কে করিম, ম্যাচের আগেই ভলি কোলাসোর
প্রশ্নটা শেষ হওয়ার আগেই ঝাঁঝিয়ে উঠলেন আর্মান্দো কোলাসো। “কে করিম? আমার টিমের বিরুদ্ধে যে-ই টিম নিয়ে আসুক, পাত্তা দিই না। ভাবিও না। ডেম্পোর যা আই লিগ রেকর্ড তা আগে কেউ স্পর্শ করুক, তারপর সেই কোচকে নিয়ে ভাবব।”
ডেম্পো কোচ যখন পানাজির কোঙ্কনি মাঠে দাঁড়িয়ে কার্যত গুরুত্বহীন করে দিচ্ছেন মোহনবাগান কোচকে, তার ঘণ্টাখানেক বাদে মারগাও স্টেডিয়ামে করিম বলছেন, “আমি পেশাদার। চুক্তি মেনে ক্লাব বদলাতেই পারি। সারা বিশ্বের কোচেরাই বদলায়। তা নিয়ে গোয়ায় আসার পর এত কথা শুনতে হচ্ছে কেন বুঝতে পরছি না।”
করিমকে এমনিতেই পছন্দ করেন না আর্মান্দো। গোয়ায় থাকার সময় তো সেটা ছিলই, করিম সালগাওকর ছেড়ে কলকাতায় চলে যাওয়ার পর সেটা আরও বেড়েছে। শোনা যায়, করিমের বারবার ক্লাব বদলের দর্শন আর মিডিয়া ‘প্রীতি’ পছন্দ নয় পাঁচ বারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন ডেম্পো কোচের।
কিন্তু তা বলে আই লিগ-ফেড কাপ জয়ী করিমকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া!
আসলে এই উড়িয়ে দেওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে কোলাসোর স্ট্র্যাটেজি। নিজের ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলার কৌশল। কে না জানে, মারগাওয়ে বুধবার ডেম্পো বনাম মোহনবাগান হাইপ্রোফাইল ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করবে দুই কোচের সঠিক অঙ্ক। এক্ষেত্রে গোয়ার ‘পি কে’ আর্মান্দো যদি হন বুনো ওল, তা হলে ধুরন্ধর ট্যাকটিশিয়ান করিম বাঘা তেঁতুল। পরিসংখ্যান বলছে, দুই কোচের টিমই দ্বিতীয়ার্ধে ভয়ঙ্কর হয়। শেষ মিনিট পর্যন্ত দাঁতে দাঁত চেপে লড়ে কঠিন ম্যাচ বার করায় দু’জনেই সমান পারদর্শী।
সেই জুটি। সেই মাঠ। জার্সি নতুন। সালগাওকারের ওডাফা-করিম জুটি
এ বার সবুজ-মেরুনে। মারগাওয়ে মঙ্গলবার। ছবি: উৎপল সরকার
কিন্তু করিমকে তো কাল লড়তে হচ্ছে দু’টো লড়াই। মাঠে এবং মাঠের বাইরে। ওডাফারা তাঁকে মাঠের লড়াইয়ে জেতালে গোয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধেয়ে আসা সমালোচনার তীব্র ঝড় থামিয়ে দিতে পারবেন করিম। সে জন্য মগজাস্ত্রে শান দিয়ে ফের ৪-৪-২-তে ফিরছেন দেশের সবথেকে দামি কোচ। ডেম্পো ম্যাচে তাঁর তুরুপের তাস তিনটেনাইজিরিয়ান স্ট্যানলি, পাহাড়ি ছেলে লালরাম ফেলা আর কেরলের সাবিথ।
গত দু’দিন জ্বর এবং সর্দি-কাশিতে ভুগছেন ওডাফা। মোহন-অধিনায়ক তা সত্ত্বেও বলে দিলেন, “যুবভারতীর মতোই এখানকার মাঠটা আমার খুব প্রিয়। এখানে সাধারণত আমি ভাল খেলি, গোল করি।” ওডাফা নিয়ে করিমের আশঙ্কা নেই। তবে অনেক চেষ্টা করেও আই লিগের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মোহনবাগান পাচ্ছে না দলের দুই সেরা অস্ত্র রহিম নবি এবং ইচে-কে। দু’জনেই এ দিন অনুশীলন করেননি।
কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের ট্রেভর মর্গ্যানের মতোই করিম সেই গোত্রের কোচ, যিনি দলের চূড়ান্ত বিপর্যয়ের দিনেও হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসেন না। সমুদ্রের ঢেউ গুনতে গুনতে এমন একটা ফর্মুলা বার করেছেন মরক্কান কোচ যে, ঠিকঠাক কাজ করলে বুধবার রাতে নতুন সূর্যোদয় হলেও হতে পারে বাগানে। অন্তত ঘণ্টাখানেকের অনুশীলন দেখে সেটাই মনে হল।
সেটা কী? কোকো-ক্লাইম্যাক্স বিহীন ডেম্পোকে হারিয়ে তিন পয়েন্ট পেতে চূড়ান্ত আক্রমণের রাস্তায় যেতে চাইছেন করিম। তার জন্য স্ট্যানলিকে মাঝমাঠে নামিয়ে আনা হচ্ছে। বাঁ দিকের উইং ধরে টাট্টু ঘোড়ার মতো দৌড়নোর জন্য নামছেন লালরাম ফেলা। ফরোয়ার্ডে ওডাফার সঙ্গী হচ্ছেন সাবিথ। স্ট্যানলির কাজ হবে ফরোয়ার্ডদের বল জোগানোর সাপ্লাই লাইন ঠিক রাখা। যা পুণেতে উধাও ছিল।
আক্রমণে ভারসাম্য আনলেও রক্ষণ নিয়ে কিন্তু রাতের ঘুম ছুটেছে করিমের। নির্মল ছেত্রীকে রাইট ব্যাকে পাঠিয়ে স্টপারে মেহরাজউদ্দিনকে নামানো হচ্ছে। যিনি পুরোপুরি সুস্থ নন। ওডাফা আফসোস করছিলেন, “ঠিক আগের বারের মতো হচ্ছে। আমরা গোল করছি। কিন্তু শেষ দিকে ড্র হয়ে যাচ্ছে। লিড ধরে রাখা যাচ্ছে না। দুটো ড্রয়ের চেয়ে কিন্তু একটা জেতা, একটা হারা ভাল।” ডেম্পো ম্যাচ জিতলে কি ফেরা যাবে চ্যাম্পিয়নের লড়াইয়ে? ব্যাগের ভিতর ওষুধ খোঁজার ফাঁকে সবুজ-মেরুনের গোলমেশিন শুধু বললেন, “মুম্বই ম্যাচে আমরা বাজে দুটো পয়েন্ট নষ্ট করেছি। ডেম্পো ম্যাচটা জেতা দরকার। এর পর পুণে। তার পর কলকাতায় ডার্বি। উফ!”
করিমের মাথায় অবশ্য এখনই ডার্বি নেই। বরং কোচিং জীবনের আপাতত কঠিনতম পেপার-এ পুরো নম্বর পেতে মগজাস্ত্রেই ভরসা রাখছেন তিনি। জিতবেন? করিম জোর দিয়ে কিছু বলেন না। “চেষ্টা তো করব। দলের বাইরে চলে যাওয়া সব ফুটবলারেরই মাসলে চোট। এই সফরে কিছু করার সুযোগ নেই। পরে দেখতে হবে।” স্কুলের হেডমাস্টারের মতো কঠিন মুখ নিয়ে বলেন করিম।
কিন্তু উল্টো দিকের ‘হেডমাস্টার’ কোলাসো রয়েছেন তুরীয় মেজাজে। থাকবেনই না বা কেন? দীর্ঘ দিন ধরে মহেশ গাউলি, ক্লিফোর্ড মিরান্ডা, দেবব্রত রায়রা তাঁর টিমে রয়েছেন। নতুন বলতে সেই অর্থে শুধু ভারতীয় নাগরিকত্ব নেওয়া জাপানি সুয়েকা। আর্মান্দোর রিমোটে ডেম্পোয় সকাল-সন্ধ্যা হয়। সাফল্যের রেকর্ডও চমকে দেওয়ার মতো। এখনও রয়েছেন আই লিগ টেবিলে মর্গ্যানের দলের পরেই। দু’নম্বরে। কিছুটা দার্শনিক ভঙ্গিতে ডেম্পো কোচ বলছিলেন, “ক্লাইম্যাক্স-কোকো কাল না থাকায় সমস্যা আছে। যারা আছে তারাই খেলবে। জিততে পারলে ভাল। না হলে পরের ম্যাচে চেষ্টা করব। সবে তো লিগ শুরু।”
আর্মান্দো বিলাসিতা করতে পারেন। করিমের সেই উপায় নেই। তার উপর ঘরে-বাইরের চাপ। ম্যাচ জিততে না পারলে ‘এর চেয়ে তো মৃদুল ভাল ছিল’ লেখার জন্য কলমে কালি ভরে যে কলকাতায় বসে আছেন সবুজ-মেরুনের অন্তত দু’জন প্রাক্তন বঙ্গসন্তান কোচ।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.