বরাবর যা হয়ে এসেছে, অচলায়তন ঘুচে যাওয়ার পরেও সেটাই বহাল রইল। চিরকালীন রাজনৈতিক ও পুলিশি ভাষ্যের কোনও পরিবর্তন হল না! নদিয়ার তেহট্টে গুলিচালনার পরেই রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলে দেন, ওখানে আত্মরক্ষার্থেই পুলিশ গুলি চালিয়েছে। তখনও অবশ্য এই ঘটনার তদন্তই শুরু হয়নি। আর তার পরেই রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল (আইনশৃঙ্খলা) সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ প্রায় একই সুরে জানান, বাধ্য হয়ে আত্মরক্ষার্থেই পুলিশ গুলি চালিয়েছে!
এই অভ্যাস তো বাম আমলের নিত্য ঘটনা ছিল। তদন্তের আগেই ‘ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে’ পুলিশকে বেঁধে ফেলা! ‘আত্মরক্ষার্থে’ পুলিশের গুলিচালনার সেই তত্ত্বের পেটেন্ট তো বামফ্রন্টের নেতা-মন্ত্রীরা নিয়েই নিয়েছিলেন! কিন্তু তার পর? |
গত দেড় বছরের মধ্যেই পাঁচ-পাঁচ বার গুলি চালাল পুলিশ! ‘পরিবর্তন’-এর সরকারের গা থেকে এখনও হয়তো নতুন গন্ধ কাটেনি। কিন্তু এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠে পড়ল, বামফ্রন্ট আমলের পুলিশের মতো এই আমলেও তা হলে ‘ট্রিগার হ্যাপি’ পুলিশকেই দেখতে হবে! এবং বাম আমলের সেই ভাষ্য আবার নতুন রূপে শুনতেও হবে! গত ডিসেম্বরে, মগরাহাটে পুলিশের গুলিচালনায় এক ছাত্রী ও এক মহিলার মৃত্যুর পরে রাজ্য পুলিশের সর্বোচ্চ কর্তা নপরাজিত মুখোপাধ্যায় দুঃখপ্রকাশ করে বলেছিলেন, যখন-তখন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলছে পুলিশ।
এ সব দেখে হরেকৃষ্ণ কোঙারের কথা মনে পড়ে যায়। ১৯৬৯-এ তৎকালীন ভূমি ও রাজস্বমন্ত্রী হরেকৃষ্ণবাবু রাজ্য বিধানসভায় বলেছিলেন, “এই যে লোকে যুক্তফ্রন্টকে ভোট দিয়েছিল, সে কি আশা করেছিল যে ২০ বছর ধরে যে ভাবে গভর্নমেন্ট চলেছিল তেমনি ভাবেই চলবে? যদি আমাদের পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট, সরকারি অফিসাররা সেইমতো আচরণ করে, তবে শুধু কি আমাদের মুখ দেখে লোকে আনন্দে উৎসাহিত হয়ে যাবে?”
কালজয়ী ভাষণ, সন্দেহ নেই! |