|
|
|
|
বীজের দাম দ্বিগুণ, সমস্যা আলু চাষে |
অভিজিৎ চক্রবর্তী • ঘাটাল |
বীজের দাম বেড়ে যাওয়ায় এ বার আলু চাষ কম হতে পারে পশ্চিম মেদিনীপুরে। অন্তত এমনটাই আশঙ্কা করছে কৃষি দফতর।
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসের শেষে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু লাগানো হয়েছিল। অথচ, এ বছর ঠিক সেই সময়েই জেলায় ৮-১০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। চলতি মরসুমে আলুর বীজের দাম গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার কারণেই আলুর চাষ কম হয়েছে বলে মনে করছে প্রশাসন। সরকারি নিয়মানুযায়ী ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত আলু চাষের সময়। কিন্তু কোথাও কোথাও সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও জমিতে আলু লাগান চাষিরা। কিন্তু এ বছর যা পরিস্থিতি তাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে সংশয়ে কৃষি দফতর। জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) তপন কুমার ভুঁইয়া বলেন, “পর্যাপ্ত আলু বীজের অভাব এবং দাম বেশি হওয়ায় এ বার জেলায় কম আলু চাষের সম্ভবনা রয়েছে।”
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, জেলায় ফি বছর ৬৮-৭০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়। কিন্তু এ বছর ছবিটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আলু বীজ ব্যবসায়ী এবং কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের বেশিরভাগ আলুচাষি মূলত পঞ্জাবের বীজের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু গত বছর পঞ্জাবে বীজআলুর উৎপাদন কম হয়েছিল। ফলে এ বছর ব্যবসায়ীরা পঞ্জাব থেকে প্রয়োজন মতো বীজ আলু আনতে পারছেন না। ফি বছর জেলায় প্রায় ৩০০০ গাড়ি বীজ আলুর প্যাকেট আমদানি হয়। বস্তা পিছু সেই আলু বিক্রি হয় ১০০০-১২০০ টাকায়। কখনও কখনও শেষের দিকে সেই দাম কমে দাঁড়ায় ৫০০ টাকায়। এ বারে প্রতি বস্তা বিকোচ্ছে ১৭০০-২০০০ টাকায়।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা রোড, চন্দ্রকোনা, গড়বেতা, ঘাটাল প্রভৃতি জায়গায় আলু বীজের ব্যবসা হয় রমরমিয়ে। জেলার বাইরে থেকেও চাষিরা বীজ কিনে নিয়ে যান। কিন্তু এবারে মরসুম চললেও বীজ দোকানগুলিতে ভিড় নেই বললেই চলে। অন্য দিকে বীজ আলু ব্যবসায়ী চন্দ্রকোনার প্রভাত সরকার বলেন, “আমি প্রতি বছর প্রায় ২০০০-৫০০০ প্যাকেট আলু বীজ বিক্রি করি। এ বারে মাত্র তিনশো প্যাকেট বীজ আনতে পেরেছি। সব বিক্রি হলেও লাভ কিছুই হয়নি।” পশ্চিমবঙ্গ প্রগতিশীল রাজ্য আলু বীজ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শশাঙ্কশেখর মাল বলেন, “গত বছর আমাদের পঞ্জাব থেকে বীজ কিনে গাড়ি করে জেলায় আনতে যা খরচ হয়েছিল, এবারে তার দ্বিগুণ হচ্ছে। তবুও চাষিদের কথা মাথায় রেখে নামমাত্র লাভ রেখেই আলুবীজ বিক্রি করা হচ্ছে।”
বীজের দাম বাড়ায় সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ চাষিরা। আলু বীজের দাম বাড়ার পাশাপাশি এবার সারের দামও হয়ে গিয়েছে দ্বিগুণ। ফলে যেখানে অন্যান্য বছর আলু লাগাতে বিঘা প্রতি ৮-১০ হাজার টাকা খরচ পড়ত, সেখানে এ বার খরচ পড়ছে ১৬-১৮ হাজার টাকা। গড়বেতার আলু চাষি রফিক খান, তুষার পাল বলেন, “প্রতি বছর বিঘা পাঁচেক করে জমিতে আলু লাগাই। কিন্তু এবারে এখনও পর্যন্ত মাত্র দেড় বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছি।”একই বক্তব্য ঘাটালের অমর ঘোষ, দাসপুরের সুকুমার কাণ্ডারদের। জেলার সহ কৃষি-অধিকর্তা (তথ্য) দুলাল দাস অধিকারী বলেন, “গত বছরের তুলনায় এখনও পর্যন্ত জেলায় কম আলু লাগানো হয়েছে। এখন জোরকদমে চাষ চলছে। তবে খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাষ কমার আশঙ্কা একটা রয়েইছে।” |
|
|
|
|
|