কুইরি, বলরামপুরের চণ্ডী কুমার বা রঘুনাথপুরের রঘুনাথ মাজিদের ক্ষোভ, “খবরের কাগজে নতুন ভাড়ার হার দেখেছি। সেই অনুযায়ী যে ভাড়া নেওয়া উচিত, কিছু বাস রুটে তার চেয়ে বেশি নেওয়া হচ্ছে। যাতায়াতের বিকল্প ব্যবস্থা নেই বলে আমরা বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া গুনছি। ” যদিও জেলা বাসমালিক সংগঠনের সম্পাদক প্রতিভারঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, “বাসের ভাড়া যে হারে বাড়ানো হয়েছে, তাতে আমরা সন্তুষ্ট না হলেও যাত্রীদের কাছে থেকে বেশি ভাড়া কোনও ক্ষেত্রেই নেওয়া হচ্ছে না।”
পুরুলিয়ার বেশিরভাগ এলাকাতেই যাত্রী পরিবহণের অন্যতম ভরসা বেসরকারি বাস, ট্রেকার ও অটো। সরকারি বাস চলে হাতেগোনা কয়েকটি। বাসের পাশাপাশি জেলার প্রায় সর্বত্রই ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়ে নিয়েছে ট্রেকার এবং অটো বলে অভিযোগ যাত্রীদের। ভাড়া বেড়েছে আদ্রা-রঘুনাথপুর,আদ্রা-কাশীপুর, রঘুনাথপুর-চেলিয়ামা রুটে। যদিও ট্রেকার ও অটোর ভাড়া বাড়ানো নিয়ে কার্যত কিছু করার নেই বলে স্বীকার করেছেন আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের কর্তারা। দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “ট্রেকার ও অটোর ক্ষেত্রে আমরা কোনও রুট পারমিট দিই না। কনট্র্যাক্ট সার্ভিস হিসাবে গাড়ি চালায় ওরা। পরিষেবা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পরে নতুন অটোর রেজিস্ট্রেশন দেওয়া বন্ধ রাখা হয়েছে।”
|
সহ প্রতিবেদন: প্রশান্ত পাল |