মাওবাদীদের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের সদস্য বিকাশ ও তাঁর স্ত্রী তারা বাঁকুড়ার তালড্যাংরাতেই লুকিয়েছিলেন বলে দাবি করল পুলিশ। তাদের বক্তব্য, সোমবার রাতে তালড্যাংরায় ট্যাংরাশোল গ্রামে ধরা পড়া এক মাওবাদী ‘স্কোয়াড সদস্য’কে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনই তথ্য মিলেছে। তবে বিকাশ বা তারাকে পুলিশ ধরতে পারেনি।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের দাবি, “গুরুদাস মুর্মু নামে যাঁকে ধরা হয়েছে, সেই যুবক মাওবাদী নেতা বিকাশের স্কোয়াড সদস্য। তিনি বিকাশের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। গুরুদাসের বাড়িতে মাঝে মধ্যেই বিকাশ-সহ কয়েকজন আত্মগোপন করে থাকতেন বলে জানা গিয়েছে। সোমবার রাতে মাওবাদী নেত্রী তারা (বিকাশের স্ত্রী) ও বিকাশ ওই বাড়িতে রয়েছেন বলে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সেখানে হানা দেওয়া হয়।” পুলিশ বিকাশের ‘ব্যবহৃত’ একটি মোটরবাইক আটক করেছে। |
পুলিশের মাওবাদী-মানচিত্রে এত দিন তালড্যাংরার নাম ছিল না। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এমনই জায়গা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বেছে নিয়েছিলেন বিকাশ ও তাঁর সহযোগীরা। বছরখানেক আগে ট্যাংরাশোল গ্রামে বিকাশ একটি ঘর তৈরি করেন। স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য ওই ঘরটি গুরুদাসের বলে জানতেন। তবে মাস তিনেক ধরে সেখানে বাইরের লোকেদের আনাগোনা দেখে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। খবর যায় পুলিশে। পুলিশের দাবি, ওই বাড়িতে হানা গিয়ে একটি দেশি পিস্তল, ৬ রাউন্ড কার্তুজ, পুস্তিকা, লিফলেট-সহ মাওবাদীদের কিছু নথিপত্র পাওয়া গিয়েছে। মঙ্গলবার গুরুদাসকে খাতড়া আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক চার দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
বিকাশ ওরফে ওরফে সিঙ্গরাইল টুডুর বিরুদ্ধে বহু নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তিনি মাওবাদীদের রাজ্য কমিটির সদস্য এবং দলের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনেরও সদস্য। তাঁর স্ত্রী তারা মাওবাদীদের লালগড় এরিয়া কমান্ডার। কিষেণজির মৃত্যুর পরে পুলিশ-প্রশাসন মাওবাদীদের যে শীর্ষ নেতৃত্বের খোঁজ করছে, বিকাশ ও তারা তাঁদের অন্যতম। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, গুরুদাসের কাছ থেকে বাঁকুড়া জেলার একটি মানচিত্র মিলেছে। সেখানে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করা রয়েছে। ওই এলাকাগুলিতে মাওবাদীরা নাশকতার কোনও ছক কষেছিল কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। তবে বিকাশ ও তারা ছাড়া, অন্য মাওবাদী নেতারাও ট্যাংরাশোল গ্রামে আসতেন, নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করতেন বলে পুলিশ দাবি করেছে।
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, বছর পঁয়ত্রিশের গুরুদাস ২০০৮ সাল থেকে মাওবাদীদের ‘লিঙ্কম্যান’ হিসেবে কাজ করতেন। পরে বিকাশের স্কোয়াডে যোগ দেন। তবে বেশি দিন স্কোয়াডে ছিলেন না। ট্যাংরাশোলে ফিরে স্থানীয় একটি মুরগি-খামারে কাজ করতে শুরু করেন। তবে মাঝেমধ্যেই কিছু দিনের জন্য বাইরে চলে যেতেন। পুলিশ সুপারের বক্তব্য, “গুরুদাসকে জেরা করে জেলায় মাওবাদীদের গতিবিধির ব্যাপারে বিশদ তথ্য মিলবে বলে আমরা আশাবাদী।” |