|
|
|
|
খেলার খবর |
|
হেলু দেওয়া
অর্ঘ্য ঘোষ • ময়ূরেশ্বর
(হারিয়ে যাওয়া খেলা। পর্ব ৩০) |
|
লুকোচুরি খেলার সঙ্গে মিল রয়েছে ‘হেলু দেওয়া’ খেলার। মূল পার্থক্য যা রয়েছে তা হল লুকোচুরি খেলা হয় ডাঙায় আর হেলু দেওয়া খেলা চলে নদী-পুকুর বা কোনও জলাশয়ে। একসময় এলাকায় হেলু দেওয়া খেলার মাধ্যমে কচিকাঁচারা সাঁতার শিখত। সেক্ষেত্রে ওই খেলার জন্য অভিভাবকদের কাছ থেকে মিলত কিছুটা প্রচ্ছন্ন প্রশয়ও। ছেলে মেয়েরা যাতে জলে তলিয়ে না যায় তা লক্ষ্য রাখার জন্য ছোটদের সঙ্গে সামিল হতে দেখা যেত বড়দেরও। বর্তমানে চর্চার অভাবে হেলু দেওয়া খেলা দেখতে পাওয়া যায় না।
লুকোচুরির মতোই ১০ অথবা ১২ জন ছেলেমেয়ে একত্রে কিংবা আলাদাভাবে খেলায় অংশ নিতে পারে। এক্ষেত্রেও গণনার মাধ্যমে একজনকে মোড় নির্বাচন করা হয়। মোড়ধারী নদী বা পুকুরের একটি জায়গায় দু’হাত পেতে দাঁড়িয়ে থাকে। বাকি খেলোয়াড়রা একে একে সেই হাতে চাপড় মেরে হেলু বলে সাঁতার কিংবা ডুব দিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। |
|
ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি |
নিয়ম হল, খেলোয়াড়দের ছোঁয়ার জন্য মোড়ধারীকে সাঁতার বা ডুবসাঁতার দিয়ে জলাশয়ের চারদিকে ঘেরাঘুরি করতে হবে। ওই সময় খেলোয়াড়ও ডুব সাঁতার দিয়ে মোড়ধারীর পা টেনে দিয়ে ছুঁয়ে পালিয়ে যেতে পারে। অন্যথায় মোড়ধারী তার মাথায় হাত দিয়ে ‘তেলু’ বলে চিৎকার করে উঠলেই তাকে জলের মধ্যে বসে পড়তে হবে। শুধু মাথায় হাত দিলেই হবে না, জলের ভিতরে থাকা খেলোয়াড়ের নামও বলতে হবে মোড়ধারীকে। আন্দাজ ভুল হলে ওই খেলোয়াড়কে ছেড়ে ফের অন্য খেলোয়াড়কে ছোঁয়ার জন্য মনোযোগী হতে হয় মোড়ধারীকে। আন্দাজ সঠিক হলে অবশ্য মোড় ঘোচে তার। সেক্ষেত্রে চিহ্নিত খেলোয়াড়টিকে মোড় খাটতে হয়। কিন্তু নির্ধারিত ১ থেকে ১০০ গণনার সময়ের মধ্যে অন্য কোনও খেলোয়াড় যদি সন্তর্পণে মোড়ধারীর পিঠে কিংবা মাথায় চাপড় মেরে ‘ধাপ্পা’ বলে চিৎকার করে উঠতে পারে তা হলেও জলের তলায় থাকা খেলোয়াড়টিকে ছেড়ে অন্যদের ছোঁয়ার চেষ্টা চালাতে হয় মোড়ধারীকে। যতক্ষণ পর্যন্ত না কাউকে ছুঁয়ে আন্দাজে সঠিক নাম বলতে না পারে ততক্ষণ পর্যন্ত খেটে যেতে হয় মোড়ধারীকে।
ময়ূরেশ্বরের বাজিতপুর গ্রামের বাসিন্দা সুখেন বাগদি, মুরারইয়ের রাজগ্রামের অলোক ঘোষরা বলেন, “ছোটবেলায় হেলু দেওয়া খেলতে খেলতে সাঁতার শিখেছি। যাতে ডুবে না যাই তার জন্য বাবা কাকারাও আমাদের সঙ্গে অংশ নিত। এখন খেলাটাই হারিয়ে গিয়েছে।” |
|
|
|
|
|