হাতের মোবাইলটা অনবরত বেজে চলেছে। ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে বিরক্তিতে সে দিকে মাঝে-মাঝে তাকাচ্ছেন। অস্ফুটে একবার বলেও ফেললেন, “দুপুর থেকে এই চলছে। মিডিয়া পারেও বটে!”
একটু পরেই বেরোতে হবে। কাছেই। ছোটবেলার কোচ অটল দেববর্মণের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। তার পর বান্ধবীকে নিয়ে ডিনার। “দম ফেলারই সময় পাচ্ছি না। অফিসের কাজ, নতুন ফ্ল্যাট দেখা, সবই ফাঁকে ফাঁকে করতে হচ্ছে। খবরটা পেয়েই স্যরকে ফোন করেছিলাম। শুনে এমনই উত্তেজিত হয়ে পড়লেন যে, ঠিক করি সন্ধেয় দেখা না করলেই নয়।”
বিড়ম্বনা ঠিকই। আবার নয়ও। নাম যখন তাঁর অশোক দিন্দা, যখন তিনি ঢুকে পড়েছেন ইডেন টেস্টের পনেরো জনে, সামান্য হলেও একেবারে মুছে ফেলা যাচ্ছে না ঘরের মাঠে টেস্ট অভিষেকের সম্ভাবনা, এটুকু ঝক্কি তো থাকবেই।
ভোর থেকে টেনশনে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার মুম্বইয়ে নির্বাচনী বৈঠকের আগে দিন্দাকে ধরা হলে বলে যাচ্ছিলেন, “আগে তো হোক। না আঁচালে বিশ্বাস নেই।” একটু পরেই অবশ্য জেনে যান যে, বাকি টিম একই আছে। শুধু উমেশ যাদবের জায়গায় তিনি। আঁচটা কিন্তু গত কালই পেয়েছিলেন। বীরেন্দ্র সহবাগই ওয়াংখেড়েতে বাংলা পেসারকে ডেকে বলে দেন, ‘যা, এ বার প্রস্তুতি নিতে শুরু কর। ইডেন টেস্টের পনেরো জনে তুই থাকছিস!” “শুনে প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। বীরুভাই এমনিতে প্রচণ্ড ইয়ার্কি করে,” বলছিলেন দিন্দা। “জিজ্ঞেসও করলাম, কী বলছ তুমি? টিম তো হয়নি। বীরুভাই তখন বলে, উমেশ পারবে না। তুই ছাড়া আর কে আছে? রোজ সাত-আটটা করে উইকেট নিচ্ছিস।”
|
সহবাগের ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গিয়েছে। তবু দিন্দা আটকে অদ্ভুত এক সন্ধিক্ষণে। ইডেন টেস্টের দলে তিনি আছেন বটে, কিন্তু খেলবেন কি না জানা নেই। চলতি রঞ্জিতে ৩ ম্যাচে সাত উইকেট নিয়েছেন দিন্দা। দলীপে ২ ম্যাচে উইকেট ৯। একটা ম্যাচে আবার সাতটা নিয়েছেন।
“খুব বেশি হলে খেলাবে না, এই তো? তাতে কিছু যাবে-আসবে না। ইডেনে টেস্ট অভিষেক ঘটছে, এই স্বপ্ন তো বাংলার সমস্ত ক্রিকেটারই দেখে। ইডেনে যদি টেস্ট অভিষেক হয়, আমারও আর কিছু চাওয়ার থাকবে না,” বলে একটু থামেন বাংলার আগুনে পেসার। হাতের চায়ের কাপে ছোট্ট চুমুক দিয়ে ফের শুরু করেন, “না হলে, হবে না। দাদি সামনে আছে। ও কিছু কম কামব্যাক করেছে? যুবরাজকে দেখুন। কী ভাবে ফিরে এল। ওরা যদি পারে, তা হলে আমি কেন টেস্ট খেলতে পারব না?”
তবু যদি শেষ পর্যন্ত ইডেনে নেমেও পড়েন, বিশেষ ঢক্কানিনাদের কোনও ব্যবস্থা নেই। মা-কে আসতে বারণ করে দিয়েছেন। কুসংস্কার নয়, অহেতুক চাপে পড়বেন বলে। বান্ধবী অনুমতি পাবেন? “দেখা যাক। ওরও অফিস-টফিস আছে।” এবং যে কোনও রকম পরিস্থিতির জন্য দিন্দা প্রস্তুত। “ধোনি যদি ম্যাচ শুরুর আধ ঘণ্টা আগেও বলে যে, তুমি খেলছ, আমার সমস্যা নেই। ইডেন গার্ডেন্স আমার চেনা আছে। কখন গতি তুলতে হবে, কখন সুইং পাব, কতটা বাউন্স পাব, সব জানি।”
আর যদি কেভিন পিটারসেনকে বল করতে হয়, তা হলে? “স্ট্র্যাটেজি করে ফেলেছি। এখনই ভাঙছি না। তবে এটুকু বলব, ওকে বোল্ড বা এলবিডব্লিউ করা তুলনায় সহজ। সে দিকেই যাব। একটা কথা বলে দিই। অশোক দিন্দা কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের জন্য তৈরি। সুযোগ আসুক, চাই না আসুক।” |