ইস্টবেঙ্গল- ১ (চিডি)
সালগাওকর ০ |
সুযোগ পেলে একাত্তরের টেস্ট দলে চেতেশ্বর পূজারাকে রাখতেন অজিত ওয়াড়েকর!
সুযোগ পেলে বাহাত্তরের ইস্টবেঙ্গলে কি ট্রেভর মর্গ্যানের কোনও সৈনিককে স্থান দিতেন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়?
ইদানীং বহু বার ব্রিটিশ কোচের আধুনিক ব্রিগেডের সঙ্গে স্বর্ণযুগের সুধীর কর্মকার-গৌতম সরকারদের তুলনা উঠে এসেছে। মঙ্গলবার যুবভারতীতে সালগাওকর ম্যাচের পরে সেই ঐতিহাসিক দলের কোচও নিজের পছন্দের ফুটবলারকে বেছে নিলেন। সুযোগ পেলে মেহতাব হোসেনকে নিয়ে টাইম মেশিনে চড়ে চল্লিশ বছর আগের ইস্টবেঙ্গলে ফিরে যেতে চান পিকে। “আমার মাঝমাঠে পিন্টু, গৌতম এবং মোহন সিংহের কোনও বিকল্প হয় না। কিন্তু যদি নিয়ে যেতেই হয় তা হলে মেহতাবকে নিয়ে যাব।”
|
সেই মুহূর্ত। চিডির গোলে চলছে মর্গ্যান ম্যাজিক। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
ইস্টবেঙ্গলের বিজয়রথ থামাতে মঙ্গলবার সেই মেহতাবের সঙ্গে পেন এবং চিডিকেও টার্গেট করেছিলেন বুথ। যে কারণে মর্গ্যানের কাছে এয়ার ইন্ডিয়া, চার্চিল ব্রাদার্স কিংবা ওএনজিসি ম্যাচের মতো সহজ-সরল ছিল না সালগাওকর-বধের ‘এপিসোড’। স্কোরলাইনেও সেটা ফুটে উঠছে। তবে তাতে বোঝার উপায় নেই, দুই ব্রিটিশ মস্তিষ্কের কী অসম্ভব মহাযুদ্ধ চলল নব্বই মিনিট ধরে। শুরুর চাল ডেভিড বুথের। কিন্তু কিস্তিমাত মর্গ্যানের। কী ভাবে? ভারতের মাঠে টানা ৩১ ম্যাচ অপরাজিত থাকা ইস্টবেঙ্গলকে আটকাতে প্রথমেই রক্ষণে একটা ‘ত্রিশূল’ তৈরি করে ফেলেন বুথ। লুসিয়ানো-ফার্নান্ডেজ-রণদীপ সিংহকে দিয়ে। প্রথম জনের কাজ ছিল চিডিকে কিছুতেই বল নিয়ে ঘুরতে না দেওয়া। ফার্নান্দেজের দায়িত্ব মেহতাবের পিছনে ছায়ার মতো লেগে থাকা। আর রণদীপকে রাখা হয় পেনের পাসিং ফুটবলকে লণ্ডভণ্ড করার জন্য। পেনের ক্ষেত্রে অবশ্য বুথ খুব চিন্তাভাবনা করেই পঞ্জাবের ডিফেন্ডারকে বেছেছেন। কেননা বছর চারেক আগে জেসিটিতে পেনের সঙ্গেই খেলতেন রণদীপ।
ব্যাস আর কী? ‘ত্রিশূলের’ আঘাতে মাঝমাঠের চেনা ছবিটাই বদলে গেল ইস্টবেঙ্গলের। ওয়াল পাস উধাও। ফাইনাল পাসও হ-য-ব-র-ল হয়ে গেল। গোটা লাল-হলুদ মাঝমাঠ তখন বুথের চালে বোতলবন্দি। কিন্তু বলে না ‘ওস্তাদেরও ওস্তাদ’ আছে! বিরতির পরে বুথের ‘ওস্তাদ’ হয়ে দেখিয়ে দিলেন মর্গ্যান। ‘ত্রিশূলের’ চক্রব্যূহ ভাঙলেন ধারালো উইং-প্লে দিয়ে। পেনকে আটকে যখন মাঝপথ বন্ধ, তখন সাইডপথে সৌমিক আর নওবাকে দিয়ে মুহুর্মুহু আক্রমণের ছক কষলেন তিনি। গত ম্যাচগুলোতে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণ এতটাই ভরসা জুগিয়েছে কোচকে (আট ম্যাচে ১ গোল হজম) যে, শুধু ওপারা আর অর্ণবকে পিছনে রেখে গোটা দলকে ঝড়ের গতিতে উঠিয়ে দিলেন উপরে। নিট ফল, খুলে গেল গোলের দরজা। |
আমার মাঝমাঠে পিন্টু, গৌতম এবং মোহন সিংহের কোনও বিকল্প হয় না। কিন্তু যদি নিয়ে যেতেই হয় তা হলে মেহতাবকে নিয়ে যাব। |
|
পেনের পাস থেকে চিডির ডান পায়ের শট আব্রাঞ্চিজের গায়ে লেগে ঢুকে গেল গোলে। লিগ টেবিলের সিংহাসনও ধরে রাখল ইস্টবেঙ্গল (৮ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট)। ম্যাচের পরে মর্গ্যান বলছিলেন, “কঠিন ম্যাচ ছিল। এ সব ম্যাচে ভাগ্যের একটা বড় ভূমিকা থাকে। আজকে আমাদের কাছে সেই জিনিসটা ছিল।”
সালগাওকর হারলেও, বুথের ফুটবলাররা শেষ বাঁশি পড়া পর্যন্ত লড়ে গেলেন। এমনকী তিন পয়েন্ট আদায় করতে যে কী পরিমাণ পরিশ্রম করতে হল চিডিদের, সেটা লাল-হলুদ ফুটবলারদের মাথা গরম করার ঘনঘটাতেই বেরিয়ে আসছিল। অর্ণব, ইসফাক, চিডি, পেনরা হলুদ কার্ড তো দেখলেনই, ম্যাচের শেষ লগ্নে অযথা একটা কার্ড দেখে বসলেন ওপারাও। মর্গ্যান অবশ্য বললেন, “ওপারার কার্ডটা ইচ্ছাকৃত প্রমাণ হলে, ওকে জরিমানা করা হবে।”
বুথের দুর্ভাগ্য, তাঁর দলে এক জন প্রকৃত স্ট্রাইকার ছিল না। মর্গ্যানের সৌভাগ্য, গোটা ম্যাচে তিন-চারটে সিটার নষ্ট করেও পুরো পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারলেন। এখন শুধু দেখার, মর্গ্যানের চওড়া কপাল তিন বারের চেষ্টায় তাঁকে আই লিগ ট্রফির দর্শন করাতে পারে কি না!
|
ইস্টবেঙ্গল: গুরপ্রীত, সৌমিক, ওপারা, অর্ণব, নওবা, ইসফাক, মেহতাব, পেন (লালরিন্দিকা), হরমনজিৎ, মননদীপ (রবিন), চিডি। |