বিপদের আশঙ্কা আগেই ছিল। সেই আশঙ্কাটাই আরও বাড়িয়ে দিল সোমবার রাতের দুর্ঘটনা। স্থানীয়দের দাবি, এখনও ব্যবস্থা নেওয়া না হলে যে কোনও মুহূর্তে ঘটে যাবে আরও বড় রকমের দুর্ঘটনা।
সোমবার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বালি ব্রিজ ও দু’নম্বর জাতীয় সড়কের সংযোগকারী সেতু থেকে একটি খালি ট্যাঙ্কার নীচে পড়ে যাওয়ার আতঙ্ক এখনও স্থানীয়দের চোখে-মুখে। বাসিন্দাদের কথায়, স্রেফ প্রশাসনের উদাসীনতাতেই দীর্ঘ দিন ধরে বেহাল দশা বালি ব্রিজ ও দু’নম্বর জাতীয় সড়কের সংযোগকারী গুরুত্বপূর্ণ সেতুর। প্রায় ৪০ বছরের পুরনো সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ হয় না কেন? সদুত্তর নেই পূর্ত দফতরের কাছেও। রাজ্য পূর্ত দফতরের বিশেষ প্রকল্প বিভাগের চিফ ইঞ্জিনিয়ার বঙ্কিম ঘোষ বলেন, “নতুন দায়িত্বে এসেছি। খোঁজ নিয়ে দেখব।”
কলকাতার দিক থেকে বালি ব্রিজ ধরে এসে দুই ও ছয় নম্বর জাতীয় সড়কে যাওয়ার জন্য ১৯৭৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে এই সেতুটি তৈরি হয়। বালি ব্রিজ থেকে শুরু করে বালি ঘাট স্টেশনের দু’পাশ দিয়ে গিয়ে বালি হল্টের কাছে দু’নম্বর জাতীয় সড়কে মিশেছে সেতুটি। |
সেতুর এই অংশটি ভেঙেই সোমবার ট্যাঙ্কারটি নীচে পড়ে যায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার। |
বাসিন্দাদের অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেতুর দু’ধারের একটি রেলিংও কার্যত অক্ষত নেই। যে ক’টি আছে সেগুলির অবস্থাও বিপজ্জনক। সিমেন্ট খসে বেরিয়ে থাকে মরচে পড়া লোহার রড। নীচে জিটি রোডে প্রতিনিয়তই অসংখ্য যান ও পথচারীর যাতায়াত। তার উপরে খাঁড়ার মতো ঝুলে থাকে ভাঙা রেলিং। আবার বেহাল সেতুর উপরেও ঝুঁকি নিয়ে চলে যানবাহন। সেতুটির নীচেই রয়েছে ঝুপড়ি, দোকান, সাইকেল-মোটরসাইকেলের গ্যারেজ। আবার সেতুর গা ঘেঁষে আছে বহুতল। স্থানীয়দের কথায়, মাঝে মধ্যেই রেলিংয়ের কংক্রিটের চাঙড় ভেঙে রাস্তায় পড়ে। কয়েক বছর আগে এক বাসকর্মীর মাথায় চাঙড় পড়ায় তিনি গুরুতর জখম হন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, যেখান থেকে ট্যাঙ্কারটি পড়ে যায় সেখানে কোনও রেলিং ছিল না। ১০ চাকার গাড়িটি নীচে পড়ার সময়ে প্রথমে সেতুর পাশের একটি তিনতলা বাড়ির বারান্দায় ধাক্কা মারে। এর পরে হাইটেনশন বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে নিয়ে নীচে একটি গ্যারাজের উপরে পড়ে। ওই বাড়ির মালিক স্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে সেতুটির বেহাল অবস্থা। কখন যে আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাবে কে জানে।”
বাসিন্দাদের কথায়, ঘটনাটি ঘটার কিছুক্ষণ আগেই বালিঘাট স্টেশন দিয়ে শেষ ডানকুনি লোকাল গিয়েছিল। বহু যাত্রী তখন সেতুর নীচের গ্যারাজ থেকে সাইকেল ও মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ির দিকে গিয়েছেন। সেই সময়ে ঘটনাটি ঘটলে হয়তো আরও বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। |