ওয়াংখেড়ের ভুল ধরিয়ে দিলেন কার্তিকরা
রিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা এটাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে, প্লেয়ারদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ প্রত্যাশা। কিন্তু ভারতীয় পরিবেশে আজন্ম স্পিন বোলিং করার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও ত্রিমূর্তি হরভজন সিংহ, প্রজ্ঞান ওঝা আর রবিচন্দ্রন অশ্বিন এমন একটা পিচের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ব্যর্থ হলেন, যে পিচ কি না স্পিন-সহায়ক!
আট বছর আগে ওয়াংখেড়েতেই একটা পুরোদস্তুর প্রস্তুত না থাকা উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার অনিয়মিত বোলার মাইকেল ক্লার্ক ছ’ওভারে ৯ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। আর হরভজন অস্ট্রেলিয়াকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন ২৯ রানে ৫ উইকেট তুলে।
ভারতীয় স্পিনাররা তা হলে এ বার কী ভুল করেছে?
দু’হাজার চারের সেই টেস্ট ম্যাচে সাত উইকেট নেওয়া ভারতের বাঁ-হাতি স্পিনার মুরলী কার্তিক বলছিলেন, “সেই ম্যাচে আমি বিশেষ কিছু পরিকল্পনা-টল্পনা করিনি। আমাকে স্রেফ নাগপুরের আগের টেস্টের পিচের তুলনায় ওয়াংখেড়ের আলাদা ধরনের পিচের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছিল। নাগপুরের উইকেট সবুজ ছিল। যেখানে আমি আমার স্বাভাবিক ফ্লাইট করিয়েছিলাম। যেহেতু পিচটা স্পিন সহায়ক ছিল না। কিন্তু মুম্বইয়ে আমার মনে আছে, হাওয়ায় অনেক জোরে বল ছাড়ছিলাম নাগাড়ে। কারণ, ওখানে বল স্পিন করছিল আর উইকেটে বাউন্স ছিল। সানিভাই (গাওস্কর) ওই সময় ভারতীয় দলের ব্যাটিং পরামর্শদাতা ছিলেন। উনি আমাকে বলেছিলেন, কিছুতেই যেন আমার বল খেলতে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা বাড়তি সময় না পায়। আমি যেন এই ম্যাচের জন্য আমার স্বাভাবিক বোলিং স্টাইলকে লকারে তুলে রাখি। আসলে সাফল্যের চাবিকাঠি ছিল, সারাক্ষণ ঠিক জায়গায় বল করে ব্যাটসম্যানদের সামান্যতম ছাড় না দেওয়াটা।”
কার্তিকের সঙ্গে একমত কিরণ মোরে। যিনি টেস্ট আর প্রথম শ্রেণি মিলিয়ে ওয়াংখেড়েতে প্রচুর ম্যাচ খেলেছেন। মোরে বলছিলেন, “ওয়াংখেড়ের উইকেট তৈরিতে যেহেতু লাল মাটি ব্যবহার করা হয়, সে জন্য ওখানে যে কোনও ম্যাচের প্রথম দিন পিচে ভিজে ভাব থাকে। বল পড়ে পিছলে যায়। ওয়াংখেড়েতে তিরানব্বইয়ের ইংল্যান্ড টেস্টের কথা মনে করুন। রাজেশ চৌহান আর বেঙ্কটপতি রাজু বল দারুণ ভাবে ঘুরিয়েছিল। উইকেটের পিছনে গ্লাভস পরে দাঁড়িয়ে আমি ইংরেজ ব্যাটসম্যানদের নাকানিচোবানি খাওয়া দেখেছিলাম। প্রথম সেশনেই ইংল্যান্ডের পাঁচ উইকেট চলে যায়। এ বার আমাদের বোলাররা প্রচুর শর্ট করেছে। হরভজনকে ইংরেজ ব্যাটসম্যানরা শুরু থেকে মেরেছে। ওরা জানত, হরভজন অনেক দিন পর টেস্ট ক্রিকেটে ফেরায় চাপে আছে। আমার তো মনে হচ্ছে, ইংল্যান্ড অশ্বিনের ক্যারম বলেরও রহস্যভেদ করে ফেলেছে।”
দিলীপ বেঙ্গসরকরও বললেন, “আমরা পরিবেশের ফায়দা তুলতে পারিনি। কুক-পিটারসেন অবশ্যই ভাল ব্যাট করেছে। কিন্তু আমাদের বোলারদের লেংথ ঠিক ছিল না। স্পিনিং ট্র্যাকে একজন স্পিনার শর্ট বল করে কোন যুক্তিতে? যার ফলে ইংরেজ ব্যাটসম্যানরা ব্যাকফুটে খেলার সুযোগ পেয়েছে। যে কোনও ক্রিকেট ম্যাচে কেউ উইকেটের দু’দিকেই (অফ-অন) বল করে না। কিন্তু ভারতীয় স্পিনাররা মুম্বই টেস্টে সারাক্ষণ সেটা করেছে।”
বিখ্যাত প্রাক্তন স্পিনার পদ্মাকর শিভালকর দেখে কষ্ট পেয়েছেন যে, এই ভারতীয় দলের স্পিনারদের ফ্লাইট বা বলের গতিতে কোনও বৈচিত্র নেই। বলছিলেন, “স্পিন বোলিংয়ের প্রাথমিক কথা হল, তোমার হাতে সঠিক লেংথ আর লাইন থাকতে হবে। এই স্পিনাররা উইকেটের সর্বত্র বল ফেলেছে।” শিভালকর মনে করিয়ে দিতে চাইলেন, তিয়াত্তরে ‘র্যাঙ্ক টার্নার’ উইকেটে মুম্বই-তামিলনাড়ু রঞ্জি ফাইনালের প্রথম দিন তাঁর মুম্বই ১৫১ অলআউট হওয়ার পরে তামিলনাড়ু দিনের শেষে ছিল ৬৩-২। কিন্তু পরের দিন শিভালকর ফ্লাইটের তারতম্য ঘটিয়ে মাত্র ১৭ রানে বাকি আট উইকেট ফেলে দেন তামিলনাড়ুর। নিজে নেন ১৬ রানে আট উইকেট। ম্যাচ তৃতীয় দিনে প্রথম বলেই শেষ হয়ে গিয়েছিল।
যা মনে হচ্ছে, ভারতীয় স্পিনারদের বেদী-প্রসন্নর মাস্টারক্লাস করা উচিত। যেমন ব্যাটসম্যানদের শরণাপন্ন হওয়া দরকার গাওস্কর-বেঙ্গসরকরের মাস্টারক্লাসের। যদি ধোনি তাঁর টার্নিং উইকেট চাওয়ার আব্দার বাকি দুটো টেস্টেও জারি রাখে!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.